বাউবির এসএসি পরীক্ষার ফলপ্রকাশ : পাশের হার ৭২ দশমিক ৯৭ ভাগ

 

স্টাফ রিপোর্টার: উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) অধীনে নেয়া ২০১২ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়েছে। এবার পাসের হার ৭২ দশমিক ৯৭ ভাগ। এর আগের বছরের চেয়ে এই হার প্রায় ১৫ ভাগ বেশি। তবে এই পর্বে ৩৪ ভাগ শিক্ষার্থী নতুন করে শিক্ষার মূলস্রোতধারা থেকে ছিটকে পড়লো, যারা আসলেই ঝরে পড়া শিক্ষার্থী ছিল এবং শিক্ষাজীবনে ফেরার চেষ্টায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল।

সাধারণত দারিদ্র্যসহ নানা কারণে ঝরেপড়া বা শিক্ষার মূলস্রোতধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া শিক্ষার্থীরা বাউবির দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে লেখাপড়া করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়টির পদ্ধতি অনুযায়ী এসএসসি প্রোগ্রামে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে আলাদা পরীক্ষা দিতে হয়। দ্বিতীয় পর্বের পরীক্ষার্থীরাই এসএসসির চূড়ান্ত পরীক্ষার্থী বলে বিবেচিত হয়। এবার এই পর্বে মোট শিক্ষার্থী ছিল ৬৭ হাজার ৫৮৫ জন। আর পাস করেছে ৪৪ হাজার ৭৭৩ জন। সে হিসাবে এই ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেও নতুন করে ৩৪ ভাগ ঝরে পড়লো। যদিও প্রকৃত চিত্র আরও করুণ। শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিকূল পরিস্থিতি হচ্ছে শিক্ষা ব্যয় বেড়ে যাওয়া। বিশ্ববিদ্যালয়টি যেসব কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রোগ্রাম পরিচালনা করে, সেগুলোর বেশির ভাগই দুর্নীতিতে নিমজ্জিত।
এ ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বলেন, দেড় বছর ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটেছে। এই পরিস্থিতি আরও ভালো করতেই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। একই অনুষ্ঠানে নবনিযুক্ত ভিসি অধ্যাপক এমএ মান্নান দাবি করেন, বিগত পাঁচ বছরে কোনো ধরনের ব্যয় বাড়ানো হয়নি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। বৃহস্পতিবার দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন। এ সময় শিক্ষা সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক, বাউবির ভিসি অধ্যাপক এমএ মান্নান, প্রোভিসি খোন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন, কোষাধ্যক্ষ মোঃ আবু তাহের, অতিরিক্ত সচিব সালাউদ্দিন আকবর, এএস মাহমুদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ পরীক্ষায় সর্বমোট (প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে) ১ লাখ ৫৩ হাজার ১০৯ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এদের মধ্যে প্রথম পর্বে ৮৫ হাজার ৫২৪ জন আর দ্বিতীয় পর্বে ৬৭ হাজার ৫৮৫ জন অংশ নেয়। এরা একই সঙ্গে পরীক্ষায় অংশ নেয়। তবে দ্বিতীয় পর্বের ৬৭ হাজার ৫৮৫ জনের মধ্যে ৬১ হাজার ৩৫৪ জন চূড়ান্তভাবে পরীক্ষায় অংশ এবং এদের মধ্যেই ৪৪ হাজার ৭৭৩ জন পাস করেন বলে দাবি করেন ভিসি এমএ মান্নান। আরও বলেন, পরীক্ষার জন্য নিবন্ধিত নয়, অংশগ্রহণকারী এবং উত্তীর্ণ- এই দুটির মধ্যে তুলনা করে পাসের হার নিরুপন করা হয়েছে। আর বিশ্ববিদ্যালয়টির একটি সূত্র বলছে, দ্বিতীয় পর্বে যারা নিবন্ধিত হয়েছে, তাদের বাইরে আরও ১৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ছিল, যারা প্রথম পর্বের পরীক্ষার পর আর শিক্ষার ধারায় থাকতে পারেনি।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬৯ দশমিক ৩৬ ভাগ ছাত্র এবং ৭৮ দশমিক ২০ ভাগ ছাত্রী। উত্তীর্ণদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৭ জন, ৩ হাজার ৫৬১ জন জিপিএ-৪ এবং ১০ হাজার ১৪৭ জন জিপিএ-৩.৫ পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার বেলা ২টা থেকে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ফল পাওয়া যাচ্ছে। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৩২টি প্রোগ্রামে ৫ লাখ ৭০ হাজার ২০১ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। আগামী পাঁচ বছরে এই সংখ্যা ১০ লাখে উন্নীত করা হবে, যাতে শিক্ষাবঞ্চিত সব বয়সের ও বিভিন্ন পেশার মানুষ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুযোগ পায়।