সুখ সাগর পেঁয়াজ আবাদে মেহেরপুরের চাষিদের সুখ

মাজেদুল হক মানিক/শফি উদ্দীন: ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানিতে দেশীয় পেঁয়াজের দর কমে যাওয়ায় লোকসানের আশঙ্কা করছেন মেহেরপুরের পেঁয়াজ চাষিরা। তবে চাষি ও কৃষি বিভাগ বলছে উচ্চ ফলনশীল সুখ সাগর জাতের পেঁয়াজ সারাদেশে চাষ করতে পারলে আমদানি বন্ধ করে বিদেশে পেঁয়াজ রফতানি করা সম্ভব হবে। এতে চাষিরা বেশি লাভবান হবেন। অবশ্য সে লক্ষ্যে মসলা গবেষণা কেন্দ্রে গবেষণাও চলছে। সুখ সাগর ও তাহেরপুরি জাতের পেয়াঁজের চাষ করে থাকেন মেহেরপুরের চাষীরা। তবে সুখ সাগর জাতের চাষ বেশি। বছর দশেক আগে ভারত থেকে সুখ সাগর পেঁয়াজের বীজ সংগ্রহ করে  মুজিবনগর উপজেলার কৃষকরা চাষ শুরু করেছিলেন। গত কয়েক বছর ধরে এ জেলার কৃষকরা নিজস্ব প্রযুক্তিতেই সুখ সাগর পেঁয়াজের বীজ তৈরি করে চাষ সম্প্রসারণ করেছেন। দেশীয় পেঁয়াজের চেয়ে আকারে দু থেকে তিন গুণ বড় এ পেঁয়াজ। বিঘায় ফলন ১৫০-২০০ মণ। পেঁয়াজের মরসুমে জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন বাজার দখল করে মেহেরপুরের সুখ সাগর পেঁয়াজ। প্রতি বছর ভারত থেকে যে পেঁয়াজ আমদানি করা হয় তার বেশির অংশ এ সুখ সাগর জাতের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেব মতে, চলতি মরসুমে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৫৫ হেক্টর জমিতে। যার লক্ষ্যামাত্রা ছিলো ১ হাজার ৭শ ৩১ হেক্টর। আবাদ হওয়া জাতের মধ্যে সুখ সাগর বেশি। এদিকে সুখ সাগর জাতের পেঁয়াজ আবাদ দেশব্যাপি ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বারি গাজিপুরে গবেষণা চলছে। গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, দেশে শীতকালীন পেঁষাজ চাষ বেশি। গ্রীষ্মকালে পেঁয়াজ যে পরিমাণে চাষ হয় তাতে চাহিদা পূরণ হয় না। তাই সুখ সাগর জাতের পেঁয়াজের সাথে অন্যজাত সঙ্করায়ণ করে গ্রীষ্মকালে চাষের উপযোগী করার লক্ষ্যে গবেষণা চলছে। বারি পেয়াজ-২, ৩ ও ৫ জাতের ফসল একমাসের বেশি স্টোরেজ করা যায় না। তাই যদি দু থেকে তিন মাস ধরে স্টোরেজ করে রাখার মতো জাত উদ্ভাবন করা যায় তাহলে সঙ্কটের সময় চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে।

ওই কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে জানান, দেশীয় তাহেরপুরি জাতের সাথে সুখ সাগর পেঁয়াজের সঙ্করায়ণ করে উচ্চ ফলনশীল জাত সৃষ্টির জন্য গবেষণা চলছে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী দু বছরের মধ্যে ওই জাত পরীক্ষামূলকভাবে আবাদ সম্ভব হবে। তিনি আরো বলেন, সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজের সংকট থাকে। ওই সময়টাতে চড়া দামে পেঁয়াজ কিনতে হয়। তাই উচ্চ ফলনশীল জাতের পেঁষাজ আবাদ দেশব্যাপি ছড়িয়ে দেয়া এবং গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ আবাদ বৃদ্ধি করতে পারলে দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব।

‌‌                মুজিবনগর উপজেলার মানিকনগর গ্রামের সুখ সাগর পেঁয়াজ চাষি আরেফ উদ্দীন জানান, নতুন পেঁয়াজ ওঠার সময় যদি ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকে তাহলে চাষিদের নায্য মূল্য নিশ্চিত হয়। কিন্তু প্রতি বছর এ সমস্যায় চাষিরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, সুখ সাগর জাতের পেঁয়াজ চাষ সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে না। উপরন্ত বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। কৃষকদের দাবির সাথে একাত্মত্বা প্রকাশ করে মুজিবনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোফাখখারুল ইসলাম সরকারিভাবে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে এ জাত সম্প্রসারণ করার দাবি জানান।