আলমডাঙ্গার ডামোশ গ্রামে মুদিদোকানে অবৈধভাবে রাখা পেট্রোলে আগুন
আলমডাঙ্গা ব্যুরো: পেট্রোলে আগুনে দগ্ধ আলমডাঙ্গা ডামোশ গ্রামের দরিদ্র বর্গাচাষি আত্তাপ আলী মোল্লা মারা গেছেন। পাঁচদিন ভোগান্তির পর গতকাল বুহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে তিনি মারা যান। এদিকে যে দোকানি তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করা হচ্ছে তারা এ পর্যন্ত আত্তাপ মোল্লার কোনো খোঁজখবর পর্যন্ত নেয়নি। উপরন্তু তারা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে ম্যানেজ করে বিষয়টি অন্যখাতে দেয়ার পাঁয়তারা করছে বলে নিহত আত্তাপের পরিবারের পক্ষে অভিযোগ করা হয়েছে। আত্তাপ মোল্লার লাশ আজ সকালে ডামোশ গ্রামে দাফন করা হতে পারে।
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলাধীন বেলগাছি ইউনিয়নের ডামোশ গ্রামের মাঝপাড়ার জিরু মণ্ডলের ছেলে জিন্দার আলীর মুদি দোকানে অবৈধভাবে পেট্রোল বিক্রি করা হয়। গত ৬ এপ্রিল রোববার সন্ধ্যায় দোকানের মাচায় গ্রামের বেশকিছু ব্যক্তি বসেছিলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মুদি দোকানের ল্যাম্পে তেল ঢালছিলেন মুদি দোকানি জিন্দার আলীর স্ত্রী রহিমা খাতুন। এ সময় ল্যাম্পের আগুন পেট্রোলে ধরে যায়। আগুন ছড়িয়ে পড়ে দোকানে। রহিমা খাতুন জ্বলন্ত ল্যাম্পটি ছুড়ে মারেন। ল্যাম্পটি গিয়ে পড়ে মাচায় বসে থাকা একই গ্রামের মৃত জুব্বার মণ্ডলের ছেলে দরিদ্র বর্গাচাষি আত্তাপ আলী মোল্লার (৪৫) লুঙ্গির কোছের ভেতরে। সাথে সাথে আত্তাপের পুরো শরীরের জামাকাপড়ে ধরে যায়। এতে তার শরীরের ৯০ ভাগ পুড়ে যায়। তাকে রক্ষা করতে গিয়ে একই গ্রামের খোয়াজ সরদারের ছেলে রতন সরদার (২৫) দগ্ধ হন। ঘটনার সময় মুদি দোকানের পেট্রোলে আগুন ধরে যায়। পুড়েও যায় কিছু মালামাল। দমকল বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং গুরুতরভাবে দুগ্ধ আত্তাপ আলী মোল্লাকে আলমডাঙ্গার ইউনাইটেড ক্লিনিকে নেয়া হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ওইদিন রাতেই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। ৭ এপ্রিল বার্ন ইউনিটে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হয়। সেখানে ৪দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় আত্তাপ মোল্লা মারা যান। সেখানেই তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। গতরাতেই তার লাশ চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশে নেয়া হয়। গতরাতেই লাশ নিজ গ্রাম ডামোশে পৌঁছুনোর কথা। আজ সকালে তাকে সেখানে দাফন করা হবে বলে পারিবারিকসূত্রে জানা গেছে।
এদিকে অবৈধভাবে মুদি দোকানে পেট্রোল বিক্রি না করলে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে আত্তাপ মোল্লা মারা যেতেন না বলে মন্তব্য করেছেন গ্রামের অনেকেই। এ ছাড়া আত্তাপ মোল্লা অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর থেকে দোকানি জিন্দার আলীর পক্ষ থেকে চিকিৎসার কোনো খোঁজখবর নেয়া হয়নি। ফলে ক্ষুব্ধ নিহত আত্তাপ মোল্লার পরিবার। তারা মামলা করার কথা ভাবছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। কিন্তু জিন্দার আলী স্থানীয় ক্ষমতাসীনদের ম্যানেজ করে ঘটনা ভিন্নখাতে দেয়ার পাঁয়তারা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
নিহত আত্তাপ আলী মোল্লা ডামোশ গ্রামের একজন দরিদ্র বর্গাচাষি। তিনি দু সন্তানের জনক। মেয়ে লাভলী খাতুন বিবাহিত। ছেলে লাভলু হক হারদী মীর শামসুল ইসলাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সিভিল ট্রেডের ছাত্র।