ঘুমন্ত অবস্থায় মাদকব্যবাসায়ী আমজাদকে কুপিয়ে খুন : দুজন গ্রেফতার

চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার চৌধুরীপাড়ায় খুনের নেপথ্য নিয়ে নানামুখি প্রশ্ন : সন্দেহের বাইরে নেই স্ত্রী সুফিয়া!

 

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে দামুড়হুদা জয়রামপুরের মাদকব্যবসায়ী আমজাদ হোসেনকে (৪৮)। গতপরশু রাত ১টার দিকে দামুড়হুদার জয়রামপুর চৌধুরীপাড়ায় নৃশংস এ ঘটনা ঘটে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে একই গ্রামের আলমগীর ও কাজল নামের দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আয়ুব আলীকে গ্রেফতার করা হলেও তার ছেলে এনামুলকে থানায় হাজির করার প্রতিশ্রুতি দেয়ায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

আমজাদ হোসেন খুনের নেপথ্য নিয়ে তার পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীদের বক্তব্যে পুলিশ ধন্ধে পড়েছে। দানা বেধেছে রহস্য। ফলে আমজাদের স্ত্রী সুফিয়া খাতুন এবং স্ত্রীর বোন নেদারল্যান্ড প্রবাসী জেসমিনের স্বামী নাজমুলকেও সন্দেহের দৃষ্টিতে রেখেছে পুলিশ। দামুড়হুদা থানার অফিসার ইনচার্জ বলেছেন, এজাহারভুক্ত হিসেবে দুজনকে গ্রেফতার করা হলেও খুনের প্রকৃত নেপথ্য উন্মোচনে জোর তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। খুনি যে বা যারাই হোক তাদেরকে ধরে আইনে সোপর্দ করা পুলিশের দায়িত্ব।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের মসজিদপাড়ার সুবদা আলীর ছেলে আমজাদ হোসেন দীর্ঘ প্রায় ২৫/২৬ বছর আগে দামুড়হুদা জয়রামপুর চৌধুরীপাড়ার মৃত আদম গাজীর মেয়ে সুফিয়াকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর ঘর জামাই হিসেবেই সেখানে বসবাস করতে থাকেন আমজাদ হোসেন। আমজাদ ও স্ত্রী সুফিয়া গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদক বিক্রি করে বলে অভিযোগ আছে। তার রয়েছে দু ছেলে দু মেয়ে। দু মেয়ের বিয়ে হলেও তারা স্বামী পরিত্যক্তা হিসেবে পিতার বাড়িতেই ফিরেছেন। বছর খানেক আগে আমজাদ দ্বিতীয় বিয়ে করেন বলে গুঞ্জন ওঠে। এ নিয়ে সুফিয়ার সাথে আমজাদের বিরোধ দানা বাধে। অপরদিকে আমজাদের এক মেয়ে অন্তরার সাথে প্রতিবেশী আব্দুল কাদেরের ছেলে শামীমের বিয়ে হয়। দাম্পত্য বিচ্ছেদের পর আব্দুল কাদেরের অপর ছেলে আলমগীরসহ তাদের লোকজনের সাথে বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নেয়। এরই মাঝে গতপরশু রাত ১টার দিকে ঘুমন্ত অবস্থায় ধারালো অস্ত্রের উপর্যুপরি কোপে প্রাণ হারান আমজাদ হোসেন। তিনি তার নিজ ঘরের বারান্দায় ঘুমিয়ে ছিলেন। তার স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যদের চিৎকার চেঁচামেচিতে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় দামুড়হুদা থানা পুলিশ। আমজাদের স্ত্রী সুফিয়া খাতুনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ প্রতিবেশী আলমগীর ও জয়রামপুর নওদাপাড়ার ফজলুর রহমানের ছেলে কাজলকে গ্রেফতার করে। একই সময়ে আয়ুব আলীর ছেলে এনামুলকে না পেয়ে তার পিতাকে ধরে থানায় নেয় পুলিশ। পরে অবশ্য আয়ুব আলীকে তার ছেলেকে থানায় হাজির করার শর্তে ছেড়ে দেয়া হয়।

ঘটনার পর রাতেই দামুড়হুদা থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। গতকাল চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। বিকেলে জায়রামপুর চৌধুরীপাড়াস্থ কবরস্থানে দাফনকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। নিহত আমজাদের ছেলে শরিফুল বাদী হয়ে দামুড়হুদা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছে। মামলায় প্রতিবেশী আব্দুল কাদেরের ছেলে আলমগীর, আলমগীরের ছেলে সাইফুল, আয়ুব আলীর ছেলে এনামুল, লুৎফর রহমানের ছেলে নাজমুল ও নাওদাপাড়ার ফজলুর ছেলে কাজলকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে আলমগীর ও কাজলকে ঘটনার পর পরই তাদের নিজ নিজ বাড়ি থেকে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থা গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছেন তাদের লোকজন।

আমজাদকে খুনের জন্য গ্রাম্য প্রতিপক্ষকে দোষারোপ করছেন তার স্ত্রী। অবশ্য প্রতিবেশীদের অনেকেই বলেছেন, খুনের পর পরই বেশ কয়েকটি প্রশ্ন স্থানীয়দের মনে দানা বেধেছে। পুলিশি সুষ্ঠু তদন্তের মধ্যদিয়ে প্রকৃত রহস্যের জোট খুলবে বলে আশা করছে স্থানীয়রা।

Leave a comment