ওষুধ প্রশাসনের বড় কর্তাদের একটু মানবিক হতে হবে

 

ওষুধে জীবন বাঁচায়। আবার ওষুধেই জীবন কেড়ে নিতে পারে। সেই ওষুধ যদি হয় ভেজাল, বিষক্ত রাসায়নিক পদার্থের তা হলে এক রোগ নিরাময়ের বদলে অনেকটা দূরাগ্য ক্যানসারও শরীরে বাসা বাধতে পারে। ভেজাল ওষুধে ক্যান্সার ছড়াচ্ছে, বিষক্ত ক্যামিকেল যুক্ত ওর স্যালাইনেও মরছে মানুষ। এই যখন দেশের চিকিৎসা চিত্র, তখন ওষুধ প্রশাসনের দুর্নীতি এবং বড় কর্তাদের দায়িত্বশীলতা কোন পর্যায়ে তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। কর্তাদের উদাসীনতার কারণেই দেশের কতোজনকেই না অকালে ঝরতে হচ্ছে। কাতরতে হচ্ছে মরণ যান্ত্রণায়।

সম্প্রতি ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অ্যাডভারস ড্রাগ রি-অ্যাকশন অ্যাডভাইজরি মনিটরিং কমিটি মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ছয়টি জেনেরিক নামের ওষুধের উৎপাদন ও বিপণন নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করেছে। এ সুপারিশ ওষুধশিল্প মালিকরা তেমন আমলে না নিয়ে ওইসব ওষুধের উৎপাদন ও বিপণন টিকিয়ে রাখতে জোর তদবির চালাচ্ছে। ওষুধের কাজ রোগ নিরাময় করা। কিন্তু ওইসব ওষুধ উল্টো ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিল রোগ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। এ কারণে বিভিন্ন দেশে সাত বছর আগেই এ ওষুধগুলো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও দেশে এতোদিন ধরে এমন ক্ষতিকর ওষুধ কীভাবে উৎপাদিত ও বিক্রি হয়ে আসছে, সেটাই প্রশ্ন। উল্লেখিত ছয় জেনেরিক নামের অন্তত ২৫৩ ব্র্যান্ডের ওষুধে দেশের ওষুধ বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলোর কাছে এসব ওষুধ তৈরির বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল থেকে যাওয়ায় এখন নাকি তারা নানাভাবে প্রভাব খাটিয়ে এর উৎপাদন ও বিপণন অব্যাহত রাখার চেষ্টা করছে। শুধু কি তাই? ডায়রিয়া শব্দটি কয়েক দশক আগেও এই জনপদে এক আতঙ্কের নাম ছিলো। যে ব্যাকটেরিয়া দূষিত পানির মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে, এরপর পরিপাকতন্ত্রে ঝড় তোলে। ঘন ঘন নিষ্ক্রান্ত হওয়ার সময় বেরিয়ে যায় শরীরের জলীয় অংশ। হয়ে ওঠে প্রাণঘাতী- সেই ভয়ঙ্কর রোগ থেকে আরোগ্যলাভের সহজ চিকিৎসা প্রচলিত। ওর স্যালাইন নামে পরিচিত। সহজ, সস্তা ও অনায়াস প্রয়োগের ফলে খাবার স্যালাইন এক অর্থে জীবনদানেরই প্রতিরূপ হয়ে উঠেছে। সেই জীবনদায়ী স্যালাইন যদি, শুধুমাত্র অধিক মুনাফার আশায়, বিষাক্ত রাসায়নিক দিয়ে তৈরি করা হয়, তবে তা প্রাণ না বাঁচিয়ে প্রাণ কেড়ে নেয়ারই ভূমিকা রাখে।

অনেকদিন ধরেই ভেজাল বা নকল স্যালাইন তৈরি করে বাজারে দেদারছে বিক্রির অভিযোগ উত্থাপিত হচ্ছে। পত্র-পত্রিকার পাতায় গুরুত্বের সাথে তুলেও ধরা হচ্ছে। প্রতিকার কি মিলছে? সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা এতে প্রভাবিত হয়েছেন বলেই মনে হয়! কারণ ওইসব ওষুধ নিষিদ্ধ করার বিষয়ে তারা এখনও ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করছেন। যারা প্রাণধ্বংসের খেলায় মাতেন সামান্য লাভের আশায়, তাদের গণশত্রু বললেই খ্যান্ত হলে চলবে না, উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ওষুধ প্রশাসনের দুর্নীতি দূর করতেও বড় কর্তাদের একটু মানবিক হতে হবে।