নির্বাচন বর্জন : জীবননগরে বিএনপি জামায়াতের সকালÑসন্ধ্যা হরতাল আজ

 

কন্দর্পপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বোমা হামলা ও ব্যালট বাক্সে আগুন : ভোট বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদের নিজ উপজেলা চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে বিভিন্ন অনিয়মের মধ্যদিয়ে রোববার উপজেলা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। কন্দর্পপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুর্বৃত্তরা দখলে নিয়ে বোমা হামলা ও  ব্যালট বাক্সে আগুন লাগিয়ে দিলে ভোট বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা ৫৩টি কেন্দ্রের সবকটিই দখলের অভিযোগ করেছেন।

ভোটে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনে উপজেলা পরিষদ পুনরায় ভোটগ্রহণের দাবিতে জীবননগর উপজেলায় সোমবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপিসহ ১৯ দলীয় জোট। সরকার দল সমর্থিত প্রার্থী আবু মো. আব্দুল লতিফ অমলের আনারস প্রতীকের পক্ষে সরকার দলীয় ক্যাডাররা এসব অনিয়ম করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইদুর রহমান ধুন্দু ও  জামায়াত সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী খলিলুর রহমানসহ সাত প্রার্থী বেলা সাড়ে ১২টায় একযোগে নির্বাচন বর্জন করেছেন। নতুনপাড়া কেন্দ্র থেকে  সেনাবাহিনী আব্দুল গনি নামে এক ব্যক্তিকে ব্যালটপেপারসহ আটক করেছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে একদল দুর্বৃত্ত কন্দর্পপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দখল, পরপর তিনটি বোমা হামলা ও নয়টি কক্ষে ঢুকে ব্যালট বাক্স ছিনতাই, ভাঙচুর ও তাতে অগ্নিসংযোগ করে। ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা স্বপন কুমার জানান, হামলাকারীদের চেনা যায়নি। দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের সহকারী পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম বলেন, ভোটকেন্দ্রে একযোগে হামলা চালানো হয়। আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট হাসান বুলবুল জানান, হামলায় বহিরাগতরা অংশ নেন। নির্বাচন বর্জনকারীরা হলেন বিএনপি-সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইদুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আরিফুজ্জামান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহফুজা পারভীন, জামায়াত সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী খলিলুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মহিউদ্দিন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সামুন্নাহার এবং স্বতন্ত্র ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী পেয়ারা বেগম।

ভোট চলাকালে রোববার দুপুর ১টায় জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও জীবননগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইদুর রহমান ধন্দুর বাসভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়া হয়। ১৯ দলের পক্ষে হরতালের ঘোষণা দেন জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রুহুল আমীন। সংবাদ সম্মেলনে উপজেলার ৫৩টি ভোট কেন্দ্রের সবগুলোতে ভোটগ্রহণ স্থগিত ও পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানানো হয়।

জীবননগরে সরকারি দল কর্তৃক ব্যালট পেপার ছিনতাই ও কেন্দ্র দখল করে জালভোট প্রদানের ঘটনায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে ত্রিমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে। আহতদের স্থানীয় ও  জীবননগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা হলেন, শহিদুল ইসলাম (৩৫), মমিন খান (৩৫), তবি (৩৬), আফসার আলী (৪০), মতিয়ার রহমান (৪০), আব্দুল কুদ্দুস (৪১), হবি (৩৫), আব্দুল মান্নান (৪০), আব্দুর রশিদ (২৫), মশিউর রহমান (৫০), জাহিদুল ইসলাম (৫০), রানা (৪০), আব্দুল আলিম (৩৫), মোজাহিদ হোসেন (৪০), শ্যামল (৪৫), স্বপন (৩৪) ও ইউনুছ (৫৫)।

নির্বাচনচলাকালে বদিনাথপুরে মারামারিতে আহতদের মধ্যে হাসাদহের আব্দুল আলিমকে (৩৫) চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। সে মৃত আব্দুল খাকের ছেলে। তাকে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে। তার মাথায় কমলপানীয়র বোতল দিয়ে আঘাত করা হয়। তিনি আওয়ামী লীগকর্মী বলে জানিয়েছেন।

দৌলতগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেন্দ্রে সরকার দলীয় সমর্থকরা ভোটকেন্দ্র দখলের কারণে সকাল ৯টার মধ্যে ১২টি বুথে ৩ হাজার ৫২৪ ভোটের মধ্যে ১ হাজার ৮০০ ভোট পোল করা হয়। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার তৌহিদুর রহমান এর ফলে ওই ভোটগ্রহণ একঘণ্টা বন্ধ রাখেন।

বেলা ১০টার দিকে শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে ১০-১২ জন আওয়ামী লীগ ক্যাডার কৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে গিয়ে জালভোট প্রদান করে। এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা বাধা দেয়। এতে সংঘর্ষ বাধলে উভয় দলের ১৩ জন আহত হয়। এ সময় ৬টি ব্যালট পেপার ছিনতাই হলে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার ১ ঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখে।

এদিকে নিশ্চিন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সভাপতি আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে ৮-১০ জন আওয়ামী ক্যাডার জামায়াত সমর্থিত এজেন্ট ও ভোটারদের কেন্দ্র থেকে বের করে প্রধান ফটক বন্ধ করে দিলে উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে উভয় পক্ষের অন্তন ৭ জন আহত হয়। এ সময় আধাঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে। পরে সেনাবাহিনী, বিজিবি এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে পুনরায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়।

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা জীবননগর ইউএনও সাজেদুর রহমান জানান, একটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে এবং সাতজন প্রার্থী নির্বাচন স্থগিত ও ভোট পুনরায় গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। তাদের আবেদনপত্র রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১টি ভোটকেন্দ্র স্থগিতসহ কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। বেলা ১০টার দিকে উপজেলার কন্দর্পপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে জামায়াত ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এক পর্যায়ে তারা ওই কেন্দ্রের সমস্ত ব্যালট পেপার ও ৯টি ব্যালট বাক্স পুড়িয়ে দেয়। এ কারণে ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা স্বপন কুমার সিংস ভোটগ্রহণ স্থগিত করেন। এছাড়া নতুনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতে গোয়ালপাড়া গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে আব্দুল গনিকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোখলেসুর রহমান ভ্রাম্যমাণ আদালতে এ জরিমানা করেন। সরেজমিন বেলা ১১টার দিকে মনোহরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে প্রিসাইডিং অফিসার মো. ছানোয়ার হোসেনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওই কেন্দ্রের মোট ভোট সংখ্যা ২ হাজার ৬৫। এর মধ্যে বেলা ১১টা পর্যন্ত ৭শ জন ভোটার তাদের ভোটারাধিকার প্রয়োগ করেছেন। বেলা ১২টার দিকে বাঁকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে প্রিসাইডিং অফিসার মো. আশাফুলদৌলার সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওই কেন্দ্রে ২ হাজার ৯১০ জন ভোটারের মধ্যে বেলা ১২টা পর্যন্ত ৯৯৫ ভোটার তাদের ভোটারাধিকার প্রয়োগ করেছেন।

Leave a comment