মাথাভাঙ্গা মনিটর: বৈধতা দেয়ার প্রথম দিন থেকেই বৃটেনে সমকামী বিয়ের হিড়িক পড়ে গেছে। প্রথম দিন ২৯ মার্চ অনেকগুলো এমন বিয়ে হয়েছে সেখানে। পুরুষের সাথে পুরুষ, নারীর সাথে নারীর এমন বিয়েকে কেন্দ্র করে বিরাজ করে এক উৎসবের পরিবেশ। এতে বলা হয়, ২৩ বছর বয়সী সারা-লুইস বিলিংটন (২৩)-এর সাথে বিয়ে হয়েছে রেবেকা গ্রিন-এর (৩১)। বৈধতা পেতেই ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে ওই দিন মধ্যরাত থেকে শুরু হয়ে যায় সমকামীদের আনন্দ-উৎসব। নেদারল্যাণ্ডে এমন বিয়ে বৈধতা পায় ৪ বছর এবং আর্জেন্টিনায় ১৩ বছর আগে। এবার টোরি দলের সমর্থন নিয়ে বৃটেনে এই আইন অনুমোদন করেন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। এরপর গতকাল সকালে ডাডলে রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন সারা ও রেবেকা। এ সময় দু’জনেই পরেছিলেন সাদা গাউন। এর আগে মধ্যরাতে কয়েক ডজন সমকামী নারী ও পুরুষ তাদের বিয়ে নিবন্ধন করাতে যোগ দেন রেজিস্ট্রি অফিসে। এ সময় কার আগে কে প্রথম সমকামী বিয়ের রেকর্ড গড়বেন তার জন্য শুরু হয় এক রকম প্রতিযোগিতা। এমনই এক সমকামী দম্পতি সারা ও রেবেকা। এখন তারা বিলিংটন-গ্রিন নামেই পরিচিতি দিচ্ছেন। সমকামী বিয়ে বৈধতা দেয়ার আইন কার্যে পরিণত হওয়ার আগেই ২০১২ সালে তারা কোরফু এলাকায় এনগেজমেন্ট সম্পন্ন করেন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন তারা। তাদের বাড়ি ওয়েস্ট মিডল্যান্ডের টিপটনে। গত তিনটি বছর তারা একত্রে রয়েছেন। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার দিন সম্পর্কে রেবেকা বলেন, এটা এমন এক আনন্দ যা প্রকাশ করা যায় না। আমার কাছে খুব ভাল লাগছে এবং আমি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছি। মনে হচ্ছে আমরা দেশের ইতিহাসে প্রথম সমকামী নারী, যারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলাম। রেবেকা বলেছেন, তিনি সবসময়ই নিজেকে সমকামী মনে করতেন। তাই কখনও তার কোন বয়ফ্রেন্ড ছিলো না। তবে তাদের দু’জনের পরিবারই তাদেরকে সমর্থন দিয়েছে তাদের জীবনধারায়। এর মধ্যে ৫ মাস আগে মারা যান সারা’র দাদা ও দাদী। তারাও এ বিয়েতে স্বীকৃতি দিয়ে গিয়েছেন। তাদের বিয়েতে অনেক সাংবাদিক উপস্থিত থাকলেও তারা পারিবারিক খাবার পরিবেশন করে বিয়ে সম্পন্ন করেন। সমকামী বিয়ে বৈধ হওয়ায় গত বছরের মার্চ মাস থেকে সমকামী বিয়েতে আগ্রহীরা নাম রেজিস্ট্রি করাতে থাকেন। এর ফলে যে সব নারী-নারী ও পুরুষ-পুরুষ বিয়েতে সম্মত হন তাদের অনেকে আবার দেশের বাইরে গিয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তারা অপেক্ষায় থাকেন দেশে স্বীকৃতির জন্য। সমকামী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া দু’পুরুষ ফিল রোবাথান ও জেমস প্রেসটন। ব্রাইটনে গতকাল এমন ৫টি বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। এ বিয়েতে রোবাথান ও প্রেসটন কবুতর উড়িয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন। এক পর্যায়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন ফিল রোবাথান। এ সময় জেমস প্রেসটন তার হাত শক্ত করে ধরে রাখেন। ওদিকে ইলিংটন টাউন হলে হয়েছে তিনটি সমকামী বিয়ে। সকাল ১০টায় বিয়ে হয়েছে এরোন ইরবাস ও লুইস মোনাকোর বিয়ে। এর মধ্যে লুইস যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির বাসিন্দা। তার বয়স ৪৬ বছর। তবে তিনি এখন বৃটেনের অ্যানজেলে বসবাস করেন ইরবাস (২৩)-এর সঙ্গে। এখন থেকে দেড় বছর আগে তাদের সাক্ষাৎ হয়েছিল উত্তর লন্ডনে। সেখানেই তারা বিয়ের আনন্দ উদযাপন করেন। এছাড়া, ৪টি সমকামী বিয়ে হয়েছে ওয়েস্টমিনস্টারে। সেখানে সিটি হলে প্রথম সমকামী বিয়েতে আবদ্ধ হন জন কোফে ও বারনারদো মারতি। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন পিটার ম্যাকগ্রা ও ডেভিড ক্যাবরেজা। শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে বিয়ে করে তারা রেকর্ড গড়েন। এ সমকামী যুগল গত ১৭ বছর লিভটুগেদার করছেন। এর আগে সমকামী বিয়ে বৈধ করেছে নেদারল্যান্ডস ২০০১ সালে। বেলজিয়াম ২০০৩ সালে। স্পেন ও কানাডা ২০০৫ সালে। দক্ষিণ আফ্রিকা ২০০৬ সালে। নরওয়ে, সুইডেন ২০০৯ সালে। পর্তুগাল, আইসল্যান্ড, আর্জেন্টিনা ২০১০ সালে। ডেনমার্ক ২০১২ সালে। উরুগুয়ে, নিউজিল্যান্ড, ফ্রান্স ২০১৩ সালে।