দামুড়হুদার কোচিংবাজ ইংরেজি শিক্ষক হাসিবুল হাসান ছালামের প্রতারণা

য়া প্রশ্নপত্র দিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ

আলম আশরাফ: দামুড়হুদার গুলশানপাড়ার ইমরান হোসেনের ছেলে হাসিবুল হাসান ছালামের বিরুদ্ধে চলতি এইচএসসি পরীক্ষায় ইংরেজি বিষয়ে ভুয়া প্রশ্নপত্র দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। অবশ্য অভিযুক্ত শিক্ষক নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেছেন, আমি কারো সাথে প্রতারণা করিনি। আমি যাদের কাছে টাকা নিয়ে ছিলাম তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন টাকা ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। এলাকার অভিভাবক মহল ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিকট ওই প্রতারক শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলেছে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার গুলশানপাড়ার বাসিন্দা ইমরান হোসেনের ছেলে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অনার্স (ইংরেজি) শেষবর্ষের ছাত্র হাসিবুল হাসান ছালাম তার নিজ বাড়িতে রংধনু ইংরেজি কোচিং সেন্টার নাম দিয়ে বেশ কিছু দিন যাবত কোচিং ব্যবসা করে আসছে। সম্প্রতি সে একই নামে চুয়াডাঙ্গা সদরেও একটি কোচিং সেন্টার খুলেছে। চলতি এইচএসসি পরীক্ষার গতকাল মঙ্গলবার ছিলো ইংরেজি পরীক্ষা। গত রোববার চতুর শিক্ষক ছালাম বেশকিছু পরীক্ষার্থীকে জানায়, চলতি এইচএসসি পরীক্ষার ইংরেজি প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে এবং সে ওই প্রশ্নপত্র হাতে পেয়েছে। সে এ প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিনিময়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের কাছে জন প্রতি ৫শ টাকা দাবি করে। বিষয়টি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন পরীক্ষর্থীদের মধ্যে। হুমড়ি খেয়ে ছুটে আসে শিক্ষক ছালামের কাছে। ৫শ টাকার বিনিময়ে প্রশ্নপত্র হাতে নিয়ে মহাখুশি পরীক্ষার্থীরা। কিন্ত শিক্ষক ছালাম যে প্রশ্নপত্র ফাঁসের নামে প্রতারণা করছে তা ঘুর্নাক্ষরেও বুঝতে পারেনি পরীক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার ছিলো ওই ইংরেজি পরীক্ষা। ৫শ টাকার বিনিময়ে আগেভাগেই প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়া পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্র হাতে পেয়েই চক্ষু চড়কগাছ। একি? ছালাম স্যারে কাছ থেকে ৫শ টাকার বিনিময়ে যে প্রশ্নপত্র পাওয়া গিয়েছিলো তার সাথে মূলবোর্ড প্রশ্নের বিন্দুমাত্র মিল নেই। ফলে যেনতেন ভাবে পরীক্ষা শেষ করেই  কয়েক পরীক্ষার্থী তেড়ে যায় ওই শিক্ষক ছালামের কাছে। টাকা ফেরতও নিয়েছে বলে জানা যায়।

ওই শিক্ষকের পিতা ইমরান হাসেন বলেন, আমার ছেলে টাকা নিয়েছে তারা দিয়েছে কেন? অপরাধ করলে শুধু আমার ছেলে করেনি তারাও করেছে। এ বিষয়ে শিক্ষক ছালাম বলেন, পরীক্ষার্থীরা প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি আমাকে জানায় এবং তা ম্যানেজ করার জন্য আমাকে অনুরোধ করে। তাই আমি এ বিষয়ে অপর এক শিক্ষকের কাছে শরণাপন্ন হলে তিনি আমার কাছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। সে কারণেই আমি ওই প্রশ্নপত্র বিক্রি করে কয়েকজনের নিকট থেকে টাকা নিয়ে ছিলাম। তার মধ্যে ৬/৭ জনের টাকা ফেরতও দিয়েছি। বিষয়টি গতকাল বিকেলে এলাকায় জানাজানি হলে ভুক্তভোগীরা এবং তাদের অভিভাবকেরা প্রশাসনের নিকট ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। এ শিক্ষকের প্রতরণা আরেকটি বিষয় হলো তার কোচিং সেন্টারের নামকরণ। চুয়াডাঙ্গা সদরে কলেজপাড়ায় অবস্থিত স্বনামধন্য শিক্ষাদান কেন্দ্র রংধনুর নামের সাথে মিল রেখে কোচিংবাজ শিক্ষক ছালাম তার প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করেন ‘রংধনু ইংরেজি কোচিং সেন্টার’। তিনি চুয়াডাঙ্গা সদরের কলেজ রোডেও এ নামে প্রতারণামূলক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে চুয়াডাঙ্গা সদরের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা গত কয়েকদিন ধরে প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজবে বিভ্রান্ত হচ্ছে। গতকাল ইংরেজি ১ম পত্রের ক সেট, খ সেট ও গ সেট নামে যে প্রশ্নপত্র বাজারে ফাঁস হয়েছে তার সাথে মূল প্রশ্নপত্রের কোনো মিল ছিলো না। শিক্ষার্থীরা এ প্রশ্নপত্র মোবাইলে ম্যাসেজ, ফেজবুক, ইন্টারনেট কিংবা প্রতারকচক্রের মাধ্যমে হাতে পেয়ে যাচ্ছে যা সবই ভুয়া। মূলত এ প্রশ্নপত্রগুলো ছিলো বিগত বিভিন্ন বোর্ড প্রশ্নের সংযোজিত রূপ। বাংলা ১ম পত্র পরীক্ষার আগের দিন রাতেও শিক্ষার্থীরা প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজবে বিভ্রান্ত এবং প্রতারিত হয়েছে। ওই দিন ক সেট নামে যে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছিলো, সে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছিলো মির্জাপুর ক্যাডেড কলেজ, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ ও রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের ২০১২ সালের র্নিবাচনী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র থেকে। তাই সচেতন অভিভাবক এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।