আধুনিক মিসরের ইতিহাসে বৃহত্তম ‘গণমৃত্যুদণ্ড’

 

মিসরের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ও মুসলিম ব্রাদারহুড নেতা মোহাম্মদ মুরসির ৫২৯ জন সমর্থককে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত। পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা, থানায় হামলা, সাধারণের ওপর হামলা ও হত্যা এবং তাদের সম্পত্তি ধ্বংসসহ বিভিন্ন অপরাধের জন্য এদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। আধুনিক মিসরের ইতিহাসে এটা বৃহত্তম ‘গণমৃত্যুদণ্ড’ বলে জানা গেছে।

আদালতের রায় এখন মিসরের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা, প্রধান মুফতির কাছে পাঠানো হবে। তার অনুমোদন বা প্রত্যাখ্যানের ওপর নির্ভর করবে এ মামলার কার্যকরের বিষয়টি। তবে বিচার প্রক্রিয়া ২৮ এপ্রিলের আগে শেষ হবে না। এ সময়ের মধ্যে আসামিরা আপিল করার সুযোগ পাবেন। ২০১৩ সালের জুলাইয়ে ব্যাপক জনরোষে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ইসলামপন্থি নেতা মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশটির সেনাবাহিনী। এরপরই ইসলামপন্থিদের সাথে সেনাসমর্থিত সরকারের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে শ শ মানুষ নিহত হয়। আন্দোলন কঠোরভাবে দমনে নানা অভিযান চলে। এ অভিযানেরই অংশ হিসেবে মুরসির কয়েক হাজার কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর আগস্টে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে ওই হামলার ঘটনা ঘটে। মিসর একটি অন্যতম মুসলিম দেশ হলেও তাদের আছে দীর্ঘদিনের ধর্মনিরপেক্ষ ও উদার রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কৃষ্টি ও সংস্কৃতি। এখানকার আকর্ষণীয় ভূ-বৈচিত্র্য, ঐতিহাসিক নিদর্শন সবসময় আকর্ষণ করে। নীল নদ বিধৌত এ দেশের উত্তরে ভূমধ্যসাগর, পশ্চিমে লিবিয়া, দক্ষিণে সুদান আর পূর্বে সৌদি আরব, জডার্ন, ইসরাইল ও প্যালেস্টাইন ভূখণ্ড অবস্থিত। ইউরোপ ও আমেরিকাসহ সমগ্র পশ্চিমা বিশ্বের পাশাপাশি চীন, জাপান ও রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশের বৈদেশিক নীতিতে মিসর সবসময় একটা বড় জায়গা দখল করে থাকে। মুসলিম ব্রাদারহুড মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও বৃহৎ ইসলামপন্থি সংগঠন। ১৯২৮ সালে মিসরে হাসানুল বান্না এর প্রতিষ্ঠাতা। দলটিকে ১৯৫৪ সালে নিষিদ্ধ করেছিলো তৎকালীন সেনা শাসকেরা। পরে এটি মুসলিম ব্রাদারহুড অ্যাসোসিয়েশন নাম নিয়ে একটি এনজিও হিসেবে নিবন্ধিত হয়। পরে এফজেপি নামে বৈধ নিবন্ধিত রাজনৈতিক শাখা করা হয়। ২০১১ সালে গণঅভ্যুত্থানে পতন হয় বহুল আলোচিত-সমালোচিত হোসনি মোবারকের। ২০১২ সালে ক্ষমতায় আসে মুসলিম ব্রাদারহুড। ৮৫ বছরের পুরোনো কট্টর ইসলামপন্থি এ দলটি মোবারকের পতনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলো। কিন্তু এক বছর যেতে না যেতে ক্ষমতার সামনে আবারও আসে সেনাবাহিনী। ইতিহাস বলে, মিসরে সেনাবাহিনী একটি শক্তি। টানা ৬১ বছর ধরেই তারা ক্ষমতায় ছিলো। মাঝখানে সীমিত পরিসরে ২০১১ সালের বিপ্লবের পর কিছুদিন পর্যন্ত তারা পর্দার অন্তরালে থেকে ক্ষমতা পরিচালনা করেছে। এখন আবার তারা প্রকাশ্যে। গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর মুসলিম ব্রাদারহুডকে আদালত নিষিদ্ধ করে। গত ডিসেম্বর মাসে পুলিশ স্টেশনে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১৬ পুলিশ নিহত হলে দলটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে প্রশাসন এবং তাদের পক্ষে প্রকাশ্যে সমর্থন দেয়াকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। দলটিকে ১৯৪৮ সালে নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো বোমা হামলা ও গুপ্তহত্যার অভিযোগে। ১৯৫২ সালে নাইটক্লাব, থিয়েটার হোটেলসহ ৭৫০টি গুরুত্বপূর্ণ ভবনে আগুন দেয়ার অভিযোগে। ২০১৩ সালেও একই কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দল যদি প্রকাশ্যে রাজনীতি করার যোগ্যতা রাখে, জনসমর্থন পায় তাদের প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে দেয়া উচিত।

সুনিদিষ্ট কারণ ছাড়া কারও রাজনৈতিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করা যেমন ঠিক নয়, তেমনি সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মাধ্যমে অপরাজনীতি করারও অধিকার দেয়া উচিত নয়। আর আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দেয়া উচিত। যেহেতু রায়টি দেশটির আদালত দিয়েছে তাই আইনি পথেই তা নিষ্পত্তি হওয়া উচিত। গণমৃত্যুদণ্ড এবং তা যদি হয় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত তা হলে সভ্যতা কি লজ্জা পাবে না?