উচ্চ আদালতে সশরীরে হাজিরা থেকে রেহাই চান সচিবরা

এমপি চেয়ারম্যান ও ইউএনও দ্বন্দ্ব নিরসনে সচিবদের তাগিদ

 

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার অনুসরণ করে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে সচিবদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। একই সাথে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে এসব পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নেরও নির্দেশ দেন তিনি। গতকাল সোমবার দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সচিবদের সভায় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন।

অন্যদিকে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার তাগিদ দিয়েছেন সচিবরা। তারা বলেছেন, এ জন্য বিদ্যমান আইনের বিধান কার্যকর ও প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা প্রয়োজন। সচিবরা বলছেন, এমপি-উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনওদের মধ্যে সমন্বয় দরকার। তাদের মধ্যে বিরোধ হলে উপজেলা ব্যবস্থা দুর্বল হবে। সচিবরা বলেছেন, জেলা পরিষদও নির্বাচিত প্রতিনিধির দ্বারা পরিচালিত হওয়া উচিত। এজন্য সেখানে নির্বাচন প্রয়োজন।

তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেয়ার পর এটিই ছিলো সচিবদের সাথে প্রধানমন্ত্রীর প্রথম বৈঠক। দুপুর সাড়ে ১২টায় শুরু হওয়া এ সভা বিকাল সোয়া ৪টায় শেষ হয়। পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা সাংবাদিকদের বৈঠকে আলোচিত বিষয়বস্তু নিয়ে অবহিত করেন।

সচিবদের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিভিন্ন মামলায় উচ্চ আদালতে সশরীরে হাজিরা নিয়ে ক্ষোভ জানালেন সচিবরা। উচ্চ আদালত যেকোনো মামলায় সচিবদের সশরীরে হাজিরার জন্য ডাকেন। এতে সাধারণ জনগণের কাছে ভুলভাবে তথ্য যায়- যা মাঠ প্রশাসনে প্রভাব ফেলে। আমরা মনে করি সরকারের একজন সচিবকে ডাকার আগে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য তাকে নোটিশ করা উচিত। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আপনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি। সচিবরা বলেন, আদালত অবমাননা আইন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সামান্য রক্ষাকবচ হিসেবে করা হয়েছিলো। এটারও এখন কার্যকারিতা নেই। তাই সবসময় ভয়ে ভয়ে আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সচিব সভায় প্রসঙ্গটি নিয়ে আলোচিত হয়। বৈঠকে ৬১ জন সচিব উপস্থিত ছিলেন, যাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ২৩ জন। ৭ জন সচিব উচ্চ আদালতে সশরীরে হাজিরা থেকে রেহাই পাওয়ার বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন। সচিবদের বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী সরকারের যেকোনো বড় সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে গণশুনানি করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সব বড় সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। এজন্য গণশুনানি করার আহ্বান জানাচ্ছি।

উচ্চ আদালত সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উচ্চ আদালত যেমনিভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছে তেমনি আপনাদেরও আপনাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে হবে। অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে আদালতের বিষয়গুলো সমাধা করতে পারেন। বেলা সাড়ে ১২টা থেকে শুরু হয়ে সোয়া ৪টা পর্যন্ত চলা এ সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিল বকেয়া রয়েছে। এসব বিল পরিশোধের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। বিল পরিশোধে প্রয়োজনে অর্থ মন্ত্রণালয় প্রণোদনা দেবে। প্রাধিকার সহকারে বকেয়া পরিশোধ করতে হবে। সভাশেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে সুশাসন সংক্রান্ত আলোচনা হয়েছে। সচিবদের ব্যক্তিগত স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় ছিল না। সচিবরা প্রধানমন্ত্রীর সাথে সরাসরি খোলামেলা কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী দিকনির্দেশনা ও গাইডলাইন দিয়েছেন। নতুন নতুন প্রযুক্তি-জ্ঞানকে আয়ত্তে নিয়ে তার ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রশিক্ষণের ওপরও জোর দিয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নতুন টেকনোলজি জ্ঞানের যে প্রসার ঘটছে তা আয়ত্তে নিয়ে ব্যবহার করা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা বাড়ানোর কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সভায় সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিদ্যুৎ ও ভূমির বকেয়া বিল নিয়ে কথা হয়েছে। সিভিল সার্ভিসে প্রশিক্ষণ বাড়ানোর ওপরও গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন ও পরিবীক্ষণের ওপর জোর দিয়েছেন। বিভিন্ন প্রকল্পের সাথে জড়িত সবাই কাজ করছে কি-না, সেটি পর্যবেক্ষণের জন্য বলেছেন। প্রকল্প বাছাই করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, উপকারভোগী যাতে বাদ না পড়ে। প্রকল্প গ্রহণকালে আন্তঃমন্ত্রণালয় আলোচনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করছি। এছাড়াও যথাযথভাবে প্রকল্প বাছাইয়ের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। সচিব সভায় ‘লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা’ আয়োজনের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এ আয়োজনের মাধ্যমে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের  চেতনার উন্মোচন ঘটেছে। এটাকে ধরে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এতে সিভিল সার্ভিস অ্যাক্ট প্রণয়নের কাজ ত্বরান্বিত করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা বলেন, আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। প্রধানমন্ত্রী কিছু অনুশাসন দিয়েছেন, সেগুলো পরিপালন করে বাস্তবায়ন করবো। সচিবদের সাথে আলোচনায় খাদ্যে ভেজালের বিষয়টি উঠে এসেছে। খাদ্যে ভেজাল নিয়ন্ত্রণে সচেতনতার পাশাপাশি ইনফোর্সমেন্টের ওপর জোর দেন তিনি। নিবিড় পর্যবেক্ষণেরও নির্দেশ দেন। প্রয়োজনে এ কাজে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সংযুক্ত করার নির্দেশ দেন। নির্বাচনের আগে, পরে জনপ্রশাসনের ভূমিকার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক ধারাকে অব্যাহত রাখার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।