৯১ উপজেলার ফলাফল : আ.লীগ ৫২ বিএনপি ২২ জামায়াত ৫ অন্যান্য ৯ স্থগিত ৩
স্টাফ রিপোর্টার: সহিংসতা, জালভোট ও কেন্দ্র দখলের নয়া রেকর্ড হলো চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে। ভোট শুরুর আগেই কেন্দ্র দখল করে ব্যালট বোঝাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। সংঘাত-সহিংসতায় নিহত হয়েছেন চারজন। নির্বাচন কমিশনের হিসাবে অন্তত ৩২টি কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। নয়টি উপজেলায় ২৬ জন প্রার্থী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন নির্বাচন চলাকালেই।
চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠিত ৯১টি উপজেলার ৮৮টির বেসরকারি ফলাফল পাওয়া গেছে। তিনটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন স্থাগিত করা হয়েছে। প্রাপ্ত ফলাফলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন ৫২ টিতে। আর ২২টিতে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী। বিএনপির অন্যতম শরিক দল জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন ৫টিতে। এছাড়া অন্যান্য প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন ৯টি উপজেলায়। এদিকে নির্বাচনী সহিংসতায় পটুয়াখালীর দুমকি, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া ও কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলায় ফলাফল স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
চতুর্থ দফা উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতায় চারজন নিহত ও আড়াই শতাধিক আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় এক ইউপি চেয়ারম্যান, আখাউড়ায় বিএনপির এক কর্মী, রাজাপুরে যুবলীগ কর্মী ও বড়ুরায় এক যুবদল কর্মী রয়েছেন। এ পর্বে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করার স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলো নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কেন্দ্র দখলের চেষ্টা চালানো হলে গুলি করার নির্দেশও দেয়া হয়। কমিশনের এ হুশিয়ারি সত্ত্বেও রোববার ৯১ উপজেলায় ভোট গ্রহণ চলাকালে গোলাযোগ, হামলা ভাঙচুর ও কেন্দ্র দখলের ঘটনা আরও বেড়েছে। কিছু উপজেলায় নির্বাচনী সহিংসতা, কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই, জাল ভোট প্রদান, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের মারধর, প্রতিপক্ষের এজেন্টদের বের করে দেয়াসহ নানা অনিয়মের ঘটনা ঘটে।
অভিযোগ রয়েছে, ভোটগ্রহণের আগের রাতেই কয়েক স্থানে কেন্দ্র দখল করে ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করেছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নিজ এলাকা চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলায় ভোটগ্রহণ চলাকালে তাণ্ডব চালানো হয়। সহিংসতার কারণে ৯ জেলার ১১ উপজেলার ৩২টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। নির্বাচনী অনিয়ম করায় বেশ কয়েকজনকে জেল-জরিমানা করেন মোবাইল কোর্ট। ভোট গ্রহণে অনিয়মের অভিযোগ এনে ৩৭ প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছেন। সহিংসতা চলাকালে ২৩ জনকে আটক করা হয়। এসব ঘটনার প্রতিবাদে ৪ উপজেলায় হরতালের ডাক দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি অনেক উপজেলায় সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে বলে জানা গেছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও ইসির কর্মকর্তাদের মতে, ধাপে ধাপে নির্বাচনে সহিংসতার তীব্রতা বাড়ছে। তিন দফা নির্বাচনের তুলনায় চতুর্থ দফায় সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা বেশি হয়েছে। সহিংসতাকারীরা এতো বেপরোয়া ছিলো যে, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালিয়ে তারা কেন্দ্রের দখল নিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতেও অনেক স্থানে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ভোটগ্রহণের সময় শেষ হওয়ার পর রোববার সন্ধ্যায় কমিশন সচিবালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক কঠোর হুশিয়ারির পরও চতুর্থ দফায় কিছু সহিংসতা ও গোলাযোগ হয়েছে দাবি করে বলেন, সহিংসতা না হওয়ার জন্য আমরা যথেষ্ট প্রার্থনা করেছি, ব্যবস্থাও নিয়েছি। এরপরও সহিংসতা কিছু হয়েছে, গোলাযোগও হয়েছে। জয়ী হতে প্রতিদ্বন্দ্বীদের মাঝে অদম্য স্পৃহা ও কামনার কারণে এ সহিংসতা হয়েছে। বিচ্ছিন্ন, অবাঞ্ছিত, অহেতুক ও অনভিপ্রেত ঘটনার জন্য ৩২ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে আইন অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী ৩১ মার্চ পঞ্চম দফা উপজেলা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে।
যেসব কেন্দ্র বন্ধ হলো: ইসির দেয়া তথ্যানুযায়ী সহিংসতা, গোলাযোগ, ভোটদানে বাধা, ব্যালট পেপার ছিনিয়ে সিল মারাসহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত পর্যায়ে চলে যাওয়ায় ৯ জেলার ১১ উপজেলায় ৩২ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। এর মধ্যে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় ৮টি, পটুয়াখালী জেলার সদর উপজেলায় ৮টি, একই জেলার দুমকীতে ৫টি, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে ৩টি, কুমিল্লার বরুড়ায় ২টি, ঢাকার ধামরাইয়ে ১টি, চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে ১টি, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ১টি, একই জেলার সাতকানিয়ায় ১টি, সিলেটের কানাইঘাটে ১টি ও কক্সবাজারের কতুবদিয়ায় ১টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় সহিংসতায় বালুয়াকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুদ্দিন প্রধান আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের হাতে নিহত ও কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। ভোটকেন্দ্র দখল পাল্টা দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের কারণে ৭টি ভোট কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।
শামসুদ্দিন চেয়ারম্যান হত্যার প্রতিবাদে বেলা ১২টার দিকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাখি পয়েন্টে গাড়ি ভাঙচুর ও বিক্ষোভ করেন। তারা টায়ারে আগুন ধরিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। বেলা পৌনে ১টার দিকে সেনাবাহিনী অবরোধকারীদের সরিয়ে দিলে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়। স্থনীয় সংসদ সদস্য-সমর্থিত আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকরা আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী আমিরুল ইসলামের সমর্থক বালুয়াকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুদ্দিন প্রধানকে কুপিয়ে ও গুলি করে মারাত্মক জখম করে। গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তিনি মারা যান। এ খবর এলাকায় পৌঁছুলে উত্তেজিত গ্রামবাসী মহাসড়কে নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। বেলা ১১টার দিকে চর বাউসিয়ার দক্ষিণকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের দু গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় ২০ জন আহত হন।
আখাউড়ায় বিজিবির গুলিতে বিএনপির এক কর্মী নিহত হয়েছেন। ১৫টি কেন্দ্র দখল করে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী আবুল কাশেমের লোকজন ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সিল দেয়া শুরু করেন। বিকেল ৩টায় তারাগণ প্রাথমকি বিদ্যালয় কেন্দ্রে সিল মারার সময় বিএনপির প্রার্থী মুসলিম উদ্দিনের কর্মীরা বাধা দিলে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। বিজিবি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলিবর্ষণ করলে ঘটনাস্থলেই হাদিস মিয়া নামে এক বিএনপির কর্মী বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ১২ বিজিবির ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক (ভারপ্রাপ্ত) মেজর এরশাদুল হক জানান, কেন্দ্র দখল করে ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের চেষ্টা করলে বিজিবি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলিবর্ষণ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের একটি টিম রয়েছে। হীরাপুর হাইস্কুল কেন্দ্রে বিএনপির প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মুসলিম উদ্দিনের এজেন্টকে মারধর করে কেন্দ্র দখল করা হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল কাশেমের লোকজন কেন্দ্রের সব বুথে ঢুকে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেন। এতে বাধা দেয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় মনির হোসেন নামে এক ছাত্রদল নেতাসহ অন্তত ৫ জন আহত হন।
ঝালকাঠির রাজাপুরে রোববার প্রতিপক্ষের হামলায় যুবলীগ কর্মী রিপন নিহত হয়েছেন। রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, বেলা ১২টার দিকে উপজেলার দক্ষিণ তারাবুনিয়া গ্রামে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিএনপি-সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী নাসিম উদ্দিন আকনের লোকজন ধারাল অস্ত্র দিয়ে রিপনকে কুপিয়ে আহত করে। গুরুতর অবস্থায় তাকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সেখানে তিনি মারা যান। রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, সকালে রাজাপুর উপজেলার দক্ষিণ তারাবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ-বিএনপি মধ্যে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী রিপন মিয়া গুরুতর আহত হন। তাকে প্রথমে পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তিনটি উপজেলার বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। উপজেলাগুলো হচ্ছে- ঝালকাঠি সদর, নলছিটি ও কাঁঠালিয়া। কাঁঠালিয়ায় বিএনপি সমর্থিত ছাড়াও আরও তিন প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন। ঝালকাঠি সদর উপজেলার বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী সরদার এনামুল হক এলিন (দোয়াত-কলম) সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।
বরুড়া উপজেলায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন চলাকালীন মহেশপুর আজিজিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটদানে বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে দু পক্ষের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের গুলিতে যুবদল কর্মী মনির হোসেন নিহত হন। আদমপুর কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার আবদুল মান্নান আওয়ামী লীগ কর্মীদের হুমকিতে অসুস্থ হয়ে হসপিটালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আগৈলঝাড়ায় ৭ প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছেন। গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ায় ২০ জনকে আটক করা হয়েছে। আজ আগৈলঝাড়ায় বিএনপি অর্ধদিবস হরতালের ডাক দিয়েছে।
ভোলার ৩ উপজেলায় বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ ১৩ জন প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছেন। কয়েকটি কেন্দ্রে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, সংর্ঘষ হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ৩০ জন। তজুমদ্দিন উপজেলার চাচড়া কেন্দ্রে দু ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে কয়েক দফা হামলায় আহত হয়েছে কমপক্ষে ১৫ জন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর ক্যাডারদের হামলায় ১০ জন আহত হয়েছে। অপরদিকে মনপুরায় সকাল সাড়ে ৮টায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত সেলিনা চৌধুরীর লোকজন কেন্দ্র দখল করে নেয়ার অভিযোগে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ভোট বর্জন করেন।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর দৌলতপুর বিএনপি, জাসদ ও জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থীরা ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। রোববার বেলা ১১টায় জাতীয় পার্টি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আলী আকবর নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। এদিকে পুলিশের গুলিতে এক বিএনপি কর্মী গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়েছে।
কুমিল্লা বরুড়া উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসারদের জিম্মি করে আনারস, টিউবওয়েল ও ফুটবল প্রতীকে সিল মেরে ব্যালট পেপার বাক্সে ভরে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ব্যালট পেপার দেখাতে অস্বীকৃতি জানালে তলাগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার ড. মহিউদ্দিন মোহাম্মদ শাহ্ জাহান ভূঁইয়াকে ভোটাররা ক্ষিপ্ত হয়ে মারধর করে। যশোরে বিভিন্ন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হামলার ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা, আনসার সদস্য ও ইউনিয়ন যুবলীগ নেতাসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৮ জনকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অপরদিকে মঠবাড়িয়ার বিএনপি প্রার্থী রুহুল আমিন দুলাল তার নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন নির্বাচন দাবি করেন এবং আজ উপজেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করেছেন।
ধামরাই উপজেলা নির্বাচনে শতাধিক ভোট কেন্দ্রে বল প্রয়োগ ও ব্যাপক জালভোটের মহোৎসব হয়েছে। ৫টি ভোট কেন্দ্র দখলকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এ সময় পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। এ ঘটনায় পুলিশের হাতে আটক আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী আলহাজ গোলাম কবীরের আনারস প্রতীকের ১২ নেতাকর্মীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা প্রদান করা হয়েছে।
উৎসবমুখর পরিবেশে পাবনার ঈশ্বরদী ও ফরিদপুর উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সহসভাপতি আকাল সরদার (৫০) এবং আওয়ামী লীগ নেতা সেকেন্দার আলীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করে। সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে তাদের একটি সরকারি গাড়িতে করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেনাবাহিনী ওই ভোট কেন্দ্রের পাশের বাড়ি থেকে আরও এক ব্যক্তিকে আটক করে।
নির্বাচিতরা হলেন- আওয়ামী লীগ: ৫২: খুলনার দাকোপে আবুল হোসেন ও ফুলতলায় শেখ আকরামুল হোসেন, ঝালকাঠি সদরে সুলতান হোসেন, যশোর সদরে শাহিন চাকলাদার ও কেশবপুরে এইচএম আমির হোসেন, বটিয়াঘাটায় আশরাফুল আলম খান ও খুলনার তেরখাদায় শরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু, কুমিল্লার মেঘনায় আব্দুস সালাম, পটুয়াখালী সদরে তারিকুজ্জামান মনি, বরিশালের বানারিপাড়ায় গোলাম ফারুক, দিনাজপুরের বোছাগঞ্জে ফরহাদ হাসান, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে আলমগীর চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় মোসলেম উদ্দীন ও নাসিরগঞ্জে মনিরুজ্জামান সরকার, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে রণবীর কুমার ও কমলগঞ্জে রফিকুর রহমান, টাঙ্গাইলের কালিহাতিতে মোজহারুল ইসলাম ও মধুপুরে সারোয়ার আলম খান ও ভুয়াপুরে আব্দুল হালিম, পিরোজপুর সদরে মজিবুর রহমান খালেক ও মঠবাড়িয়ায় আশরাফুর রহমান, চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে আতাউল হক ও ফটিছড়িতে তৌহিদুল আলম, আনোয়ারায় তৌহিদুল হক, রাঙ্গুনিয়ায় মোহাম্মাদ আলী শাহ ও রাউজানে এসহানুল হায়দার, সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ফিরোজ আহমেদ স্বপন, পাবনার ফরিদপুরে খলিলুর রহমান, চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে আব্দুল লতিফ অমল, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ফিরোজ আল-মামুন, কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে আব্দুস শহিদ ও কটিয়াদিতে আব্দুল ওয়াহাব, ভোলার মনপুরায় সেলিনা আক্তার, দৌলতখানে মঞ্জুর আলম খান ও তজুমুদ্দিনে ওয়াহিদউদ্দীন জসিম, ফেনীর ফুলগাজীতে একরামুল হক ও সোনাগাজীতে জেড এম কামরুল আনাম, ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় ফারুক সিকদার, পাবনার ঈশ্বরদীদে মোখলেসুর রহমান বাবু, পটুয়াখালীর বাউফলে মুজিবুর রহমান, খুলনার রুপসা কামাল উদ্দিন, বরিশালের উজিরপুর হাফিজুর রহমান, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে ফারুক আহমেদ, বাগেরহাটের মোল্লারহাটে শাহীনুর রহমান ও চিতলমারীতে মোল্লা মুজিবুর রহমান, ঝালকাঠির রাজাপুর মনিরুজ্জামান মনির, বরিশালের আগৈলঝারায় গোলাম মর্তুজা, ঝালকাঠির নলছিটিতে ইউনুস লস্কর, কিশোরগঞ্জের ইটনায় কামরুল হাসান, সিলেট সদর আশফাক আহমদ, পটুয়াখালীর গলাচিপায় শামজুজ্জামান লিখন।
বিএনপি: ২২: ঢাকার ধামরাইয়ে তমিজ উদ্দীন, শেরপুরের নালিতাবাড়িতে একেএম মোখলেসুর রহমান, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে আব্দুর রহিম, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে জিয়াউল ইসলাম জিয়া, কক্সবাজারের রামুতে আহমেদুল হক, ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডুতে আব্দুল মজিদ, নাটোরের বড়াইগ্রামে একরামুল আলম, দিনাজপুরের ফুলবাড়িতে খুরশিদ আলম, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় মোতালিব খান, সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে আব্দুল্লাহ আল-মামুন, চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে দেলোয়ার হোসেন, নেত্রকোনার মদনে এম এ হান্নান, বরগুনার বেতাগি শাহজাহান কবির ও সুনামগঞ্জের শাল্লায় গনেন্দ্র চন্দ্র সরকার, নড়াইল সদর মনিরুজ্জামান, সিলেটের কানাইঘাট আশিক উদ্দিন চৌধুরী, রাজশাহীরর তানোরে ইমরান আলী, বগুড়ার গাবতলীতে মোর্শেদ মিল্টন, নড়াইল গোবিন্দকুণ্ডে মুনিরুল ইসলাম, মৌলভীবাজার সদরে বিএনপির মিজানুর রহমান, কুমিল্লর বরুডায় আব্দুল খালেক চৌধুরী, গাজীপুর কালিয়াকৈরে হেলাল উদ্দিন।
জামায়াত: ৫: চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে জহিরুল ইসলাম ও সাতকানিয়ায় জসিমউদ্দিন, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে তোফায়েল আহমেদ, জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে মোস্তাফিজুর রহমান ও পিরোজপুরের জিয়ানগরে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী।
অন্যান্য: ৯: পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম, হবিগঞ্জ সদরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী সৈয়দ আহমদুল হক, লাখাইয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী অ্যাড. মুশফিউল আলম আজাদ ও আজমেরিগঞ্জে আতর আলী মিয়া, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবু বকর, কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী প্রার্থী কামাল উদ্দীন ভুঁইয়া ও ভৈরবে স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দীন এবং রাঙামাটির জুড়াছড়িতে জেএসএস প্রার্থী উদয় জয় চাকমা রাজশাহীর পুঠিয়ায় বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী আনোয়ারুল ইসলাম বিজয়ী হয়েছেন।