স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং তার বড় ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। একই সাথে খালেদা জিয়া এবং অন্য ৫ আসামির বিরুদ্ধে করা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় অভিযোগও গঠন করা হয়েছে। দু মামলায়ই আগামী ২১ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে। গতকাল বুধবার ঢাকার ৩ নং বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায় এ আদেশ দেন। এর মধ্যদিয়ে এ দুটি মামলার বিচারকাজ শুরু হলো।
এদিকে, চার্জ গঠনের পরপরই আদালতে উপস্থিত খালেদা জিয়া বলেন, কার বিরুদ্ধে চার্জ হলো, কিসের চার্জ হলো, আমাকে তো জিজ্ঞেস করলো না_ আমি দোষী, না নির্দোষ। আমাকে তো চার্জ পড়েও শোনানো হলো না।’ এর আগে শুনানি চলাকালে তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। মামলা দুটিতে হাজিরা দেয়ার জন্য বুধবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন খালেদা। তবে তিনি এজলাসকক্ষে উপস্থিত হন দুপুর ১টায়। ১টা ৫ মিনিটে বিচারক আসন গ্রহণ করার পর শুরু হয় শুনানি। ১টা ৪০ মিনিটে শুনানির সময় হট্টগোল শুরু হলে বিচারক এজলাস ত্যাগ করেন। এরপর বিকেল ৩টা ১৭ মিনিটে আবারো শুনানি শুরু হয়। এ সময় আবারো হট্টগোল শুরু হলে ৩টা ২৩ মিনিটে ফের এজলাস থেকে নেমে যান বিচারক। পরে আদালতে উপস্থিত আইনজীবী ও সাংবাদিকদের সাথে কথা বলে ৩টা ৫০ মিনিটে এজলাসকক্ষ ত্যাগ করেন খালেদা জিয়া। বিকেল ৩টা ১৭ মিনিটে দ্বিতীয় দফায় শুনানি শুরু হলে আদালতের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।
তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, এ আদালতের প্রতি তাদের কোনো আস্থা নেই। তারা ন্যায়বিচার পাবেন না। সুতরাং তারা এ আদালতে কোনো মামলা করবেন না। বুধবার দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে প্রথম দফার শুনানিকালে খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে করা আবেদন খারিজের সাথে সাথেই আদালতে শুরু হয় হৈচৈ ও হট্টগোল। হট্টগোলের মুখে দ্রুত এজলাস ত্যাগ করেন বিচারক বাসুদেব রায়। এরপর দ্বিতীয় দফায় বিকেল ৩টা ১৭ মিনিটে আবারো এজলাসে আসন গ্রহণ করেন বিচারক বাসুদেব রায়। এর মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই আবারো হট্টগোল শুরু হয় আদালতে। ব্যাপক হট্টগোলের মুখে আবারো এজলাস ত্যাগ করেন বিচারক। অবশেষে বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে আদালতের পেশকার আরিফুর এসে আইনজীবীদের জানান, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। সাক্ষ্যের জন্য আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করা হয়েছে।
এর আগে বেলা ১২টায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার চার্জ শুনানির জন্য সময় বাড়ানোর আবেদন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আবেদন করেন অ্যাডভোকেট তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট গত বছর ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি। জমির মালিককে দেয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ খান। ২০১১ সালের ৮ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া হাইকোর্ট থেকে ৮ সপ্তাহের জামিন পান। ১৭ জানুয়ারি খালেদা জিয়া ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জামিননামা দাখিল করেন।
মামলায় অভিযুক্ত অন্য তিন আসামি হলেন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব (বর্তমানে বিআইডবিস্নউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক) জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান জামিনে আছেন। হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়। মামলার অন্য আসামিরা হলেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান। তারেক রহমান সরকারের নির্বাহী আদেশে দেশের বাইরে আছেন। মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল এবং ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ জামিনে আছেন।
ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক। মামলাটির তদন্ত করে দুদকের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানসহ অন্য ৪ জনকে অভিযুক্ত করে ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।