চাচা-ভাতিজা বিরোধ হবে কেন?

ভাতিজার ইটের আঘাতে চাচার নিহত হওয়ার ঘটনাটি নিছক পারিবারিক। শরিকানা জমি নিয়ে বিরোধের সূত্রপাত। তারই জের ধরে ঘটেছে খুনের ঘটনা। গত পরশু মঙ্গলবার দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ঘটনাটি গত সোমাবার সকালের। জমি বিক্রি করার টাকা ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিলো। এ নিয়েই পরিবারের মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে ভাতিজা ইট দিয়ে চাচার মাথায় আঘাত করে। চাচা সুলতান মোল্লা ঘটনাস্থলেই মারা যান।

ভাতিজার হাতে চাচা খুনের ঘটনা পারিবারিক হলেও সমস্যাটি যে আমাদের সামাজের সামাজিক সমস্যা তা নিশ্চয় নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। কারণ জমি বিক্রির সামান্য টাকা ভাগ-বণ্টন নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। যা কিছু সুন্দর তাই তো আমাদের গ্রহণ করা উচিত। ভালো-মন্দের বিচার ওই ব্যক্তিই করতে পারেন যার মধ্যে জ্ঞানের আলো রয়েছে। দিন যাচ্ছে, সমাজে সচেতনতার আলো সম্প্রসারিত হচ্ছে। জ্ঞানের আলো ছড়ানোর গতি যে আমাদের সমাজে খুবই ধীর তা বলাই বাহুল্য। তা না হলে চাচা-ভাতিজা বিরোধ হবে কেন? কেনো ভাতিজার হাতে চাচার প্রাণ হারাতে হবে।

উত্তেজনা মানুষকে অনেক সময় পশু বানিয়ে দেয়। সামান্য স্বার্থের জন্য কখনো কখনো কোনো কোনো ব্যক্তিকে হিংস্র করে তোলে। হিতাহিত জ্ঞান লোপ পায়। মূলত উত্তেজনার বশেই পারিবারিক খুনের ঘটনা ঘটে। উত্তেজনারোধে অবশ্যই ধৈর্যশীল হওয়া দরকার। চাচা একজন বয়স্ক ব্যক্তি, তিনি অবশ্যই ত্যাগের মহিমায় তার ভাতিজাকে মহৎ হওয়ার সুযোগ করে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। চাচা জমি বিক্রির সামান্য কিছু টাকার জন্য ভাতিজার সাথে বিরোধে জড়িয়ে উত্তেজনাকর কথা বলেন, তখনই ভাতিজা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ভাতিজাকেও বুঝতে হতো, চাচার মতামতের গুরুত্ব দেয়ার মানসিকতা গড়ে তোলার প্রয়োজন ছিলো। আর এ মতামতের মানসিকতা গড়ে তোলে সমাজ। এখন প্রশ্ন আমাদের সমাজ কি সেই সুযোগ সৃষ্টি করেছ?

তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে দলাদলি মারামারি পরিহারে আমাদের সকলকে আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন। সচেতনতা ব্যক্তিকে দায়িত্বশীল করে তোলে। ত্যাগের মধ্যে মহত্ম রয়েছে। আমরা সকলে একে অপরের জন্য সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে সমাজে বসবাস করলে সমাজ থেকে সব সমস্যা দূর হবে, তা নিয়ে সন্দেহ থাকার কথা নয়। একজন ছাড় দেবে অন্যজন পেয়ে বসবে তা হলে তো সমস্যার সমাধান হবে না, সকলেই একে অপরের প্রতি যত্নবান হওয়া দরকার। ঘরে-বাইরে সর্বস্তরে এ ধারা গড়ে তুলতে পারলে নিশ্চয় সমাজ আরো অনেক সুন্দর হবে। সেই সুন্দরের পথে হাঁটতে হবে আমাদের।