দামুড়হুদার বিষ্ণুপুরের গৃহবধূ দু সন্তানের জননীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দামুড়হুদার বিষ্ণুপুরের ২ সন্তানের জননী টুনি (২৭) নামের এক গৃহবধূকে পাষণ্ড স্বামী ও শাশুড়ি মিলে পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সে পারিবারিক কলহের কারণে বিষপান করে আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযুক্ত স্বামী জিয়ারুল দাবি করেছে। থানা পুলিশ গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে দামুড়হুদা থানা হেফাজতে নিয়েছে। আজ বুধবার লাশের ময়নাতদন্ত করা হবে। গত সোমবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার বিষ্ণুপুর মাঠপাড়ার মৃত নেকছেদের ছেলে জিয়ারুলের স্ত্রী দু সন্তানের জননী টুনি খাতুন গত সোমবার সকালে স্বামীকে না জানিয়ে ১ মণ ভুট্টা প্রতিবেশী তরজের বাড়িতে রেখে আসে। বিকেলে স্বামী জিয়ারুল বাড়িতে এলে একমাত্র ছেলে সাকিব (৮) বিষয়টি তার পিতাকে জানিয়ে দেয়। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এরই একপর্যায়ে স্বামী ও শাশুড়ি মিলে গৃহবধূকে বেদম মারপিট করে। এ সময় গৃহবধূ টুনি জ্ঞান হারিয়ে ফেললে সে মারা গেছে ভেবে তার মুখে বিষ ঢেলে দেয়া হয় এবং সে বিষপান করেছে বলে প্রচার করা হয়। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য গ্রামের মেম্বারের সহযোগিতায় গোপনে লাশ হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নেয়া হয় এবং দুপুরে মেয়ের পিতাকে সাথে এনে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির জন্য দামুড়হুদা থানার এসআই আফজাল হোসেন ঘটনাস্থলে পৌছে এবং নিহত গৃহবধূর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহৃ দেখতে পান। তিনি বিষয়টি থানার অফিসার ইনচাজ সিকদার মশিউর রহমানকে জানান এবং ময়নাতদন্তের জন্য লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আফজাল হোসেন বলেন, নিহত গৃহবধূর পিঠে বেশ কয়েকটি আঘাতের চিহৃ রয়েছে। পিঠের বামপাশে বগলের নিচে একটি বড় ধরনের আঘাতের চিহৃ পেয়েছি। আমার ধারণা ওখানে হাতুড়ি দিয়ে সজোরে আঘাত করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, আমি লাশের সুরতহাল শেষে লাশ থানায় নেয়ার কথা বলার সাথে সাথে নিহত গৃহবধূর স্বামী জিয়ারুল ও শাশুড়ি আনোয়ারা ( ৫০) লাশ রেখে বাড়ি থেকে সটকে পড়ে।

নিহত গৃহবধূর পিতা ইব্রাহিমপুরের মইনুল ইসলাম জানান, প্রায় ১৩ বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। মেয়ে বিষপান করেছে এবং তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে তারা আমাকে এসব কিছুই বলেনি। দুপুরে জরুরি দরকার আছে বলে জামাই ফোন দিয়ে ডেকে নেয় এবং বলে ভুট্টা সরানোকে কেন্দ্র করে বিষয় নিয়ে একটু কথাকাটাকাটি হয়েছিলো। তারপর সে বিষপান করে।

এ বিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি সিকদার মশিউর রহমান জানান, লাশ উদ্ধার করে থানায় নেয়া হয়েছে। আজ বুধবার লাশের ময়নাতদন্ত করা হবে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই জানা যাবে এটা হত্যা না আত্মহত্যা। নিহত গৃহবধূ টুনির সংসারে ১ ছেলে ও ১ মেয়ে রয়েছে। মেয়ে পপি (১০) ৩য় শ্রেণিতে এবং ছেলে সাকিব (৮) ২য় শ্রেণির ছাত্র।

এদিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি থানা পুলিশকে কোনো কিছু না জানিয়েই লাশ কিভাবে তাদের কাছে দিলো এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পুলিশ প্রশাসনসহ এলাকার সচেতনমহল। বিষয়টি জেলার সিভিল সার্জনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এলাকার সচেতনমহল।