শুধু পাসে চলবে না, হতে হবে আলোকিত : রাষ্ট্রপতি

স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ হাজার শিক্ষার্থীকে সনদ দেয়ার অনুষ্ঠানে ‘সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব গড়ার শিক্ষা চাই’ উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। তিনি বলেছেন, সার্টিফিকেট সর্বস্ব শিক্ষা নয়, নোট মুখস্ত করে পাস করার শিক্ষা নয়, আলোকিত মানুষ হওয়ার শিক্ষা চাই, সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব গড়ার শিক্ষা চাই।

গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮তম সমাবর্তনে সভাপতির ভাষণে একথা বলেন দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির আচার্য আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতির সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ (সার্ন) এর মহাপরিচালক রল্ফ ডিটে হয়া। সমাবর্তনে তাকে সম্মানসূচক ডক্টর অফ সায়েন্স ডিগ্রি দেয়া হয়। এ সমাবর্তনে মোট ৮ হাজার ৩১২ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন ডিগ্রি প্রদান করেন রাষ্ট্রপতি। এর মধ্যে পিএইচডি পান ৩৮ জন, এমফিল ২৫ জন, এমডি অ্যান্ড এমএস ৩৪ জন। বিশেষ কৃতিত্বের জন্য স্বর্ণপদক দেয়া হয় ৩৪ জনকে।

ডিগ্রিপ্রাপ্তদের মধ্যে ৪ হাজার ১৫ জন পুরুষ এবং নারী ৪ হাজার ২৯৭ জন। জাতির প্রত্যাশা পূরণে ছাত্র-শিক্ষক অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান আবদুল হামিদ। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণাকে গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। একটি জ্ঞাননির্ভর বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এই ঐতিহ্যকে লালন করতে গবেষণার ক্ষেত্র আরো সম্প্রসারিত করতে হবে। গবেষণার পাশাপাশি সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, খেলাধুলার চর্চা বাড়াতে হবে। শিক্ষায় মানবপ্রেম, মনুষ্যত্ব, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, জ্ঞান-প্রযুক্তি নির্ভর কৌশলের সম্মিলন ঘটানোর আহ্বানও জানান রাষ্ট্রপতি।

হাজার দুয়ারি আলোকিত রাজ্যে প্রবেশের মাধ্যম হোক শিক্ষা। কুসংস্কার আর অন্ধকার কূপমণ্ডুকতায় আবিষ্ট বদ্ধঘরের খোলা জানালাটি হোক শিক্ষা। যা কিছু সংকীর্ণ, শিক্ষা আমাদের শেখাবে তা পরিহার করতে। মানুষে মানুষে সম্মেলন ঘটানোর শিক্ষাই আমরা চাই। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংসতায় দুই ছাত্রের মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে ছাত্র সংগঠনগুলোকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে ইতিবাচক রাজনীতি চর্চার আহ্বানও জানান বর্ষীয়ান রাজনীতিক আবদুল হামিদ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জন্মলগ্ন থেকে অ্যাকাডেমিক এক্সিলেন্স সৃষ্টির ক্ষেত্রে যথাযথ ভূমিকা পালন করে এসেছে, নেতৃত্ব দিয়েছে এ অঞ্চলের জ্ঞানচর্চার সামগ্রিক উন্নয়নের, তেমনি একই সাথে এখানকার ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারীরা বরাবর নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রগতির লড়াইয়েও। তাই সঙ্গত কারণেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জাতির প্রত্যাশা অনেক।

জাতীয় পর্যায়ে ধর্মান্ধতা, প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দেশের প্রাচীনতম এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করেন রাষ্ট্রপতি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন হলেও ১৯৭৫ এর ১৫ অগাস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে রাষ্ট্রকে নিয়ে যাওয়ার  চেষ্টার কথা মনে করিয়ে দেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধে আমরা বিজয়ী হলেও এই প্রতিবিপ্লবের (১৫ আগস্ট) ফলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ও বিপক্ষের শক্তির লড়াই, প্রগতি ও প্রতিক্রিয়ার লড়াই, শুভ ও অশুভের লড়াই, ধর্মপরায়ণতা ও ধর্মান্ধতার লড়াই আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে শেষ হয়ে যায়নি।

বর্তমান প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে আবদুল হামিদের আহ্বান, আজকের লড়াইয়ে শুভ শক্তি জয়ী না হলে রাষ্ট্র হিসেবে, জাতি হিসেবে, আমরা আবার পিছিয়ে যাব।

আমরা আবার পরিচিতি লাভ করব উগ্রবাদী, সন্ত্রাসী, ধর্মান্ধ, পশ্চাৎপদ জাতি হিসেবে। মুখ থুবড়ে পড়বে আমাদের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতির চাকা। জাতি হিসেবে আমরা হব নিন্দিত। সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, উপ উপাচার্য অধ্যাপক নাসরীন আহমাদও বক্তব্য রাখেন।

আরেফিন সিদ্দিক বলেন, শিক্ষার মান নিশ্চিত করার দায়িত্ব শিক্ষকের। মেধাবী শিক্ষার্থী মেধাবী শিক্ষক হতে পারেন। আমরা সেভাবেই শিক্ষক নিয়োগের চেষ্টা করি। কিন্তু প্রক্রিয়াটি অনেক যান্ত্রিক বলে তা সীমাবদ্ধ ও সমালোচনার উর্ধ্বে নয়। শিক্ষকদের আর্থিক নিশ্চয়তার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি প্রত্যাশা করেন তিনি।