মেয়েদের বড় শত্রু মেয়েরাই : বিচারপতি খায়রুল

স্টাফ রিপোর্টার: আইন কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বলেছেন, মেয়েদের সবচেয়ে বড় শত্রু মেয়েরাই। মা মেয়েকে দেন মুরগির ডানা, আর ছেলেকে দেন রান। নির্যাতনের শিকার নারী স্বামীকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে চান না। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বিচারক, প্রশাসন, আইনজীবী, সাংবাদিক, চিকিত্সকসহ পেশাজীবীদের সাথে মতবিনিময়সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে খায়রুল হক এ কথা বলেন।

সাবেক প্রধান বিচারপতি বলেন, দেশের সংবিধান ও আইন নিরাপত্তা দিচ্ছে, তারপরও নারীরা সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছেন না। তিনি নারীদের সোজা হয়ে দাঁড়ানো এবং সাহস নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানান। সভায় সভাপতিত্ব করেন মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম। এতে মূল বক্তব্য পড়ে শোনান পরিষদের সহসাধারণ সম্পাদক মাসুদা রেহানা বেগম।

বর্তমানে নারী নির্যাতন প্রতিরোধের ক্ষেত্রে আইনি সমস্যার চেয়েও সামাজিক সমস্যাকে বেশি দায়ী করেন সাবেক এ প্রধান বিচারপতি। তিনি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনসহ সব আইনে দ্রুত চার্জশিট দাখিল, জবানবন্দি নেয়াসহ বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার বিষয়েও গুরুত্ব দেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিক-উল-ইসলাম বলেন, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য তৈরি কর্মপরিকল্পনায় নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কোন মন্ত্রণালয়ের কী দায়িত্ব, তা চিহ্নিত করা হয়েছে।

মতবিনিময়সভায় বিভিন্ন পেশাজীবী প্রতিনিধিরা নিজেদের কর্মজীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা জানান। তারা নারী নির্যাতন প্রতিরোধে নিজের পরিবার থেকেই সোচ্চার হওয়া এবং নির্যাতনবিরোধী চর্চা গড়ে তোলারও আহ্বান জানান।

প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, রাষ্ট্র নারীর প্রতি মোটেই সংবেদনশীল নয়। রাষ্ট্র নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি। আন্তর্জাতিক সিডও সনদের গুরুত্বপূর্ণ ধারায় সরকার আপত্তি বহাল রেখেছে। গৃহকর্মীদের নির্যাতনের ক্ষেত্রে নারীরাই বেশি ভূমিকা পালন করেন বলে উল্লেখ করেন সোহরাব হাসান।

ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরির জাতীয় উপদেষ্টা (টেকনিক্যাল) শরীফ আখরুজ্জামান বলেন, ধর্ষণ মামলায় আসামিকে ডিএনএ টেস্টের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জেয়াদ-আল-মালুম বলেন, নারীর সমান অধিকারের ক্ষেত্রে অসমাঞ্জস্যপূর্ণ বহু আইন বহাল তবিয়তে আছে। নতুন আইন করার ক্ষেত্রেও সংবিধানের বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে না। নারী নির্যাতকদের দৃষ্টিভঙ্গিগত কোনো সমস্যা নেই, তারা মানসিক রোগী বলে মন্তব্য করেন জেয়াদ-আল-মালুম।

এটিএন নিউজের নিউজ এডিটর (আউটপুট) প্রণব সাহা ধর্ষণের শিকার নারীদের ফরেনসিক পরীক্ষায় নারী চিকিত্সকদের সংখ্যা বাড়ানোর ওপর জোর দেন। মুসলিম নারীরা সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হলেও হিন্দু নারীদের এ অধিকার নেই উল্লেখ করে তিনি সব ধর্মের নারী-পুরুষের জন্য সর্বজনীন পারিবারিক আইন তৈরির দাবি জানান।

আলোচনায় অন্যদের মধ্যে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মেখলা সরকার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের সহকারী অধ্যাপক উম্মে ওয়ারা, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ফাতিহা ইয়াসমীন আলোচনায় অংশ নেন। মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন- মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাখী দাশ পুরকায়স্থ।