মুজিবনগর ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলনা বিভাগে শ্রেষ্ঠ

 

মহাসিন আলী: বঙ্গভঙ্গের পূর্বে অখণ্ড ভারতের নদীয়া জেলার একটি পুরাতন ও ঐতিহ্যবাহী বিদ্যা নিকেতন ভবানীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়। বর্তমানে এটি মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালী ইউনিয়নের ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার মান, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, পরিবেশ এবং বিদ্যালয় কার্যনির্বাহী কমিটির (এসএমসি) কার্যক্রম ইত্যাদি বিবেচনায় বিদ্যালয়টি ২০১৩ সালে শিক্ষা মন্ত্রাণালয় কর্তৃক খুলনা বিভাগের শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃত পেয়েছে।

স্বাধীনতার সূতিকাগার মুজিবনগর উপজেলা থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার উত্তরপূর্বে অবস্থিত এ বিদ্যালয়টি। দেশ স্বাধীনের ১১০ বছর আগে এলাকার বিদ্যানুরাগী ব্যক্তিদের প্রচেষ্টায় ১৮৮০ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। দেশ স্বাধীনের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণায় ১৯৭৩ সালে বিদ্যালয়টি সরকারি হয়। প্রায় দেড়শ বছরের পুরোনো বিদ্যালয়টি ৯৯ শতক জমির ওপর গড়ে ওঠে। বর্তমানে বিদ্যালয়টির আঙিনায় ফলজ, বনজ ও ঔষুধি গাছে ভরা। সাথে রয়ে ফুলের বাগান। পাঁচিল ঘেরা মনোরম ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মণ্ডিত বিদ্যাপীঠটির লেখাপাড়ার মান সন্তোষজনক। সামনে রয়েছে দর্শনীয় গেট।

সরেজমিনে প্রতিষ্ঠানটিতে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা প্রত্যাহিক সমাবেশ করছে। মনোরম স্কুল ড্রেস পরে শিশুরা পিটি শেষে দেশ ও জাতীর কল্যানে শপথ গ্রহণ করলো। গাইলো জাতীয় সঙ্গীত। সমাবেশ শেষে শিশু শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করলো। ঘণ্টা বাজার সাথে সাথে শ্রেণি শিক্ষকরাও শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করলেন। দেখে মনে হলো প্রতিষ্ঠানটি জেলা শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরের নয়। বরং জেলা শহরে অবস্থিত বেসরকারিভাবে পরিচালিত উন্নতমানের একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুল।

বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, বিদ্যালয় ভবনের নাম দেশের বরেণ্য কবি-সাহিত্যিকদের নামের সাথে মিল করে রাখা হয়েছে। ভবনগুলোর নাম কাজি নজরুল ইসলাম ভবন, মীর মোশাররফ হোসেন ভবন ও পল্লী কবি জসিমউদ্দিন ভবন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুর রহমান ২০০৮ সালে এ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। কথা হয় তার সাথে। তিনি জানান, বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ৪৪৯ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের পাঠদানের জন্য ৪ শিক্ষক ও ৫ জন শিক্ষিকা রয়েছেন। এছাড়া আরো আছেন দুজন কমিউনিটি শিক্ষক। যারা বিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত থাকেন। তাদের বেতনের ব্যবস্থা করা হয় বেসরকারিভাবে। তিনি জানালেন, ২০১৩ সালে এ বিদ্যালয় থেকে ৭৩ জন প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিএসসি) পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ পাশ করে। যার মধ্যে একজন বৃত্তি পায়। ২০১২ সালে ৫২ জন শিক্ষার্থী পিএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ পাস করে। যার মধ্যে ৫ জন ট্যালেন্টপুলে ও একজন সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পায়।

প্রতিবছর নিয়মিত পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সহপাঠ্যক্রম, সমাজ সেবামূলক কার্যক্রম, নৈতিক ও আদর্শ শিক্ষা দেয়া হয়। এর পাশাপাশি কোমলমতি শিক্ষার্থীরা কাব স্কাউট, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে উপজেলা, জেলা, জোন ও বিভাগীয় পর্যায়ে কৃতিত্ব অর্জন করেছে। এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে থাকে।

ইতোমধ্যে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি (এসএমসি) মেহেরপুর জেলার শ্রেষ্ঠ ম্যানেজিং কমিটি (এসএসসি) হিসেবে স্বীকৃত পেয়েছে। বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি রকিবুল ইসলাম কাঁচা ৫ বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠানের এসএমসির সভাপতি রয়েছেন। তিনি জানান, সরকারের পাশাপাশি ২০১৩ সালে গণসাক্ষরতা অভিযান ও মানব উন্নয়ন কেন্দ্র মউক’র মাধ্যমে মোনাখালী কমিউনিটি এডুকেশন ওয়াচ গ্রুপ গঠনের পর থেকে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন ওরিয়েন্টেশন, অভিভাবক সমাবেশ, এসএমসির সাথে পৃথক সভা করে বিদ্যালয়টিকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে অজপাড়া গাঁয়ের এ বিদ্যাপীঠটি পরিদর্শনে ভোলা ও সিরাজগঞ্জ থেকে শিক্ষানুরাগীরা ব্যক্তিরা এসেছিলেন।

Leave a comment