আওয়ামী লীগের দু পক্ষের বিরোধে গাংনী সরকারি খাদ্যগুদামে গম কেনায় বাধা : সড়ক অবরোধ

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুরের গাংনী সরকারি খাদ্যগুদামে গম বিক্রি নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দু পক্ষের মধ্যে বিরোধ এখন তুঙ্গে। গতকাল শনিবার সকালে একপক্ষ গুদামে গম প্রবেশে বাধা দেয়। এ নিয়ে দু পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন। প্রতিবাদে কিছুক্ষণ সড়ক অবরোধ করা হয়। ঘটনার পর থেকেই গুদামে গম কেনা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সরকারি খাদ্যগুদামে গম বিক্রির বিরোধের জের ধরে গতকাল সকালে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোশারফ হোসেন ও জেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম সাজ্জাদ লিখন পক্ষের লোকজন গাংনী সরকারি খাদ্যগুদামে গিয়ে গম প্রবেশে বাধা দেন। গুদাম কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, বাধার কারণে তারা গুদাম বন্ধ করে নিরাপদে সটকে পড়ে। গুদামে বাধা দেয়ার পর মোশারফ-লিখন পক্ষের লোকজন উপজেলা পরিষদের সামনে কায়েম উদ্দীনের চায়ের দোকানে অবস্থান করছিলো। এ সময় উপজেলা যুবলীগের যগ্ম সাধারণ সম্পাদক মজিরুল ইসলাম পক্ষের লোকজন জড়ো হয়ে তাদের প্রতিরোধ করে। এতে কিছুটা সংঘর্ষের রূপ নেয়। এতে হাফিজুর রহমান বাবু (৪৫) ও আলাউদ্দীনসহ (৫০) কয়েকজন আহত হন। তাদেরকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়। তবে প্রতিরোধ কিংবা হামলা নিয়ে উভয়পক্ষের লোকজন একে অপরকে দায়ী করেছেন।

বাবু ও আলাউদ্দীন আহতের খবর ছড়িয়ে পড়লে মোশারফ-লিখন পক্ষের লোকজন গাংনী শহরের কাথুলী মোড়ে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। তারা মজিরুল ইসলামসহ তার লোকজনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। আধা ঘণ্টাব্যাপি অবরোধের কারণে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একপক্ষ কাথুলী মোড়ে অপরপক্ষের লোকজন গাংনী হাসপাতাল বাজারে অবস্থান নিলে টানটান উত্তেজনা শুরু হয়। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা শহরে। পরে গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজুল ইসলাম ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি প্রথমে মোশারফ হোসেন ও ওয়াসিম সাজ্জাদ লিখনের সাথে আলাপ করে পরিস্থিতি শান্ত করেন। তারা সড়ক অবরোধ তুলে নিলে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। পরে তিনি মজিরুল পক্ষের লোকজনের সাথে কথা বলে তাদেরকেও শান্ত করেন।

মোশারফ হোসেন ও ওয়াসিম সাজ্জাদ লিখন অভিযোগ করেন, মজিরুল ইসলাম খাদ্যগুদামে একাই ব্যবসা করছেন। সবার সুযোগ করে দিতে খাদ্যগুদামে গম কেনা নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু এর জেরে তারা আমাদের লোকজনের ওপর হামলা করেছে। বিষয়টির নিরসন না হওয়া পর্যন্ত গম কিনতে দেয়া হবেন বলেও জানান তারা।

অপরদিকে মজিরুল ইসলাম পাল্টা অভিযোগ করে বলেছেন, গম কেনার শুরুর দিন থেকেই অনেকেই গম বিক্রি করেছেন। কিন্তু তারা গায়ের জোরে গম কেনা বন্ধ করে দেন। বিষয়টির প্রতিবাদ করা হয়েছে মাত্র। কোনো হামলা হয়নি।

গাংনী খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাহাবুল আলম জানিয়েছেন, সকালে গম কেনাকালে কয়েকজন এসে কার্যক্রম বন্ধ করতে বলেন। একপর্যায়ে তারা তালাবদ্ধ করে চলে যান। আজ থেকে আবারো গম কেনার আশা করছেন তিনি।

এদিকে ঘটনার সময় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন উভয়পক্ষের লোকজনকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। এ প্রসঙ্গে এমপি মকবুল হোসেন জানিয়েছেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। বিরোধ মীমাংসার প্রক্রিয়া চলছে। চাষিরা যাতে নিবিঘ্নে সরকারি গুদামে গম বিক্রি করতে পারেন দ্রুত সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, চলতি মরসুমে সরকারি খাদ্যসংগ্রহ কর্মসূচির আওতায় গাংনী খাদ্যগুমামে ৩ হাজার ৬১২ মেট্রিক টন গম কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত শুক্রবার থেকে চাষিদের কাছ থেকে ২৭ টাকা কেজি দরে গম কেনা শুরু হয়। প্রথম দিনেই প্রায় দেড়শ টন গম কেনা হয়। আগামী ২৭ জুন পর্যন্ত গম কেনা কার্যক্রম চলবে বলে খাদ্যগুদাম সূত্রে জানা গেছে।

Leave a comment