শফীকে ৩২ কোটি টাকার জমি উপহার দিচ্ছে রেলওয়ে

স্টাফ রিপোর্টার: অবশেষে রেলওয়ের ৩২ কোটি টাকার জমি গিফট দেয়া হচ্ছে হেফাজতে ইসলাম নেতা আল্লামা শফীকে। হাটহাজারী মাদরাসার নামে দু বছর আগেই জায়গাটিতে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে রাখা হয়েছে। সম্প্রতি আল্লামা শফীর অবস্থান পর্যবেক্ষণ করে সরকারের একটি পক্ষ জায়গাটি তার জন্য ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে কথাবার্তা চূড়ান্ত হয়েছে। সর্বশেষ রেলওয়ের জায়গাটি নিজেদের জন্য বরাদ্দ চেয়ে কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছেন আল্লামা শফী। সরজমিন হাটহাজারী মাদরাসার অদূরে স্টেশনের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে গিয়ে দেখা যায়, ৩০০’র বেশি খুঁটি দিয়ে রেলের ১৬০ কাঠা জমিতে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছে হাটহাজারী মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। তাতে লেখা হয়েছে লিজ সূত্রে এ জমির দখলদার মালিক হাটহাজারী বড় মাদরাসা। অন্যদিকে রেলের মালিকানাধীন পুকুরে সাইনবোর্ডে লেখা হয়েছে যোগাযোগমন্ত্রীর অনুমতিক্রমে এ পুকুর ও স্টেশন এলাকার উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব-পশ্চিম পাশের ২.৬৪ একর (১৬০ কাঠা) কৃষি জমি ও পুকুর দখলদার মালিক দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসা।

স্থানীয় সূত্র মতে, এ জায়গার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৩২ কোটি টাকা। হেফাজতে ইসলামের আমীর শাহ আহমদ শফী হাটহাজারী মাদরাসার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের একটি সূত্র জানায়, জমি দেয়ার বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে হেফাজতকে জমি দেয়ার ব্যাপারে সরকারের ওপর থেকে চাপ আছে। এ বিষয়ে হেফাজতের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়েছিলো। বর্তমানে সেই মামলা প্রত্যাহার ও জমি দেয়ার ব্যাপারে দু পক্ষের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা চলছে। অথচ এর আগে ২০১২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রেলমন্ত্রণালয়ের ভূমি শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব আশরাফুজ্জামান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ রেলওয়ের জমিজমা ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী আল্লামা শাহ আহমদ শফীর আবেদনটি বিবেচনা করার কোনো সুযোগ নেই। সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে বিষয়টি আপনাকে অবহিত করা হলো। এ বিষয়ে পূর্বাঞ্চল রেলের প্রধান ভূ-সম্পদ কর্মকর্তা কামরুল আমিন আবেদন করার  সত্যতা তুলে ধরে বলেন, শফী হুজুর বছর দু এক আগে জায়গা পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। তবে তাকে লিজ দেয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে কথা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত না হওয়ায় পুকুর-জমি সবই অবৈধভাবে দখল করে আছে হাটহাজারী মাদরাসার লোকজন। অন্যদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক বলেন, হাটহাজারী মাদরাসার নামে ওই জায়গা বরাদ্দ আছে। এখন বিষয়টি তদারকের জন্য মাদরাসার একজন ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, একটি মহল হেফাজতের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। তারা নানাভাবে হেফাজতের বদনাম করছে। সরকারের আস্থাভাজন হওয়ার পর এ জায়গা নিয়ে নমনীয়ভাব পোষণ করছে সরকার- এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আল্লামা শফীকে সরকার ভয় পায়। সরকারের সাথে কোনো ধরনের আঁতাত করছেন না তিনি। অনেকে বলেন শফী হুজুরের প্রতি সরকারের মনোভাব ঠাণ্ডা। আর তাই তিনি কোনো কর্মসূচি দিচ্ছেন না। বিষয়টি সত্যি নয়। আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো। কোনো প্রলোভনে গলবে না হেফাজত। সরকারের সাথে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। নেই কোনো শত্রুতা। তারা আমাদের ভুল বুঝলে আমরা কষ্ট পাবো। এখানে ভুল বোঝাবুঝি হোক তা আমরা চাই না। ছাত্রলীগ-যুবলীগের সাথে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। হেফাজতে ইসলামের প্রধান আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর এমন বক্তব্য নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের লালদিঘীতে অনুষ্ঠিত দলের দু দিনব্যাপি রেসালত সম্মেলনে ভোল পাল্টে নিজেদের সাথে সরকারের সু-সম্পর্ক রয়েছে বলে প্রকাশ্যে জানিয়েছেন এ নেতা। অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এসে শ শ আলেম-ওলামা ও সাধারণ মানুষ তার বক্তব্য শুনে হতভম্ব হয়ে যান। তাদের মাঝে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।