যুদ্ধাপরাধের বহু প্রামাণ্য ছবি ভারতে বাক্সবন্দি

 

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রামাণ্য দলিল ভারত সরকারের আর্কাইভে বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে আছে। তথ্য ও সমপ্রচার মন্ত্রণালয়ের আর্কাইভে বাক্সবন্দি হয়ে থাকা এসব তথ্যচিত্রে ধরা রয়েছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আল-শামসদের নারকীয় অত্যাচারের বীভৎসতার নানা ছবি। যেসব দৃশ্য দেখে তা সহ্য করতে পারেননি তথ্যচিত্রের পরিচালকরাও। ছবি সম্পাদনা করতে গিয়ে একজন পরিচালক তো সারা জীবনের জন্য অসুস্থ  হয়ে পড়েছিলেন। তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ফিল্ম ডিভিশনের কলকাতা শাখা সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত সরকারের বেশ কয়েকজন পরিচালক ও চিত্রগ্রাহক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন নারকীয় হত্যাযজ্ঞের নানা চিত্র, উদ্বাস্তুদের সুখদুঃখের পাঁচালি আর সীমান্ত পার হওয়ার দুঃসাহসিক অভিযাত্রার নানা খণ্ডচিত্র এবং মুক্তিযোদ্ধাদের রণাঙ্গনের নানা চিত্র। সেসব চিত্রের  বেশির ভাগ ছবি  বাক্সবন্দি। সেলুলয়েডের রিলে ধরা রয়েছে সেই সময়ের ঘটনাপ্রবাহ। সেগুলো সেই সময় সিনেমা হলগুলোতে চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আগে নিউজ রিল হিসেবে দেখানো হলেও পরবর্তীকালে সাধারণ মানুষ আর কখনওই সেগুলো দেখতে পাননি।
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে অনেক চিত্রগ্রাহক পাকিস্তানি সেনাদের বীভৎস অত্যাচারের ছবি তুলতে গিয়ে  সেসব দৃশ্য দেখে অসুস্থ হয়ে ফিরে এলেও অনেক সাহসী পরিচালক সেসব দৃশ্যকে ধারণ করে রেখেছেন ইতিহাসের দলিল হিসেবে। সেই সময়কার অসংখ্য নিউজ রিলে তা ধরা রয়েছে। একদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের অসীম সাহসী লড়াইয়ের ছবি, অন্যদিকে রয়েছে পাকিস্তানি সেনাদের নির্যাতনের নানা ছবি। তাছাড়া সেই যুদ্ধে মানবতা যেভাবে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল তা-ও ধরা পড়েছে অনেক তথ্যচিত্রে। এসব তথ্যচিত্রে এমন সব ছবি রয়েছে যা দেখলে মানুষ শিহরিত হয়ে উঠবেন। লোমহর্ষক নানা ছবি রয়েছে এসব তথ্যচিত্রে। পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতার এমন সব ছবি রয়েছে যা দেখলে মানুষের রক্ত হিম হয়ে যায়। বাংলাদেশের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামারুজ্জামান উদ্বাস্তুদের ঘরে ফেরার যে আহ্বান জানিয়েছিলেন তা-ও ধরা রয়েছে এনএস থাপার ৬ মিনিটের তথ্যচিত্র এবার ঘরে ফেরার পালা-তে। ১৯৭১ সালে প্রখ্যাত পরিচালক ঋত্বিক ঘটকও ২২ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের ওপর। আর সেই ছবিটি তৈরিতে আর্থিক সহায়তা করেছিলেন অভিনেতা প্রসেনজিতের পিতা বিশ্বজিৎ। সেটি পরবর্তী সময়ে ভারত সরকার কিনে নিয়েছিলো। এস সুখদেবের ৭১ মিনিটের তথ্যচিত্রটি ১৯৭৫ সালে তৈরি করা হলেও এতে নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে নিখুঁতভাবে। শান্তি এস ভার্মার ’দ্য স্টার অব এ পিপল’ তথ্যচিত্রে মানবতার করুণ পরিণতির কথা তুলে ধরা হয়েছে। ১১ মিনিটের এই তথ্যচিত্রে বৃটিশ এমপি ডোনাল্ড চেসওয়ার্থ ও মাইকেল বারনসের সাক্ষাৎকারের অংশ বিশেষ স্থান পেয়েছে। রয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের কয়েক লাইনও। ভার্মার আরেকটি তথ্যচিত্র ‘সোনার বাংলা’য় মার্চে মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ফিরে আসা পর্যন্ত ধারাবাহিক বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। ৫৫ মিনিটের এই তথ্যচিত্রে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকাও তুলে ধরা হয়েছে। পরিচালক বিনয় রায়ের ’রিফিউজি ১৯৭১’ (১৪ মিনিট), ‘এ হিউম্যান ট্রাজেডি’ (১১ মিনিট), ‘জন্ম নিলো বাংলাদেশ’ (১১ মিনিট) এবং ’ঢাকা’ (১৭ মিনিট) তথ্যচিত্রে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার দিনলিপি ধরা রয়েছে। এছাড়া গীতা মেহতার ‘ডেটলাইন বাংলাদেশ’ (৬০ মিনিট), প্রেম বৈদ্যের ‘হোম কামিং’ (১০ মিনিট) এবং ওমপ্রকাশ মেহেরার ‘ইন্ডিয়া-পাকিস্তান কনফ্লিক্ট-১৯৭১’ (৪৬ মিনিট) তথ্যচিত্রে ১৪ দিনের যুদ্ধের নানা ছবি তুলে ধরা হয়েছে। এসব ছবি ছাড়াও ভারত সরকারের আর্কাইভে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার আরও নানা তথ্যচিত্র অযত্নে অবহেলায় পড়ে রয়েছে। ভারত সরকার অবশ্য কিছুদিন আগে সেই সময়কার বেশ কিছু নিউজ রিলকে একত্রিত করে ১২টি স্বল্প দৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্র হিসেবে আলাদা করেছেন। এর চারটি কিছুদিন আগে দেখানো হলেও বেশির ভাগই এখনও দেখানো হয়নি প্রকাশ্যভাবে।