এমআর বাবু/সালাউদ্দীন কাজল: জীবননগর উপজেলার দু সহস্রাধিক ভুট্টাচাষি ব্র্যাকের সরবরাহকৃত উত্তোরণ ও উত্তোরণ-২ জাত এবং পেকটেকেম কোম্পানির সরবরাহকৃত পাইওনিয়ার ভি৯২ জাতের নিম্নমানের ভুট্টাবীজ জমিতে বপন করে ফলনে বড় ধরনের বিপর্যয় হয়েছে। এ কারণে ভুট্টাচাষিরা বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে উত্তোরণ ও পাইনিয়ার ভি৯২ জাতের ভূট্টা আবাদ করে খরচ না ওঠায় তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বড় ধরনের ফলন বিপর্যয়ের কারণে উৎপাদন খরচ তো ওঠেইনি বরং তার ওপর এনজিওদের ঋণ পরিশোধ করা নিয়ে মহাবিপাকে পড়েছেন এসব ভুট্টাচাষি। এ ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত দু সহস্রাধিক ভুট্টাচাষি বীজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন। এক্ষেত্রে বীজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান যদি ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ক্ষতিপূরণ না দেয় তাহলে উপজেলার সকল ভুট্টাচাষিকে পথে বসতে হবে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এবার ৬ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে উথলী, সেনেরহুদা, মৃগমারী, মনোহরপুর, খয়েরহুদা, দেহাটি, ডুমুরিয়া, আন্দুলবাড়িয়া, ধোপাখালী, কালা, কাশিপুর, অনন্তপুর, সন্তোষপুর, রাজাপুর, সিংনগর ও রায়পুর এলাকায় প্রায় ১ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে উত্তোরণ, উত্তোরণ-২ ও পাইনিয়ার ভি৯২ জাতের ভুট্টা ব্যাকটেরিয়াল লিভ লাইটার (বিএলবি) ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ফলনে বড় ধরনের বিপর্যয় হয়েছে।
চলতি মরসুমে কৃষকরা পাট ও ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় এ দুটি চাষে তাদেরকে বড় ধরনের লোকসান গুনতে হয়েছে। এ কারনে ধান ও পাটের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবং গত বছর ভুট্টার দাম বেশি পাওয়ায় উপজেলার কৃষকরা উচ্চ ফলনশীল জাতের ভুট্টা চাষের দিকে ঝুঁকেছেন। আর এ সুযোগে ব্র্যাক কোম্পানি উত্তোরণ ও উত্তোরণ-২ জাতের এবং পেকটেকেম কোম্পানি পাইনিয়ার ভি৯২ জাতের পুরনো ও নিম্নমানের বীজ নতুন প্যাকেটে ভরে তা চাষিদের মাঝে বিক্রি করেছে বলে চাষিরা অভিযোগ করেছেন।
উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের ভুট্টাচাষি আকিমুল ইসলাম জানান, ব্র্যাক কোম্পানির উত্তোরণ-২ জাতের ভূট্টা বিঘাপ্রতি ৪০ থেকে ৪৫ মন উৎপাদন হবে এমন প্রতিশ্রুতি দেয়ার কারণেই এ বীজ কিনে ২ বিঘা জমিতে বপন করেছিলাম। কিন্তু চারা বের হওয়ার সাথে সাথে নিয়ম অনুযায়ী সেচ, সার ও কীটনাশক ব্যবহারসহ সঠিকভাবে পরিচর্চা করার পরও গাছের বৃদ্ধি থেমে গেছে এবং গাছ একটু বড় হবার পরই ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে অধিকাংশ গাছ শুকিয়ে মরে গেছে। ভাইরাস আক্রান্তের কারণে প্রতিবিঘা ভুট্টাক্ষেতে সর্বোচ্চ ১০ মন ভুট্টা উৎপাদন হবে। অথচ ওইসব ক্ষেতের পার্শ্ববর্তী জমিতে অন্য জাতের ভুট্টা বিঘাপ্রতি ৪০ থেকে ৪৫ মন উৎপাদন হয়েছে। এ কারণে তার দাবি, ব্র্যাক পুরনো ও অতি নিম্নমানের বীজ সরবরাহ করেছে।
অনন্তপুর গ্রামের আলমগীর হোসেন বলেন, গত বছর ১ বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করে সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ১৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছিলো। সে আশায় এবার ৪ বিঘা জমিতে পাইনিয়ার ভি৯২ জাতের ভুট্টাচাষ করেছি। ঋণ নিয়ে ভুট্টাবীজ ক্রয়, সার ও সেচসহ প্রতিবিঘা জমিতে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু ভাইরাস আক্রান্তের কারণে ফলনে বিপর্যয় হওয়ার ফলে প্রতিবিঘা জমির উৎপাদিন ভুট্টা বিক্রি করে উৎপাদন খরচ উঠেনি। এখন চিন্তায় আছি ঋণের টাকা কীভাবে পরিশোধ করবো? তিনি অভিযোগ করে বলেন, পেকটেকেম কোম্পানি পাইনিয়ার ভি৯২ জাতের নিম্নমানের ভুট্টাবীজ কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করার কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে জীবননগর উপজেলার ব্র্যাকের বীজ সরবরাহকারী কর্মকর্তা মো. আব্দুল মতিনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আবহাওয়ার কারণে আগাম জাতের ভুট্টায় এ সমস্যা হয়েছে।