বাস থেকে নামিয়ে কোমরপুরের ইসরাফিলকে জবাই করে খুন

মেহেরপুরের নুরপুরে দিনদুপুরে সন্ত্রাসীদের কিলিং মিশন

মুজিবনগর প্রতিনিধি/মেহেরপুর অফিস: যাত্রীবোঝাই বাস থেকে নামিয়ে মুজিবনগরের কোমরপুর গ্রামের ইসরাফিলকে কুপিয়ে ও জবাই করে খুন করেছে সন্ত্রাসীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে মেহেরপুর সদর উপজেলার নুরপুর চৌরাস্তা মোড়ে দিনদুপুরে এ কিলিং মিশন চালায় সন্ত্রাসীরা। ঘটনা ঘটিয়ে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায় তারা। নিহত ইসরাফিল হোসেন মুজিবনগর উপজেলার কোমরপুর গ্রামের মৃত বাদল মণ্ডলের ছেলে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে তার নামে মুজিবনগর ও সদর থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ড অনেকেই সচক্ষে দেখেছেন কিন্তু প্রাণভয়ে কেউ মুখ খুলছেন না। এলাকায় বিরাজ করছে চরম আতঙ্ক।

স্থানীয় ও পুলিশসূত্রে জানা গেছে, মেহেরপুর থেকে মহাজনপুরগামী একটি যাত্রীবাহী লোকাল বাস দুপুরে নুরপুর চৌরাস্তার মোড়ে এসে থামে। উদ্দেশ্য যাত্রী ওঠানামা। যাত্রী ও বাসচালক-সুপারভাইজার কিছু বুঝে ওঠার আগেই অস্ত্রধারী ৫/৬ জন সন্ত্রাসী হুড়পাড় করে বাসের মধ্যে ঢুকে পড়ে। উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে যাত্রীদের মাঝে। মুখে কোনো কথা ছিলো না যাত্রীদের। তবে সন্ত্রাসীরা কাউকে কিছু না বলে ইসরাফিলকে ধরে টেনেহেঁচড়ে নিচে নামিয়ে নেয়। স্থানীয় উৎসুক কিছু মানুষ বিষয়টি দেখতে এগিয়ে এলে ফাঁকা স্থানে দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় সন্ত্রাসীরা। একপর্যায়ে প্রধান সড়ক থেকে কয়েক গজ দূরে হেরিংবন্ড সড়কের ওপরে ইসরাফিলকে উপর্যুপরি কুপিয়ে ও জবাই করে মৃত্যু নিশ্চিত করে স্থান ত্যাগ করে সন্ত্রাসীরা। জীবনরক্ষায় সাহায্যের জন্য ইসরাফিলের আর্তচিৎকার অনেকেই শুনেছেন। কিন্তু কিছুই করার ছিলো না বলে জানালেন কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা। খবর পেয়ে জেলা পুলিশের কয়েকটি দল ঘটনাস্থলের আশপাশসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান শুরু করে। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কেউ আটক হয়নি। দুপুরেই ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালমর্গে পাঠায় পুলিশ। ঘটনাস্থলে আসেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা। নিহত ইসরাফিলের মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন।

ইসরাফিলের মা রাহাতন খাতুন জানিয়েছেন, একটি ডাকাতি মামলায় গ্রেফতার হয়ে হাজতবাসের পর মাস দুয়েক আগে জামিনে মুক্তি পায় ইসরাফিল। সে ওই মামলায় মেহেরপুর আদালতে হাজিরা দিতে গতকাল সকালে বাড়ি থেকে বের হয়। হাজিরা শেষে বাসযোগে বাড়ি ফেরার পথে সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যা করেছে। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে সে বাড়ির কাজকর্ম নিয়েই ব্যস্ত থাকতো। স্থানীয় কিছু চরমপন্থি তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিলো। হুমকিদাতরাই তাকে হত্যা করেছে বলে দাবি করেন তিনি।

মেহেরপুর সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) আব্দুল জলিল ও সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ আতিয়ার রহমানসহ পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ওসি শেখ আতিয়ার রহমান জানান, ইসরাফিলের নামে মুজিবনগর থানায় একাটি ও সদর থানায় ৫টি মামলা রয়েছে। সবগুলোই ডাকাতি, অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে। সে এলাকার চিহ্নিত চরমপন্থি ও ডাকাতদলের সদস্য হিসেবে পরিচিত। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে অথবা প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যা করে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে হত্যাকারী যেই হোক তাদের গ্রেফতারে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে আরো জানা গেছে, প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা অনেকেই সচক্ষে দেখেছেন। কিন্তু প্রাণভয়ে কেউ-ই কিলারদের না বলছেন না। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। সন্ধ্যার পর ওই এলাকায় নেমে এসেছে শ্মশানের নীরবতা। সম্ভাব্য হামলা কিংবা পাল্টা হত্যাকাণ্ডের আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এলাকার বাসিন্দারা।

লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছেন মেহেরপুর সদর থানার এসআই দুলু মিয়া। তিনি গতরাতে দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে জানিয়েছেন, নিহতের গলা, পিঠ, বুকসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ডান বগলের নিচে বোমাঘাতের চিহ্নও দেখা গেছে।

স্থানীয়সূত্রে আরো জানা গেছে, ইসরাফিলের পিতা বেশ কিছু দিন আগে মারা যান। চার মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে ইসরাফিল সবার ছোট। তিনি অবিবাহিত। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে কয়েকবার গ্রেফতার হয়ে হাজত খেটেছে। সে এলাকার চিহ্নিত একটি সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য হিসেবে কাজ করতো বলেও স্থানীয় কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে গতকাল বিকালে ময়নাতদন্ত শেষ হলে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে পুলিশ। নিহতের ভাই রফিজ উদ্দীন লাশ গ্রহণ করেন। পরিবারের পক্ষ থেকে আজ সদর থানায় একটি হত্যামামলা দায়ের করা হবে বলে জানিয়েছেন এসআই দুলু মিয়া।

Leave a comment