নকল হেপাটাইটিস-বি ভ্যাকসিন উদ্ধার করেছে র্যাবের ভ্র্যাম্যমাণ আদালত। মরণব্যাধি হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের ভ্যাকসিনও নকল করা হয়েছে? খবরটি চমকে ওঠার মতো। চিকিৎসা সেবামূলক পেশা হলেও এই ক্ষেত্রটি এখন যেন ভেজাল আর নকলে সয়লাব; যা জনস্বাস্থ্যের জন্য কেবল হুমকিই নয়, মৃত্যুরও অন্যতম কারণ। এটা মানবতা বিবর্জিত কাজ। এ কাজটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ জেনেও একশ্রেণির মানুষ ব্যবসার নামে এ খাতকে মারাত্মক হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে, দিচ্ছে।
হেলথ ভিশন বাংলাদেশ নামে একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠান হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের নকল ভ্যাকসিন তৈরি করে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছে। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের হেপাটাইটিস-বি ভ্যাকসিন প্রদানের কাজ করে থাকে। এরা দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর দেড় শতাধিক নামী-দামি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের ভ্যাকসিন প্রদানের কাজ করে আসছিলো। সেই ধারাবাহিকতায় সোমবার বনানীর সফুরা টাউয়ারের ১২ তলায় একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের ভ্যাকসিন দিচ্ছিলো। ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের সন্দেহ হলে তারা কৌশলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানায়। তাৎক্ষণিকভাবে র্যাবের মোবাইলকোর্ট ঘটনাস্থলে এসে অভিযুক্ত একজনকে নকল ভ্যাকসিনসহ ধরে ফেলে। পরে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের প্রতিনিধিরা এগুলোকে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের নকল ভ্যাকসিন বলে শনাক্ত করে। নকল ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ‘হেলথ ভিশন বাংলাদেশ’-এর মূল অফিস রাজধানীর পল্লবীর সজীব ঢালি টাউয়ারে। চিকিৎসকরা জানান, এসব নকল ভ্যাকসিন জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এতে প্রাণহানিরও আশঙ্কা রয়েছে। মানুষের মৌলিক অধিকারের অন্যতম একটি হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। এই অধিকারকে নিয়েই ছিনিমিনি খেলছে একশ্রেণির প্রতারক। মানুষের দুর্গতি আর অসহায়ত্ব নিয়ে এরা খেলা করে। এমনিতেই আমাদের স্বাস্থ্য পরিসেবা জনসংখ্যানুপাতে যথেষ্ট নয়। সরকারি হাসপাতালের সংখ্যাও এখানে পর্যাপ্ত নয়; যা আছে তাতেও নানা সমস্যা বিরাজমান। তারপর এ ধরনের নকল ও ভেজাল ওষুধ দৌরাত্ম্য মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। কিছুদিন আগে খোদ রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মহাখালীতে ভুয়া ক্যান্সার হাসপাতালের কথা শোনা গেছে। যেখানে চিকিৎসা নয়, অসহায় মানুষ প্রতারিত হতো। ডাক্তারদের কেউ কেউ এ প্রতারণার সাথে জড়িত। আর এ সুযোগ নিচ্ছে এসব প্রতারক চক্র। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এর সমাধান কোথায়? অসহায় মানুষ যাবে কোথায়।
রোগব্যাধি নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন দরিদ্র বা সীমিত আয়ের মানুষ। এরাই মূলত চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়ে নানাভাবে হয়রানির শিকার হন। তাদের অনেকেরই বোঝার বা জানার সুযোগ নেই কোনটা আসল কোনটা নকল। চক্রের কবল থেকে চিকিৎসা বিভাগকে বাঁচাতে হবে। যারা নিরীহ রোগীদের প্রতারিত করে, ক্ষতি করে তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। এ ব্যাপারে ওষুধ প্রশাসনকে আরও সক্রিয় হওয়া জরুরি। ভেজাল ও নকল ওষুধ উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।