প্রতারিত সেলস ম্যানেজার ও ফিল্ড অফিসাররা আটকে রাখে প্রতারক এরিয়া ম্যানেজার মুন্সিগঞ্জের জিনারুলকে

সেলস অফিসার ও ফিল্ড ম্যানেজার নিয়োগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছে আলমডাঙ্গা আনন্দধামের এমপিএল ফাউন্ডেশন ওরফে মিল্লাত কোম্পানি

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে সেলস অফিসার ও ফিল্ড অফিসার নিয়োগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছে আলমডাঙ্গা শহরের আনন্দধামের এমপিএল ফাউন্ডেশন ওরফে মিল্লাত কোম্পানি। সেলস অফিসাররা গা ঢাকা দিলেও এলাকায় কর্মরত প্রতারিত ফিল্ড অফিসাররা গতকাল সন্ধ্যায় চড়াও হয় এরিয়া ম্যানেজারের ওপর। পরে এলাকাবাসীর মধ্যস্থস্ততায় দেড় মাসের মধ্যে টাকা ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মুক্ত হয় এরিয়া ম্যানেজার জিনারুল ইসলাম।

জানা গেছে, প্রায় ২ মাস আগে আলমডাঙ্গা শহরের আনন্দধামে এমপিএল ফাঊন্ডেশন ওরফে মিল্লাত কোম্পানি অফিস খুলে বসে। ওই অফিসের এরিয়া ম্যানেজার জিনারুল ইসলাম। জিনারুল ইসলাম আলমডাঙ্গা মুন্সিগঞ্জের আলী হোসেনের ছেলে। গর্ভবতী মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য সেবা দেয়া তার এনজিওর কাজ। তিনি এ কাজে প্রথমে প্রায় ২০ জন ফিল্ড অফিসার পদে মহিলা নিয়োগ দেন। নিয়োগ প্রাপ্তরা সকলেই দরিদ্র। ইবি থানার শঙ্করদির আবুল বাশারের মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, শিক্ষাগত যোগ্যতা ৮ম শ্রেণি পাস প্রায় ২০/২২ জন মহিলাকে প্রত্যেকের নিকট থেকে চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনা বাবদ ৫ হাজার টাকা করে উৎকোচ নিয়ে ফিল্ড অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনিও একজন ফিল্ড অফিসার। প্রায় ২ মাস চাকরি করেছেন। অথচ বেতন পাননি এক টাকাও। প্রতি মাসে বেতন দেয়ার কথা ২ হাজার ৯শ টাকা করে। ইবি থানার দীঘা গ্রামের শাহাবুদ্দীনের স্ত্রী বুলবুলি খাতুন। তিনিও ফিল্ড অফিসার।

বুলবুলি জানায়, অনেকে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মতামতকে উপেক্ষা করেই অভাবের কারণে বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন করে টাকা জোগাড় করে ঘুষ দিয়ে এ চাকরি নিয়েছেন। কোম্পানির প্রতারণার জন্য তাদের বৈবাহিক জীবনে বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি মাতিন নামের এক প্রতিবন্ধীও কষ্টেশিষ্টে ঘুষের টাকা জোগাড় করে চাকরি নেয়। প্রতিদিন ফিল্ড অফিসারেরা বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে সদস্য জোগাড় করে। সদস্য ফির হাজার হাজার টাকা এরিয়া ম্যানেজার জিনারুলের নিকট জমা দিতো। কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেলে এ সকল লাখ লাখ টাকা কীভাবে তারা সদস্যদের ফেরত দেবেন? একাধিক ফিল্ড অফিসার বলেছে, গত ২ মাসে এক টাকাও বেতন দেয়া হয়নি ফিল্ড অফিসারদের। অথচ এরই মাঝে এরিয়া ম্যানেজার ফিল্ড অফিসারদের প্রস্তাব দেয়- ফিল্ড অফিসারের মধ্যে যারা ২০ হাজার করে টাকা দেবেন, তাদেরকে কোম্পানি সেলস ম্যানেজার পদে নিয়োগ দেবেন। সেলস ম্যানেজারের বেতন দেয়া হবে ১০ হাজার করে। এ মোটা বেতনের প্রলোভনে পড়ে উপজেলার পোয়ামারি গ্রামের রকিবুল ইসলাম, একই গ্রামের আয়ুবের ছেলে মামুন, পার-দুর্গাপুরের লতা খাতুন ও গোপালপুরের নাঈম ২০ হাজার করে টাকা দিয়ে সেলস ম্যানেজার হন।

গত ২ মাস যাবত বেতন না পেয়ে অধৈর্য হয়ে ওঠে এ এনজিওর ফিল্ড অফিসার ও সেলস ম্যানেজাররা। তাদের ক্রমাগত চাপের মুখে এরিয়া ম্যানেজার জিনারুল ঢাকাস্থ হেড অফিসে যান। কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর পুনরায় গতকাল শনিবার অফিস খোলার সংবাদ পেয়ে ফিল্ড অফিসার ও সেলস ম্যানেজারেরা জড়ো হয় এনজিও অফিসে। এ সময় এরিয়া ম্যানেজার জিনারুল ইসলাম তাদের জানান, এনজিওর চেয়ারম্যান মিয়া আব্দুল ওয়াজেদের দেখা পাননি তিনি। তার মোবাইলও বন্ধ। এ কথা শুনে ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে ফিল্ড অফিসারেরা ও সেলস ম্যানেজাররা। তোপের মুখে পড়ে এরিয়া ম্যানেজার আরও জানায়, তাদের ঢাকাস্থ তেজগাঁর নবসৃষ্ট প্লট-১ এ অবস্থিত হেড অফিসটিও বন্ধ হয়ে গেছে। এ কথা শোনার পর তারা আটকে রাখে এরিয়া ম্যানেজার জিনারুলকে। এরই এক পর্যায়ে স্থানীয় গণ্যমাণ্য ব্যক্তির মধ্যস্থতায় সিদ্ধান্ত হয় সেলস ম্যানেজারদের নিকট নেয়ার উৎকোচের টাকাসহ দেড় লাখ টাকা ফেরত দিতে হবে। এ সময় জিনারুলের পিতা আলী হোসেন উপস্থিত থেকে দেড় লাখ টাকা ফেরতের সিদ্ধান্ত মেনে নেন। তবে এ টাকা পরিশোধের জন্য তিনি দেড় মাস সময় চেয়ে নিয়েছেন। এ সিদ্ধান্ত উভয় পক্ষে মেনে নেয়ার পর জিনারুল ইসলামকে রাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে চূড়ান্ত প্রতারণার স্বীকার হলেন ফিল্ড অফিসার ও সাধারণ সদস্যরা। এ ব্যাপারে তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।