সমুদ্রের পানিতে নামার আগে দরকার বাড়তি সতর্কতা

 

নববর্ষের দিন সেন্টমার্টিনে সাগরে ডুবে মারা গেছেন ঢাকার আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ ছাত্র। ঘটনার দিনই দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজ চার সতীর্থের মৃতদেহ গতকাল বুধবার উদ্ধার করেছেন কোস্টগার্ড সদস্যরা।

বলার অপেক্ষা রাখে না, নতুন বছর বরণ করে নেয়ার দিনটিতে এ মর্মান্তিক ঘটনা নিহত ও নিখোঁজদের পরিবারে হরিষে বিষাদে পরিণত হয়ছিলো। আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি দল নববর্ষ উদযাপনের জন্য সেন্টমার্টিনে গেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুপুরে ভাটার সময় তাদের ৩৪ জন দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্বদিকের সৈকতে একসাথে গোসল করতে নামে। এ সময় তারা সাঁতার প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে। অথচ তখন যে ভাটা সেদিকে তাদের খেয়ালই নেই, তাদের গাইড দেয়া শিক্ষক কি করছিলেন? ভাটার টানে তারা সাগরে ভেসে গেছে। তাদের ভেসে যেতে দেখে স্থানীয় লোকজন ও কোস্টগার্ড সদস্যরা পাঁচজনকে উদ্ধার করেন। তাদের হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকরা দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
কক্সবাজার ও সেন্টমাটিন সৈকতে এভাবে প্রাণহানির ঘটনা আগেও কয়েকবার ঘটেছে। ২০১১ সালে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে গোসল করতে নেমে স্রোতের তোড়ে ভেসে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন ক্লোজআপ ওয়ান তারকা আবিদসহ তিন পর্যটক। গোসলে নেমে সাগরে ভেসে যাওয়ার পেছনে সংশ্লিষ্টদের অসচেতনতা, কর্তৃপক্ষের যথাযথ সতর্কীকরণ ব্যবস্থার অভাব ইত্যাদি বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। তবে এর পাশাপাশি তরুণদের বেপরোয়া মনোভাবও অনেক ক্ষেত্রে দায়ী বলে মনে করি আমরা। সাম্প্রতিককালে তরুণ ও যুবসমাজের মধ্যে এমন বেপরোয়াপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কোনো কিছুকেই যেন পরোয়া করে না তারা। রাস্তাঘাটে তাদের মোটরবাইক চালানো দেখলে বোঝা যায়, এরা কতোটা ভ্রুক্ষেপহীন। সোমবারের ঘটনা সম্পর্কে ধারণা করা যায়, অ্যাডভেঞ্চার দ্বারা তাড়িত হয়েই এ শিক্ষার্থীরা সাগরে নেমেছিলেন। ভাটার সময় সৈকতে নামাটা যে বিপজ্জনক, সেটাও সম্ভবত তাদের কেউ বলে দেয়নি। অথবা তাদের সতর্ক করে দেয়া হলেও তারা তা কানে তোলেননি। পুকুরে বা কোনো সাধারণ জলাশয়ে সাঁতার কাটা আর সমুদ্রে সাঁতার কাটা যে এক নয়- সমুদ্রের লবণাক্ত পানি ভারি হওয়ায় সেখানে সাঁতার কাটা যে বেশ কঠিন এবং ভাটার সময় এর পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে, এটা সম্ভবত তাদের কারও জানা ছিলো না। ফলে ঘটে গেছে এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা।

সমুদ্র সৈকতে কখন কিভাবে নামলে বিপদ হতে পারে, সে ব্যাপারে ব্যাপক প্রচারাভিযানের প্রয়োজন রয়েছে। বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে দেয়ার কাজটি প্রাথমিকভাবে কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিনগামী তরুণদের অভিভাবক ও শিক্ষকরা করতে পারেন। দ্বিতীয়ত, স্থানীয় জনপ্রশাসন ও পর্যটন কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে। তৃতীয়ত, হোটেল-মোটেল কর্তৃপক্ষ এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।

প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করেন। তারা স্বভাবতই সমুদ্রের পানিতে নেমে বাড়তি আনন্দ নিতে চান। সমুদ্রে কখন জোয়ার, কখন ভাটা, কখন নামা যায়, কখন বিপদ সে বিষয়ে ব্যাপক গণসচেতনতা দরকার।