হিন্দুত্ব জোয়ারের আশায় মোদী

 

উত্তরপ্রদেশের দখল না থাকলে দিল্লিতে সেই সরকার বা প্রধানমন্ত্রী হন নড়বড়ে

মাথাভাঙ্গা মনিটর: ভারতীয় রাজনীতিতে ক্ষমতার কেন্দ্র উত্তরপ্রদেশ। উত্তরপ্রদেশের দখল না থাকলে দিল্লিতে সেই সরকার বা প্রধানমন্ত্রী হন নড়বড়ে। এ কথাটা ঘুরে বেড়ায় দিল্লির রাজনৈতিক মহলের অলিন্দে। উত্তরপ্রদেশে রয়েছে লোকসভার প্রায় ১৫ শতাংশ আসন। আর তাই ক্ষমতার কেন্দ্রে যেতে ফের একবার ১৯৯১ সালের মত রাম ঝড় অর্থাত হিন্দুত্ব জোয়ারের প্রত্যাশা করছেন নরেন্দ্র মোদী।

স্বাধীন ভারতের ৬৭ বছরের ইতিহাসে ১৪ জন প্রধানমন্ত্রীর ৭ জন উত্তরপ্রদেশ থেকে। এরা প্রায় ৪৮ বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বাকি ৭ জনের সম্মিলিত প্রধানমন্ত্রিত্ব ১৯ বছরের। এর মধ্যে কংগ্রেসের পিভি নরসিমা রাও ৫ বছর, মনমোহন সিং ১০ বছর প্রধানমন্ত্রিত্ব করলেও রাস ছিল উত্তরপ্রদেশ লবির হাতেই। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু, দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী দুজনেই ছিলেন উত্তরপ্রদেশের। তাদের মৃত্যুর পর দু দফায় ২৬ দিন অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী হন গুজরাটের গুলজারিলাল নন্দা। ১৯৭৭ সালে ভারতে প্রথম অকংগ্রেসী জনতা দল সরকার গঠিত হয় গুজরাটের মোরারজি দেশাইয়ের হাতে। কিন্তু ২৮ মাসের মধ্যে সেই সরকার ফেলে দেয় দলের উত্তরপ্রদেশ লবি। কংগ্রেসের সহায়তায় সরকার গঠন হয়। সেই সরকার ৬ মাস টিকেছিলো।

১৯৮৯ সালে ফের কংগ্রেসকে হারিয়ে ভারতে ক্ষমতায় আসে জনতা দল। উত্তরপ্রদেশে ৮৫টির মধ্যে ৫৭ আসন পায়। প্রধানমন্ত্রী হন উত্তরপ্রদেশেরই বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং। কিন্তু ক্ষমতার অলিন্দ নিজের রাজ্যেই তার নিরঙ্কুশ দখল ছিলো না। ফল! ১১ মাস বাদে দল ভেঙে প্রধানমন্ত্রী হন তার রাজ্যেরই চন্দ্রশেখর। তিনিও ১১ মাস সরকার চালান। ১৯৯৬ সালে বিজেপিকে ঠেকাতে কংগ্রেসের সমর্থনে জনতা দলের কর্ণাটকের নেতা এইচ দেবগৌরা এবং পরে বিহারের আই কে গুজরাল প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের দখল ছিলো বিজেপির হাতে। নড়বড়ে এই দু প্রধানমন্ত্রীর সরকার চলেছিলো এক বছর ১০ মাস। কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে একটিই সরকার ৫ বছরের মেয়াদ সম্পূর্ণ করতে পেরেছিলো। সেটি বিজেপির অটল বিহারী বাজপেয়ীর সরকার। তিনিও উত্তরপ্রদেশের নেতা এবং ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত পূর্ণ মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার নেতৃত্বে ১৯৯১, ১৯৯৬ এবং ১৯৯৮ এ তিন দফায় বিজেপি উত্তরপ্রদেশে ৫১, ৫২ এবং ৫৭ আসন পেয়েছিলো। ১৯৯৯ সালেও ২৯ আসন পেয়েছিলো বিজেপি। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ ভেঙে উত্তরাঞ্চল গঠন ও আঞ্চলিক শক্তি সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজবাদী পার্টি গঠনের পর বিজেপি এখানে শক্তি হারাতে শুরু করে।

২০০৪ এবং ২০০৯ সালে বিজেপি গুজরাটের লালকৃষ্ণ আদভানির নেতৃত্বে নির্বাচন করে উত্তরপ্রদেশে ৮০ আসনের মধ্যে ১০টি করে আসন পায়। কংগ্রেস ২০০৪ সালে ৯টি আসন পেলেও সমাজবাদী দল ৩৫ আসন নিয়ে তাদের সমর্থন করে। ২০০৯ সালে কংগ্রেস ২১ আসন পেলেও সমাজবাদী দল ২৩ আসনের সমর্থন দেয়।
৪৪ এমপির সমর্থন: এবার তাই বিজেপির কাছে উত্তরপ্রদেশ প্রেস্টিজ ফাইট। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীও জানেন সেই কথা। তাই তিনি গুজরাটের পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশের বেনারস কেন্দ্রেও প্রার্থী হয়েছেন। প্রার্থী হননি সেখানকার উগ্র নেত্রী উমাভারতি, মুরলীমনোহর যোশী। উত্তরপ্রদেশ বিজেপি এখন অভিভাবকহীন। মোদীর লক্ষ্য তাই একটাই, উত্তরপ্রদেশ বিজেপির নেতা হয়ে প্রধানমন্ত্রী পদ নিশ্চিত করা। কিন্তু পথ কন্টকময়। সমীক্ষায় উত্তরপ্রদেশে ৫১ আসন পাবে বললেও, জোট সঙ্গীহীন হয়ে এই কাজ বেশ কঠিন। ২০১২ সালে বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে বিজেপি ৪০৩ আসনের মধ্যে মাত্র ৪৭ আসন পেয়েছিলো। ১৭ শতাংশ ভোট রয়েছে বিজেপির। চতুর্মুখী লড়াইয়ে উত্তরপ্রদেশে ৩৫ শতাংশ ভোট পেলেই কেল্লাফতে। সমীক্ষার বিজেপির ভাবনার আসন আসতে পারে উত্তরপ্রদেশ থেকে।

মোদীর হাত ধরে তাই ফের একবার ১৯৯১ সালের হিন্দুত্ব হওয়ার মতো রাম ঝড়ের প্রত্যাশায় বিজেপি। কিন্তু গুজরাটের মোদী হাওয়া গঙ্গা পাড়ে উত্তরপ্রদেশে কতটা পৌঁছবে তা নিয়ে সংশয়ে বিজেপি নেতৃত্বও। কারণ সেই রাম ঝড়ও নেই, আর সেই বাজপেয়ীও নেই। মুসলিম ভোট না পেলে শুধু হিন্দু ভোটে উত্তরপ্রদেশে আধিপত্য লাভের সম্ভাবনা কমই। বেনারসে দাঁড়িয়ে বেশ চাপে মোদী। কারণ স্থানীয় মুসলিম নেতা বলেছেন, এখানকার ৩ লাখ মুসলিম ভোট মোদীর বিরুদ্ধে নিতে তিনি সব চেষ্টা করবেন। উত্তরপ্রদেশের লক্ষ্মৌয়ে তাই ঘোলা পানিতে মাছ ধরতে নেমে পড়েছেন বিজেবির সভাপতি রাজনাথ সিং। তিনি সেখানে প্রার্থী হয়েই শিয়া মুসলিম নেতাদের সাথে যোগাযোগ করেছেন। হয়ে উঠতে চাইছেন মোদীর বিকল্প। পরিস্থিতি মোকাবেলায় মোদী প্রত্যাশা করছেন স্বপ্নের আরেকটি রাম ঝড়ের। উত্তরপ্রদেশের অলিগলিতে তাই কানাঘুষা, মোদী এলে রাম মন্দির হবেই।