গাংনীর মাটির তৈরি রিং জনপ্রিয় হয়ে উঠছে

 

আমতৈল থেকে ফিরে মাজেদুল হক মানিক: মেহেরপুরের গাংনীর মাটির তৈরি রিং ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সিমেন্ট-বালুর তৈরি রিঙের চেয়ে তুলনামূলক দাম কম ও স্থায়িত্বকাল বেশি হওয়ায় এর চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন নির্মাণ ও সেপটিক ট্যাঙ্ক তৈরিতে এখন মাটির তৈরি রিং ব্যবহার হচ্ছে। ব্যবহারকারীরাও এখন সিমেন্টের রিঙের চেয়ে মাটির রিঙের প্রতি ঝুঁকছেন।

জানা যায়, গাংনী উপজেলার আমতৈল গ্রামে একসময় কয়েকটি কুমার পরিবারের লোকজন মাটির তৈজসপত্র (মৃশিল্প) তৈরি করতেন। কিন্তু এর চাহিদা কমে যাওয়ায় দশ বছর ধরে তারা রিং তৈরির দিকে ঝুঁকে পড়েন। ওই গ্রামের মঙ্গলপাল ও তার তিন ভাই এবং জগাপাল ও তার ছেলেসহ অর্ধশত পরিবার এখন রিং তৈরির সাথে জড়িত।

রিং কারিগর জুবায়েল মিয়া জানান, আমতৈল গ্রামে ছোট-বড় মিলে রিং তৈরির ২৩টি খোলা রয়েছে। ইট তৈরির প্রক্রিয়ার মতোই রিং তৈরি হয়। মাটি-পানি মিশিয়ে উপযুক্ত কাঁদা বানানো হয়। এর পর নির্ধারিত ছাচে রিং বানানো হয়। রোদে শুকিয়ে তা খোলায় পুড়িয়ে ব্যবহার উপযোগী করা হয়।

সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা যায়, বর্তমানে শহরের প্রায় প্রতিটি বাড়ির পানি নিষ্কাশন ও পায়খানার জন্য আলাদা সেপটিক ট্যাংক (হাউস) নির্মাণ আবশ্যক হয়ে পড়েছে। বড় আকারের একটি ট্যাংক সিমেন্টে রিং বসিয়ে তৈরিতে ৪০-৭০ হাজার টাকা খরচ পড়ে। সেখানে মাটির রিং দিয়ে ট্যাংক বানাতে খরচ মাত্র ১০-১২ হাজার টাকা। সিমেন্টে নোনা ধরে পাঁচ-ছয় বছরের মধ্যে রিং অকেজো হয়ে পড়ে। কিন্তু মাটির রিঙের স্থায়িত্ব প্রায় ১০০ বছর। তাই এখন বেশির ভাগ বাসাবাড়িতে সিমেন্টের রিং বাদ দিয়ে মাটির রিং দিয়ে সেপটিক ট্যাংক তৈরি হচ্ছে। শুধু তাই নয়, জেলার চাহিদা মিটিয়ে চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে আমতৈল গ্রামের তৈরি মাটির রিং। আর এ ব্যবসার সাথে জড়িত কয়েকশ মানুষ এখন স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে।

সরেজমিনে আমতৈল গ্রামের জুবায়েল হোসেনের রিং তৈরির খোলায় গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ২০ জন লোক কাজে ব্যস্ত। জুবায়েল জানান, তারা ছয়জন মিলে খোলাটি পরিচালনা করেন। দিনে রিং তৈরি এবং রাতে তা পোড়ানো হয়। ব্যাপক চাহিদা থাকায় খোলা থেকেই নগদ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোনো প্রচার-প্রচারণা লাগে না। কার্তিক মাস থেকে খোলা শুরু হয়ে চলে বৈশাখ মাস পর্যন্ত। আমতৈল গ্রামের ২৩টি খোলায় প্রতি মরসুমে প্রায় সাড়ে চার লাখ রিং তৈরি হয়।

বিভিন্ন খোলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি জোড়া রিং পাইকারি ৯০ থেকে ১৪০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। রিঙের সহজলভ্যতার কারণে বেশকিছু মানুষ সেপটিক ট্যাঙ্ক তৈরিকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। তারাই বাড়ির মালিকদের সাথে সেপটিক ট্যাঙ্ক বানাতে চুক্তি করছেন। খোলা থেকে রিং কিনে নিয়ে তারা ট্যাঙ্ক করে দিচ্ছেন। এতে বাড়ির মালিকরা রিং কিনে আনার ঝামেলামুক্ত হচ্ছেন।

একসময় আমতৈল গ্রামের কুমারদের সাথে কাজ করার সুবাদে ওই গ্রামের অনেকেই রিং তৈরি শিখেছেন। আজ তাদের হাতেই মূলত রিং তৈরির ব্যবসা। কুমারদের অনেকেই পেশা বদল করেছেন কিংবা আমতৈল ছেড়ে অন্যস্থানে বসবাস করছেন।