মেহেরপুরে ল্যান্ডফোনের চলছে দুর্দিন!

মহাসিন আলী: এক সময়ের টেলিযোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যম ল্যান্ডফোনের দূর্দিন চলছে মেহেরপুরে। ল্যান্ডফোনের মূল্যবান তার চুরি, গ্রাহকসেবার ঘাটতিসহ কোম্পানির দেয়া প্রতিশ্রুতি মতো সুযোগ-সুবিধা না পেয়ে মেহেরপুরের গ্রাহকরা তাদের ব্যবহৃত ল্যান্ডফোন কোম্পানির কাছে ফেরত দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে লাইন রেন্ট কিছুটা বাড়িয়ে কলরেট কমালেও তাতে তেমন কোনো সাড়া মিলছে না। বরং ফলটি দাঁড়িয়েছে উল্টো। বর্তমানে মেহেরপুরে ল্যান্ডফোনের ব্যবহার প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। যেগুলো চালু রয়েছে তার অধিকাংশ রয়েছে সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত অফিসগুলোতে।

বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)’র মেহেরপুর অফিসসূত্রে জানা গেছে, মেহেরপুর জেলার ৩টি উপজেলায় ল্যান্ডফোনের ধারণক্ষমতা মোট ৩ হাজার ৭৬০টি। জেলায় বর্তমানে চালু ল্যান্ডফোনের সংখ্যা মাত্র এক হাজার ২৯৮টি। যার মধ্যে মেহেরপুর জেলা সদরে ৯৩৮টি, গাংনী উপজেলায় ২৪০টি ও মুজিবনগর উপজেলায় মাত্র ১২০টি রয়েছে।

বিটিসিএল’র সংযোগ ফি শূন্যতে নামিয়ে আনার পাশাপাশি ল্যান্ডফোনকে কর্ডলেস হ্যান্ডসেটে রূপান্তর এবং এর মাধ্যমে ফ্রি ১২০টি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল দেখার সুযোগ থাকবে এমন প্রতিশ্রুতি দেয়ায় ২০০৯ সালে জুলাই মাসে গ্রহক সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং এ জেলায় নতুন-পুরাতনসহ মোট ২ হাজার ৪০০টি ল্যান্ডফোন চালু হয়। যার মধ্যে মেহেরপুর সদরে এক হাজার ৫৫০টি, গাংনী উপজেলায় ৭শ’ ও মুজিবনগর উপজেলায় একশ’ ৫০টি ছিলো। হিসাব মতে ওই সময় গ্রাহকের চাহিদায় ল্যান্ডফোন সংযোগ শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ বৃদ্ধি পায়।

জেলাশহরে নতুন সংযোগ ফিস ধার্য্য করা, বিটিসিএল তাদের প্রতিশ্রুতি মোতাবেক সুযোগ-সুবিধা না দেয়া, বিটিসিএল’র লাইন রেন্ট বৃদ্ধি করা, বিটিসিএল থেকে বিটিসিএল কলরেট কমিয়ে বিটিসিএল থেকে অন্যান্য অপারেটরে কলরেট বৃদ্ধি করা, যথাযথ গ্রাহক সেবা না পাওয়া, বারবার টেলিফোন সেট নষ্ট হয়ে যাওয়াসহ নানা বিড়ম্বনার শিকার হয়ে ল্যান্ডফোনের প্রতি বিতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছে মেহেরপুর জেলার গ্রাহকরা। এছাড়া নেশাখোরদের দ্বারা ঘনঘন মূল্যবান টেলিফোনের তার চুরি হওয়া। তার ওপর বিভিন্ন সেলুলার ফোন কোম্পানির হ্যান্ডসেট (মোবাইল)ফোন সার্বক্ষণিক নিজের সাথে রাখতে পারা ও কলরেট কমিয়ে দেয়ায় পাশাপাশি বিভিন্ন লোভনীয় অফার দেয়ায় মেহেরপুর জেলার সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ল্যান্ডফোন বন্ধ করে সেলুলার ফোন ব্যবহারে ঝুঁকে পড়েছেন। এসব কারণে ২০০৯ সালের জুলাই মাসের পর মেহেরপুরে ল্যান্ড ফোনের গ্রাহক সংখ্যা বাড়েনি বরং দিন দিন কমেছে। বর্তমানে এজেলায় ল্যান্ডফোন চালু আছে শতকরা ৫৪ দশমিক এক ভাগ মাত্র। আনুপাতিক হারে সবচেয়ে বেশি গ্রাহক কমেছে গাংনী উপজেলায়। এ উপজেলায় ৭শ’ সংযোগের মধ্যে ৪৬০টি কমেছে। মেহেরপুর সদর উপজেলায় এক হাজার ৫৫০টি সংযোগের মধ্যে কাটা পড়েছে ৬১২টি এবং মুজিবনগর উপজেলায় দেড়শ’টির মধ্যে ৩০টি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। বর্তমানে যেগুলো চালু রয়েছে তার অধিকাংশ রয়েছে সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্বশায়িত অফিসগুলোতে।

চ্যানেল আই’র মেহেরপুর প্রতিনিধি গোলাম মোস্তফা জানান, মেহেরপুরে টেলিফোনের গ্রাহকসেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে বিটিসিএল। বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি আরো বলেন, শহরে বিভিন্ন ক্যাবিনেট থেকে ডিপি পর্যন্ত আন্ডার গ্রাউন্ড হয়ে যাওয়া ক্যাবল বর্তমানে বিদ্যুতের খুঁটিতে খুঁটিতে ঝুলে ঝুলে চলছে। ডিপিগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ডিপি’র বাইরে বিভিন্ন পোল থেকে তার জুড়ে বাসাবাড়ি কিংবা অফিসে সংযোগ দেয়া হচ্ছে। সামান্য কারণে যখন তখন ওই স্থান থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। বর্ষায় পানিতে ক্যাবিনেট ও ডিপি সমস্যার জন্য ল্যান্ডফোনের সেটে ভালো সাউন্ড পাওয়া যায় না। এছাড়া মাসে একবার-দু বার লাইনে সমস্যা দেখা দিলেও যথাসময়ে গ্রাহকসেবা মেলে না। একদিন বা দু দিন পরে সংযোগ পাওয়া গেলেও খুশি করতে হয় লাইনম্যানদের। এসব ঘটনা বর্তমান সময়ে বিটিসিএল’র প্রতি মানুষের আস্থা কমিয়েছে। ওইসব কারণে তিনি নিজেই তার টেলিফোনটি কোম্পানির কাছে স্যারেন্ডার করেছেন।

মেহেরপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ আক্তারুজ্জামান বলেন, বর্তমান সময়ে যোগাযোগের ক্ষেত্রে মানুষ আর চার দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চান না। ফলে ল্যান্ডফোনের প্রতি তাদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। অধিকাংশ গ্রাহক তাদের যোগাযোগের মাধ্যমটি নিজের সাথে রাখতে পছন্দ করেন। ফলে ল্যান্ডফোনের কদর দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। আর এ জায়গা দখল করে নিচ্ছে মোবাইলফোন কোম্পানিগুলো।

বিটিসিএল মেহেরপুর বিটিসিএল’র টিটিসি রমজান আলী ও অপারেটর নাসিরউদ্দিন গ্রাহকদের অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, বিটিসিএল’র সংযোগ ফি শূন্যতে নামিয়ে আনার সাথে সাথে বাসা-বাড়িতে সংযোগ নিয়ে যেসব গ্রাহক মনে করেছিলেন ফোন বিল দিতে হবে না। হাজার হাজার টাকা বাকি বকেয়া মাথায় নিয়ে বিটিসিএল তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। তারা আরো বলেন, বিটিসিএল’র ইন্টারনেট সেবা গ্রাহকদের কাছে অনেকটায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তাই মাঝে মধ্যে দু-একটি করে নতুন সংযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মেহেরপুর বিটিসিএল’র সহকারী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, গ্রাহকসেবা বৃদ্ধির জন্য সম্প্রতি মেহেরপুর সদরের আমঝুপি ও গাংনীতে বেশ কিছু লাইনে কাজ করা হয়েছে। অর্থ সংস্থান হলে মেহেরপুরের বিভিন্ন স্থানে আরো কিছু কাজ করা হবে। তিনি আরো বলেন, গত ফেব্রুয়ারিতে মেহেরপুর বিটিসিএল থেকে ৫ লাখ ৭৯ হাজার ১০ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।