বোশেখের আগুনে জ্বলছে ইলিশ

স্টাফ রিপোর্টার: বোশেখের আগুনে জ্বলছে ইলিশ। মূল্য বৃদ্ধির হার ছাড়িয়েছে সব রেকর্ড। বরগুনার পাথরঘাটা মোকামে শুক্রবার প্রতিমণ ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৮০ হাজার টাকায়। এটা অবশ্য পাইকারি দর। খুচরা বাজারে যেতে যেতে এর দাম দাঁড়াবে কম করে হলেও মণপ্রতি ১ থেকে সোয়া লাখ টাকা। কেজি দরের হিসেবে প্রায় ৩ হাজার ২০০। এ দামে ইলিশ কিনতে পারছে না সাধারণ মানুষ। অবশ্য তবুও কমছে না দাম। এ দরেই বিক্রি হচ্ছে শ শ মণ ইলিশ। চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। যশোরসহ সারাদেশের বাজারগুলোতে একই অবস্থা।

বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করেই মূলত এ মূল্য বৃদ্ধি। যেমনটা হয় প্রতিবছর। তবে এবার যেন কেবল আকাশছোঁয়া নয়, আকাশ ফুঁড়ে বেড়িয়ে গেছে ইলিশের দাম। বরগুনা জেলা মৎস্য ট্রলার মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, পাথরঘাটা মোকামে গতকাল শুক্রবার ১ কেজি সাইজের ইলিশের পাইকারি দর ছিলো ৮০ হাজার টাকা মণ। এর একটু ছোট সাইজের ইলিশও বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকায়। মোকামে আসার সাথে সাথে পাল্টাপাল্টি দর হাঁকিয়ে এসব ইলিশ নিয়ে যাচ্ছেন পাইকাররা। ট্রাক ভরে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। মোকামের অন্য ব্যবসায়ীদের সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, মাত্র ৭/৮ দিনের ব্যবধানে হঠাৎ বেড়ে গেছে ইলিশের দাম। বোশেখকে কেন্দ্র করেই যে মূল্য বৃদ্ধি তা-ও স্বীকার করেন তারা। দাম বৃদ্ধির পরিমাণ দু থেকে আড়াইগুণ উল্লেখ করে তারা বলেন, শুক্রবার ৮০ হাজার টাকা মণ দরে যে ইলিশ বিক্রি হয়েছে মাত্র কদিন আগেও তার দাম ছিলো ৩৫ থেকে ৪০ হাজার। কেজির নিচের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ২৫ হাজারে। কেবল পাথরঘাটাই নয়, দক্ষিণের প্রায় সবগুলো মোকামেই এখন আকাশছোঁয়া দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ।

সাবেক মেয়র বরিশাল-৫ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হোসেন হিরনের মৃত্যুতে বাতিল করা হয়েছে বরিশাল নগরীর সবরকম বর্ষবরণ উৎসব। পান্তা ইলিশের কোনো আয়োজনও হচ্ছে না এবার। কিন্তু তা সত্ত্বেও কমেনি ইলিশের দাম। বরং যেন দিন দিন আরও বাড়ছে তা। দেশের অন্যতম বৃহৎ বরিশাল ইলিশ মোকামের ব্যবসায়ীরা বলেন, লোকাল বাজারে সরবরাহ খুব একটা বেশি না থাকলেও সেই ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছেন বাইরের ব্যবসায়ীরা। তাদের নিয়োজিত পাইকাররা কিনে নিচ্ছেন ইলিশ। চালান করছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। শুক্রবার বরিশাল মোকামে কেজি সাইজের ইলিশের পাইকারি দর ছিলো প্রায় ৮০ হাজার টাকা মণ। মোকামের ব্যবসায়ীরা জানান, কেবল বাংলা নববর্ষই নয়, নদী সাগরে মাছের সংকটও মূল্য বৃদ্ধির একটি কারণ। বর্তমানে চলছে ইলিশের খরা মৌসুম। দিনরাত জাল ফেলে বসে থেকেও মাছ পাচ্ছে না জেলেরা। শুক্রবার বরিশাল মোকামে সবমিলিয়ে ১০০ মণ ইলিশও আসেনি। গত কয়েক মাস ধরে চলছে এ অবস্থা। ফলে মাছের দাম বৃদ্ধি খুবই স্বাভাবিক। মোকামের ব্যবসায়ী জহির সিকদার জানান, মাত্র ৭-৮ দিনের ব্যবধানে এই দাম বৃদ্ধি খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। পহেলা বৈশাখের আগে এভাবে প্রতি বছরই দাম বাড়ে। তবে এবারের দাম বাড়াটা একটু অস্বাভাবিক। এর সঠিক কারণ আমার জানা নেই। যতদূর সম্ভব প্রান্তিক থেকেই অতিরিক্ত মূল্য ধরা হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে। বরিশাল এবং পাথরঘাটার মতো দক্ষিণের কুয়াকাটা, আলিপুর, ভোলার লালমোহন চরফ্যাশন, টেংরাগিড়ি এবং পাড়েরহাটসহ প্রায় সবগুলো মোকাম থেকেই পাওয়া গেছে একইভাবে দাম বৃদ্ধির খবর। বরিশাল ইলিশ মোকামের আড়ৎদার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল জানান, মূল্য বৃদ্ধির এই উত্তাপ অবশ্য খুব একটা বেশি দিন থাকবে না। আশা করছি, সোমবারের পর থেকেই আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে ইলিশের বাজার।

যশোর ব্যুরো জানায়, আর দুদিন পরে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পহেলা বৈশাখ। যশোরের বাজারে ইলিশে যেন আগুন লেগেছে। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ইলিশ। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে ইলিশের দাম। তবু যাদের সাধ্য আছে তারাও হিমশিম খাচ্ছেন।

যশোর বড় বাজার আড়ৎদার ও কমিশন এজেন্ট গৌরব ফিস সাপ্লাইয়ের স্বত্বাধিকারী গৌতম দাস জানান, দুতিন মাস ইলিশ মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকায় বাজারে এখন সরবরাহ কম। সরবরাহের ওপর ভিত্তি করে মাছের দাম বৃদ্ধি ও কম নির্ভর করে। যশোরের বাজারগুলোতে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ইলিশ মাছ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে খুচরা ব্যবসায়ীদের ভাষায় ফিশিং ও স্টোর ক্যাটাগরির ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। বড় সাইজ অর্থাৎ সাড়ে সাতশ গ্রাম থেকে বেশি ওজনের স্টোর ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে ১২-১৩শ টাকায়। এই সাইজেরই ফিশিং ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে পাঁচশ থেকে ছয়শ টাকায়। পাঁচশ থেকে ছয়শ গ্রাম ওজনের স্টোর ইলিশ বিক্রি হচ্ছে সাতশ থেকে আটশ টাকায়। এই সাইজেরই ফিশিং ইলিশ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে তিনশ থেকে চারশ টাকায়। চারটি ইলিশে এক কেজি এমন স্টোর ইলিশ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে চারশ থেকে ৫শ টাকায়। এই সাইজেরই ফিশিং ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে আড়াইশ থেকে তিনশ টাকায়।
খুচরা ইলিশ মাছ বিক্রেতা এরশাদ আলী জানান, বড় ইলিশের চাহিদা বৃদ্ধি পেলেও এ সাইজের মাছ বাজারে জোগান কম। শহরের বাগমারা এলাকার বাসিন্দা প্রণব দাস বলেন, পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা কৌশলে ইলিশ মজুদ করছে। সরবরাহ কমের অজুহাতে ইলিশ মাছের বেশি দাম হাঁকা হচ্ছে।

Leave a comment