বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের এবারও এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে না বলে খবর রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেছেন, নতুন অর্থবছরের বাজেট ও এর ব্যবস্থাপনা নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নতুন এমপিও খাতে অর্থ বরাদ্দের আশ্বাস পাওয়া যায়নি। শুধু তাই নয়, সম্ভাব্য এমপিওভুক্তদের বেতন-ভাতা চালু রাখার প্রয়োজনীয় অর্থের নিশ্চয়তাও পাওয়া যায়নি। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা-কর্মচারীরা তাদের এমপিওভুক্তির জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। তারা বেশ কয়েকবার ঢাকাতে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শনও করেছেন। তাদের আশ্বাসও দেয়া হয়েছে অনেক। এমনকি জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে সংসদ সদস্যরা এমপিওভুক্তি ইস্যুতে জোরালো ইতিবাচক বক্তব্য রেখেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এমপিওভুক্তি প্রত্যাশী শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি পূরণ হয়নি। কারণ হিসেবে অর্থের অভাবের দিকে আঙুল তোলা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে আসলেই কি অর্থের এতো অভাব? গত বছর শিক্ষার সমগ্র প্রাথমিক স্তরের জাতীয়করণ সম্পন্ন হয়েছে। এ বছর প্রাথমিক স্তরে শিক্ষকদের গ্রেডের উন্নতি ঘটানো হয়েছে। অথচ এসব ক্ষেত্রে অর্থের অভাব হয়নি বা হচ্ছে না, তাহলে কি এমপিওভুক্তির প্রশ্নে একটি মনস্তাত্ত্বিক বিভাজন কাজ করছে? স্মর্তব্য, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করেছিলেন। আর ১৯৮০ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান মাধ্যমিক স্তরে ৫০ শতাংশ শিক্ষা-কর্মচারীদের এমপিওভুক্ত করেছিলেন। শিক্ষার প্রাথমিক স্তরকে যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে, এটাই কি এর কারণ? অর্থের অভাব যদি আমরা মেনে নেইও, তাহলেও প্রশ্ন থেকে যায়, এ অভাব থাকবে কতোদিন। নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা আপস করতে রাজি থাকবেন, যদি তারা দেখেন যে তাদের এমপিওভুক্তির ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট একটি রূপরেখা রয়েছে। অর্থের অভাবের কারণে সিনিয়রিটি ভিত্তিতে যদি ধাপে ধাপে এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া চালু রাখা যায়, তাহলে শিক্ষক-কর্মচারীরা আপস করবেন নিশ্চয়ই। কিন্তু বাস্তব অবস্থা হচ্ছে, এমপিওভুক্তির ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো রূপরেখা নেই এবং নন-এমপিওভুক্তরা এক দীর্ঘমেয়াদী হতাশার মধ্যে দিনযাপন করছেন। আমরা মনে করি, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষাদান প্রক্রিয়ার মান এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাদান প্রক্রিয়ার মানের চেয়ে কম কিছু নয়। এ বিবেচনায় এ দুয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে আর্থিক ক্ষেত্রে যে বৈষম্য করা হচ্ছে, তা দুঃখজনক। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড এটি বোধ করি কথার কথা হিসেবেই উচ্চাচারণ করি আমরা তা না হলে টাকার অভাব শুধু শিক্ষা ক্ষেত্রেই দেখা দেবে কেন? হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প কি বাস্তবায়িত হচ্ছে না দেশে? অবশ্যই হচ্ছে বলে সরকার গর্বও করছে। অভাব হচ্ছে শুধু মাধ্যমিক স্তরে। আমরা মনে করি, শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া অনুমতি দেয়ার পর সরকারের দায়িত্ব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা প্রদান করা বছরের পর বছর আর্থিক সংকটে ফেলে রাখার কোনো যুক্তি সরকারের থাকতে পারে না। আমরা আগামী অর্থ বছরের বাজেটে শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির দাবি জানাচ্ছি।