২২ চেয়ারম্যান প্রার্থীর বর্জন

 

স্টাফ রিপোর্টার: কেন্দ্র দখল, ভোট জালিয়াতি, প্রকাশ্যে সিল মারা, এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ এনে দেশের বিভিন্ন উপজেলার ২২ জন প্রার্থী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।

গফরগাঁও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৮০টি কেন্দ্র দখল ও ভোট জালিয়াতি, এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া ও ভোটারদের মারধর করার অভিযোগে প্রশাসনের কাছে প্রতিকার না পেয়ে নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মুশফিকুর রহমান। গতকাল দুপুর ১টায় তার নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জন করে তিনি পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল কাইয়ুম ও ইঞ্জিনিয়ার আজিম উদ্দিন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী তুহিনুর সুলতানা তুহীন ও সৈয়দা রোকেয়া আফরোজা শিখাসহ সকলেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।

নির্বাচনে কারচুপি ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে চান্দিনায় ১৯ দল সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী এলডিপি নেতা অধ্যাপক আবু তাহের (টেলিফোন) ও ১৯ দলের বিদ্রোহী বিএনপি দলীয় মফিজুল ইসলাম ভূঁইয়া (দোয়াত-কলম) এবং মুরাদনগর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত গোলাম কিবরিয়া সরকারসহ দুই উপজেলার তিন প্রার্থী দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জন করেন।

অষ্টগ্রাম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় এমপি’র নেতৃত্বে ৩৫ কেন্দ্রে ভোট ডাকাতির অভিযোগ করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী কাজী মনসুরুল কাদের টুটুল। ভোট চলাকালে বেলা ২টার দিকে তিনি ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি ভোটের মাঠে এমপি’র উপস্থিতিতে প্রশাসনের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের কেন্দ্র দখল, ব্যাপক হারে জাল ভোট এবং পোলিং এজেন্টদের মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ আনেন।

পঞ্চম দফার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বরগুনার বামনায় ভোট কারচুপি, কেন্দ্র দখল ও সরকারি দলের সমর্থক প্রার্থীর পক্ষে জাল ভোট প্রদানের অভিযোগ এনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ রানা (দোয়াত- কলম প্রতীক) ও বিএনপি বিদ্রোহী প্রার্থী সৈয়দ মানজুরুর রব মুর্তাযা আহসান মামুন (চিংড়িমাছ প্রতীক) সকাল ১১টার সময় পৃথক পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।

এদিকে ৫ম দফা উপজেলা নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা সদর এবং আলমডাঙ্গা উপজেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তার দলীয় লোকজনের বিরুদ্ধে রোববার গভীর রাতে পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে ব্যালট পেপারে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি, ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেয়া, কেন্দ্র দখলসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা এবং আলমডাঙ্গা উপজেলার বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। একই সঙ্গে আলমডাঙ্গা উপজেলায় ভোট প্রত্যাখ্যান করে নির্বাচন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী।

ভোট কারচুপি ও কেন্দ্র দখল করে ব্যালটে ভোট দেয়ার অভিযোগ এনে দুপুর দেড়টায় বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহফুজুর রহমান আকন্দ, ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শিরিন আক্তার, জামায়াতের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আনোয়ার হোসেন মোল্লা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী লাকি মনির নির্বাচন বর্জন করেন।

নির্বাচনে কারচুপি, জোরপূর্বক ক্ষমতাসীন প্রার্থীর এজেন্টরা ব্যালট পেপারে সিল মারা ও  বিএনপির এজেন্ট বের করে দেয়ার অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করেছে আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা এবং স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী শরিফুল ইসলাম। গতকাল দুপুর ১২টায় উপজেলা সদরে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী পারভীন আক্তারের বাসভবনে এই ঘোষণা দেন বিএনপি’র নির্বাচন সমন্বয়কারী আনোয়ার হোসেন অনু। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চেয়ারম্যান প্রার্থী গাজী এমএ মাসুদ (আনারস) ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পারভীন আক্তার (পদ্মফুল)।

সাতক্ষীরার  তিনটি উপজেলাতেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। আগে থেকেই ব্যালট কেটে বাক্সভর্তি করা, বিএনপির এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া, ভোটারদের ব্যালট না দেয়া, সাধারণ ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধা, মারপিট, প্রশাসনের নগ্ন হস্তক্ষেপসহ বিভিন্ন অভিযোগে তিনটি উপজেলার  চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের সকল পদ থেকে বিএনপি এই ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র জোরপূর্বক দখল করে নিজেদের পছন্দের প্রতীকে সিল মারা ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ এনে বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ আখতারুজ্জামান কোক্কা ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রার্থী মুফতি হাবিবুর রহমান সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচন বর্জন করেছে। গতকাল সকাল ১১টায় কলাপাড়া প্রেস ক্লাবে যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলন করে তারা ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সরকার দলের সমর্থিত প্রার্থীর সমর্থকরা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর  এজেন্ট বের করে দেয়াসহ জাল ভোটের অভিযোগ করা হয়েছে। এমন অভিযোগ এনে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপি ৩ প্রার্থীসহ ৬ প্রার্থী সাংবাদিকদের কাছে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। এরা হলেন- বিএনপি সমর্থিত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হাবিবুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মহিউদ্দিন পান্না ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মরিয়ম চৌধুরী জেবু, স্বতন্ত্র ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ইমাম হোসেন বাবুল, বহিষ্কৃত আওয়ামী বিদ্রোহী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মল্লিক মোহাম্মদ ফারুক ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মনিরুজ্জামান তালুকদার।

ঘাটাইল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় তিন প্রার্থী ব্যতীত অন্য দশ প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছেন। কেন্দ্র দখলের অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনকারী চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের ক্ষুব্ধ সমর্থকরা গতকাল সকাল আটটার দিকে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে।

Leave a comment