স্টাফ রিপোর্টার: ভারত থেকে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিদ্যুত বিভাগ ভারতের সম্মতিতে নতুন করে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানির প্রস্তাব দিয়েছে। ভারত চাইলে নতুন কোনো গ্রিড লাইন ছাড়াই শুধু সাবস্টেশন নির্মাণ করে বিদ্যুত আমদানি বৃদ্ধি করা সম্ভব।
বাংলাদেশের ভেড়ামারা স্টেশন থেকে দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের প্রকটনগর সীমান্ত পর্যন্ত ৭৮টি টাউয়ার স্থাপন করা হয়েছে, যা ২৭ কিলোমিটার লম্বা বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন। বাংলাদেশ ভারত মিলিয়ে পুরো ৯৭ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। উপমহাদেশে প্রতিবেশী দু দেশের মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন।
বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গতকাল শুক্রবার বিকেলে এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা ভারতের সম্মতিতেই নতুন করে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানির প্রস্তাব দিয়েছি। এ ছাড়া নেপাল এবং ভুটান থেকে বিদ্যুত আমদানির চেষ্টা করছি। আমরা ওই সব দেশে যৌথভাবে বিদ্যুত কেন্দ্রে বিনিয়োগেরও চেষ্টা করছি। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, ভারতের বিদ্যুত সচিব প্রদীপ কুমার সিনহা পহেলা এপ্রিল ঢাকা আসছেন। ওই সময় ভারত বাংলাদেশ যৌথ বিদ্যুত প্রকল্প রামপাল ছাড়াও ভারত থেকে নতুন করে বিদ্যুত আমদানি, নেপাল এবং ভুটান থেকে জলবিদ্যুত আমদানির বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। ভারতীয় বিদ্যুত সচিবের সাথে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশ সফরের কথা রয়েছে। ২ এপ্রিল প্রতিনিধি দলটির রামপালে যাওয়ার কথা রয়েছে।
বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, সম্প্রতি নেপাল ভুটান থেকে বিদ্যুত আমদানির বিষয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে বিদ্যুত আমদানি করার পাশাপাশি দু দেশে বিনিয়োগ করা যায় কি-না, তা নিশ্চিত হতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়। বিদ্যুত বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, ভারতীয় একটি প্রতিষ্ঠান নেপাল থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করতে আগ্রহ প্রকাশ করছে। যেহেতু নেপালের সাথে আমাদের গ্রিড লাইন নেই। তাই ওই বিদ্যুত ভারতকে দিয়ে আমরা বিকল্প হিসেবে আমাদের গ্রিড লাইন দিয়ে ভারত থেকে বিদ্যুত নিতে পারি। তিনি বলেন, এছাড়া নেপাল এবং ভুটান থেকে বিদ্যুত আমদানির জন্যও ভারতের সহায়তা প্রয়োজন হবে। সব বিষয় নিয়েই ভারতের বিদ্যুত সচিবের সাথে আলোচনা হবে।
বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, নেপালের দুটি বিদ্যুত প্রকল্প থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আনতে চায় বাংলাদেশ। এ জন্য ভারতে সহায়তা প্রয়োজন। কারণ নেপাল থেকে বিদ্যুত আনতে গেলে ভারতের কাছে আগে করিডর সুবিধা পেতে হবে।
ভারত থেকে গত বছর ৫ অক্টোবর বিদ্যুত আমদানি শুরু হয়েছে। মোট ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের মধ্যে ভারতের রাষ্ট্রীয়খাত থেকে ২৫০ এবং বেসরকারি খাত থেকে আরও ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি হচ্ছে। কিন্তু ফুললোডে বিদ্যুত সরবরাহ করলেও সঞ্চালন ক্ষতি এবং প্রাথমিক ব্যবহার বাদ দিয়ে বাংলাদেশ ৪৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুত পাওয়া যায়। কখনও কখনও সরবরাহ ৪৭০ মেগাওয়াটও হয়ে থাকে। এখন আরও ৩০ থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেনা হলে বাংলাদেশ পুরো ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতই পাবে। সম্প্রতি অতিরিক্ত এ ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুত চেয়েও ভারতের বিদ্যুত সচিবকে একটি ডিও লেটার দিয়েছে বিদ্যুত সচিব মনোয়ার ইসলাম।
বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, আমাদের সঞ্চালন লাইনের ক্ষমতা এক হাজার মেগাওয়াট। আর ব্যাক টু ব্যাক সাবেস্টেশনের ক্ষমতা ৫০০ মেগাওয়াট। নতুন করে বিদ্যুত আমদানি করতে হলে সাবস্টেশনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংকের গ্রুপ প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি) সাবস্টেশনের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অর্থায়নের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ নিয়ে বিদ্যুত বিভাগের সাথে আইএফসির একটি বৈঠকও হয়েছে। বাংলাদেশ ভারত বিদ্যুত সঞ্চালন লাইনে ভারতের বহরমপুর থেকে সে দেশের সীমান্ত প্রান্ত পর্যন্ত ১৯৫টি টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। মোট ৭০ কিলোমিটার লম্বা এ সঞ্চালন লাইন।
২ এপ্রিল ভারতীয় প্রতিনিধি দল রামপাল প্রকল্প পরিদর্শনে যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী ও বিদ্যুত সচিব মনোয়ার ইসলামের ওই দলের সাথে যাওয়ার কথা রয়েছে। যৌথ উদ্যোগের রামপাল বিদ্যুত প্রকল্পে ভারতীয় রাষ্ট্রীয় কোম্পানি এনটিপিসি এখনও তার বিনিয়োগের অর্থ সরবরাহের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি জানায়নি। ঋণের জন্য সরকারকে সভরিন গ্যারান্টি দেয়ার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ অংশীদারিত্বে বিদ্যুত কেন্দ্রটির অর্ধেক মালিকানা বাংলাদেশের। এ প্রকল্পের জন্য ১১৭ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার ঋণ প্রয়োজন হবে। নতুন সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রামপালে প্রস্তাবিত এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র। বিদ্যুত প্রকল্পটির দরপত্র প্রক্রিয়ার জন্য শীঘ্রই পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হবে।