সড়ক দুর্ঘটনায় মেহেরপুরের শিক্ষিত যুবক কামালের স্বপ্নগুলোর মৃত্যু

 

মহাসিন আলী: সড়ক দুর্ঘটনায় কামাল হোসেনের মৃত্যু না হলেও তার স্বপ্নগুলোর মৃত্যু হয়েছে। আজ তিনি শুধু একজন প্রতিবন্ধী। অর্থনৈতিক দূরাবস্থার কারণে তিনি স্বাবলম্বী হতে পারছেন না। মারা যাওয়া স্বপ্নগুলো তাকে পীড়া দিচ্ছে। প্রতিবন্ধী হলেও তিনি স্বাবলম্বী হতে চেষ্টা করছেন। কিন্তু কোনো সুযোগ তাকে ধরা না দেয়ায় তিনি হতাশার সাগরে ভাসছেন।

মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার আনন্দবাস গ্রামের লিয়াকত আলীর ছেলে কামাল হোসেন (৩২)। স্নাতক পাস করার পরে নিজ গ্রামে আনন্দবাস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে শিক্ষক হিসেবে সেবা দিচ্ছিলেন। তার মনে স্বপ্ন ছিলো ওই বিদ্যালয়ের একটি পদ শূন্য হলেই তিনি ওই পদে নিয়োগ পাবেন। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন একটি সড়ক দুর্ঘটনা নিভিয়ে দিয়েছে।

বন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুজিবনগরের আনন্দবাস গ্রাম থেকে বন্ধুর মোটরসাইকেলের পিছে চড়ে মেহেরপুর শহরে আসেন। দিনটি ছিলো ২০০০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন মেহেরপুর জেলা প্রশাসন চত্বরের সামনে তাদের মোটরসাইকেলের সাথে বিপরীতগামী একটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ওই সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি মারাত্মক আহত হন। তাকে দ্রুত নেয়া হয় হাসপাতালে। তার ডান হাত ভেঙে গুড়ো হয়ে গেছে। ডাক্তারের পরামর্শে তার ডান হাত কেটে ফেলা হয়। তিনি অচেতন ছিলেন প্রায় ৪ মাস। ওই সময় স্কুলের চাকরি থেকে বঞ্চিত হন তিনি। হয়ে পড়েন বেকার। এরপর থেকে তিনি অন্যের গ্রলগহ হয়ে বেঁচে আছেন।

কামাল হোসেন বর্তমানে একজন মুদি দোকানি। দোকানের পুঁজি সীমিত। তার পিতা লিয়াকত আলী মাঠে অন্যের জমিতে কামলা খাটতেন। স্ত্রী শারমীন জাহান এসএসসি পাশ করেননি। তার পরেও তিনি একটি ব্র্যাক স্কুলে শিশুদের পাড়ানোর চাকরি নেন। সামান্য যা ভাতা তিনি পান তার সবটুকু স্বামীর সংসারে দেন। সম্প্রতি তার পিতা লিয়াকত আলী হার্টের রোগী হয়ে পড়েছেন। আর কাজ করতে পারেন না। তার চিকিৎসার জন্য টাকা দরকার।

স্ত্রী, দু কন্যা ও মা-বাবা নিয়ে সংসারে মোট ৬ জন লোক। সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন কামাল হোসেন। তার ওপর সন্তানদের স্কুলের খরচ তিনি দিতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে এ বছর স্ত্রীকে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এসএসসি প্রোগ্রামে ভর্তি করে দিয়েছেন। নিজে না পারলেও তার স্ত্রী শিক্ষিত হয়ে চাকরি করবে এমনটাই তার প্রত্যাশা।

হতাশার মাঝেও কামাল হোসেন মনে করেন, কোনো সুহৃদয় ব্যক্তি যদি তাকে একটি চাকরি দিতেন তবে তিনি পরিবার পরিজন নিয়ে অন্তঃপক্ষে দু বেলা দু মুঠো ভাত খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারতেন। তিনি আরও বলেন, পুঁজির অভাবে তার মুদী দোকানটিও নিভুনিভু করছে।

একজন প্রতিবন্ধী হিসেবে কামাল হোসেন সরকারি-বেসরকারি, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সমাজের বৃত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেন।