মো. শাহাবুদ্দিন: কালের বিবর্তনে প্রয়োজনের তাগিদে বাঙালি হারিয়েছে অনেক কিছুই। জীবনযাত্রায় যুক্ত হয়েছে গরুর গাড়ির বদলে ইঞ্জিনচালিত হরেক নামের যান। গরুতে টানা লাঙলের বদলে এসেছে যন্ত্রচালিত লাঙল। এরপরও খাঁটি তেলের সন্ধানে বাঙালি খুঁজে ফেরে ঘানি ভাঙানো সেই কলু পরিবার। যা এখন পান্তা ইলিশের মতোই পয়লা বোশেখে প্রবীণদের স্মৃতিপটে ভাসে।
গ্রাম বাংলার কৃষকের চাষ করার আদি যন্ত্র গরুর গাড়ি, লাঙল, মই, বিদে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। পয়লা বোশেখে কৃষকেরা এখন আউষ ধান বপন করে না। গ্রাম বাংলার কৃষকের ঐতিহ্য কৃষি কাজের যন্ত্র গরুর গাড়ি, লাঙল, মই, বিদে দিয়ে কাজ করতো। এজন্য তাদের কোনো বাড়তি খরচ হতো না। পয়লা বোশেখ আসার আগেই আউষ ধান বোনার জন্য জমি লাঙল দিয়ে চাষ করে প্রস্তুত রাখতো। বৃষ্টি হোক আর না হোক পয়লা বোশেখে ধানের বীজ লাঙল মই গরুর গাড়ি নিয়ে জমিতে ধান বপন করে আসতো। ধানের চারা বের হলে ঘাস ও ধানের চারা পাতলা করার জন্য বিদে দেয়া হতো। ধান কাটার পর গরুর গাড়ি করে খামারে আনা হতো সেখান থেকে ঝাড়াই মাড়াই করে গোলায় তোলা হতো। বর্তমানে কৃষিতে আধুনিকতার ছোয় লাগা ও নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন হওয়ায় এসব কৃষকের যন্ত্র ও আউষ ধান হারিয়ে যাচ্ছে। কৃষি কাজে পাউয়ারটিলার দিয়ে জমি চাষ ধান খামারে আনাসহ ঝাড়াই মাড়াইয়ের কাজ করছে চাষিরা। দিন দিন কৃষকেরা গরুর লাঙল, গরুর গাড়ি, বিদে, মই ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছে। অনেক কৃষকের বাড়িতেই কৃষকের এ যন্ত্র আর দেখা যায় না। একদিন এসব যন্ত্র বাদ দিয়ে কৃষকের বাড়িতে বাড়িতে পালন করার জন্য হয়তো দু-একটা গরু থাকবে। আগেরকার মানুষের প্রবাদ বাক্য গোয়াল ভরা গরু, গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ একথাটি হয়তো আর শোনা যাবে না।