আখের রস বিক্রি করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়েছেন মেহেরপুরের আফতাব শেখ

মহাসিন আলী: আখের রস খান আর পরানটা জুড়াইয়া যান। এ গরমে আখের রস কার না প্রিয়? আখের রস বিক্রি করে অন্যের পরানটা জুড়িয়ে দিচ্ছেন ষাটোর্ধ্ব আফতাব শেখ। তিনি মেহেরপুর শহরের উপকণ্ঠ খন্দকারপাড়ার বাসিন্দা।

মেহেরপুর খন্দকারপাড়ার আফতাব শেখ হৃতদরিদ্র কৃষক। নিজের জমিজায়গা নেই। তাই অন্যের জমিতে কামলা (জোন) খাটতেন। জীবনের অনেকগুলো বছর পার হয়ে গেছে তার। মাঠের পরিশ্রম শরীরে আর সয়না। তাই তিনি ৫/৬ বছর আগে মাঠের কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। ৪ ছেলে ও ২ মেয়েসহ সংসারে রয়েছে ৮টি মুখ। কাজ ছাড়লেও সংসার তাকে ছাড়ে না। ৮ জনের মুখের আহার জোগাড় করতে হবে। তাইতো তিনি বেছে নেন আখের রস বিক্রি করার। পরিশ্রম কম আবার কামলা খাটার চেয়ে অনেক বেশি আয়। এখন তিনি এটাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। প্রতি ২ মাসে তিনি এক বিঘা জমির আখ মেড়ে রস বিক্রি করেন। এক বিঘা জমির আখ থেকে প্রায় ১ লাখ টাকার রস বিক্রি হয়। খরচ বাদ দিয়ে এতে তার লাভ আসে প্রায় ৫০ হাজার টাকা।

এক গ্লাস রস খাওয়ার সুযোগে এসব কথা হয় ষাটোর্ধ্ব আফতাব শেখের সাথে। তিনি আরও জানান, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার রাইপুর ও মড়কা এলাকায় ক্ষেতের উৎপাদিত আখ বিঘা হিসেবে কিনে নেন তিনি। প্রতিবিঘা আখ কিনতে তাকে দিতে হয় প্রায় ৪০ হাজার টাকা। ওই আখ তিনি ক্ষেত থেকে দু মাসে সরিয়ে নেবেন বলে চুক্তিবদ্ধ হন। রাস্তা অনেক দূর তাই তিনি প্রতি ৪-৫ দিন পরপর ক্ষেত থেকে ১০-১৫ মণ করে আখ কেটে আনেন। মেহেরপুর শহরে তিনি আখ থেকে রস বের করে প্রতি গ্লাস ১০ টাকা দামে বিক্রি করেন। চৈত্র-বৈশাখ মাসে রসের চাহিদা খুব বেশি। তিনি শহরের ফুটপাথের পাশে দাঁড়িয়ে রস বিক্রির পাশাপাশি আখ থেকে রস বের করে দোকানে দোকানে দোকানিদের খাইয়ে বেড়ান। প্রতি গ্লাস রসের দাম তিনি ১০ টাকা ঠিকমতোই বুঝে পান। তিনি জানালেন, হিসেব মতে সারা বছরই আখ পাওয়া যায়। সারা বছরই তিনি রস বিক্রি করেন। তবে রমজান মাসে রোজাদারদের কাছে এ রসের চাহিদা থাকে খুবই বেশি। ব্যবসা শুরু প্রথম দিকে তিনি ঠেলাগাড়িতে করে আখ নিয়ে বেড়াতেন। আর ঠেসার মেশিন (আখ মাড়াই মেশিন) হাতে ঘুরিয়ে আখ থেকে রস বের করতেন। সেদিন ফুরিয়েছে। তিনি শ্যালোইঞ্জিনচালিত ভ্যান নিয়েছেন। ভ্যানেই সেট করেছেন আখ মাড়াই করার ঠেসার মেশিন। তার একই শ্যালোইঞ্জিন দিয়ে আখ মাড়াই করে রস সংগ্রহ করা চলে। অন্যদিকে তিনি তার ইঞ্জিনচালিত ভ্যানে আখ, বালতি ভর্তি পানি, প্লাস্টিকের কয়েকটি চেয়ারসহ আনুসাঙ্গিক জিনিষপত্র বইয়ে বেড়ান শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।

তিনি আরো জানান, বর্তমানে তার এ পেশা বেছে নিয়েছে তার এক ছেলে সুমন। এছাড়া তার স্ত্রী আখ চাছা-ছেলা ও ধোয়া-মোছার কাজটি করে দেয়। তিনি মনে করেন, এ কাজটি বেছে না নিলে এ বুড়ো বয়সে হয়তো তাকে ভিক্ষার ঝুলি কাঁধে নিয়ে অন্যের দ্বারে দ্বারে বেড়াতে হতো। এ কাজে সংসারে সচ্ছলতা ফিরে পেয়ে তিনি বেজায় খুশি।

Leave a comment