মির্জা ফখরুল-আব্বাস-সালাম জেলহাজতে

সারাদেশে বিএনপির বিক্ষোভ আজ

স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও ঢাকা মহানগরের সদস্য সচিব আবদুস সালামকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। পৃথক ৩ মামলায় জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে আদালত তাদের জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দেন।

গতকাল আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে মহানগর হাকিম শাহরিয়ার মাহমুদ আদনান উভয় পক্ষের শুনানি শেষে তা নাকচ করে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। এদিকে এ আদেশের পর বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেন। শাহবাগ ও পরীবাগে বাসে বোমা মেরে মানুষ হত্যার অভিযোগে গত নভেম্বর ও জানুয়ারিতে শাহবাগ ও রমনা থানায় দুটি মামলা হয় মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে। এ দু মামলায় গত ২০শে জানুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান তারা। একটি হত্যা মামলাসহ হরতাল-অবরোধে নাশকতার অভিযোগে তিনটি মামলায় মির্জা আব্বাস এবং একটি মামলায় আবদুস সালাম হাইকোর্ট থেকে ৮ সপ্তাহের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন জামিন লাভ করেন। গত ৯ই মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ এ তিনজনসহ পাঁচ বিএনপি নেতার জামিন বিষয়ে পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে জামিন বাতিল করে দেয়। আপিল বিভাগের আদেশের বিষয়টি অবগত করে রোববার বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করে আবারও জামিনের আবেদন করেন ফখরুল, আব্বাস ও সালাম। সকালে মির্জা আলমগীরসহ ৩ আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কি পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন তা আসামিরা অবগত নন। তাই পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে অবগত না হওয়া পর্যন্ত জামিনে রাখার জন্য আসামিরা প্রার্থনা করেন। তিন বিএনপি নেতার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী নিতাই রায় চৌধুরী, জয়নুল আবেদীন মো. মহসিন মিয়া, মো. ছানাউল্লাহ মিয়া ও মাসুদ আহমেদ তালুকদারসহ সিনিয়র আইনজীবীরা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি আবদুল্লাহ আবু। এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পল্টন থানার দুটি এবং কলাবাগান থানার একটি মামলায় হাজিরা দেন। এ তিনটি মামলায় আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা দেয়ার আবেদন করলে মহানগর হাকিম মারুফ হোসেন ও শাহরিয়ার মাহমুদ আদনান তা মঞ্জুর করেন।

সারাদেশে বিএনপির বিক্ষোভ আজ
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ চার নেতার গ্রেফতারের প্রতিবাদে সারাদেশে বিক্ষোভ ডেকেছে দলটি। আজ দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলায় ও ঢাকা মহানগরের থানা থানায় এ কর্মসূচি পালিত হবে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্মমহাসচিব রিজভী আহমেদ এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে নিম্ন আদালতে হাজির হলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ঢাকা মহানগরের সদস্যসচিব আবদুস সালামকে জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগেও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। এটা সরকারের চরম প্রতিহিংসা পরায়ণতা ও জুলুম নির্যাতনের বহিঃপ্রকাশ। তিনি বলেন, আজ কারও সত্য কথা বলার অধিকার নেই। সরকারপ্রধান যদি সোজাকে বাঁকা বলেন, আর বাঁকাকে সোজা বলেন তাহলে সবাইকে এক বাক্যে মানতে হবে। দেশবাসী ও গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলার জন্য বিএনপি নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রিজভী আহমেদ বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকার দেশকে এক অজানা অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। প্রতিদিনই বাছাই করে গুম, খুন, পুলিশি হেফাজতে অবর্ণনীয় নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার যেন এক ধরনের খেলায় পরিণত করেছে। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে পালাক্রমে গ্রেফতার করে নিজেদের অবৈধ মসনদ নিরাপদ করতে চাচ্ছেন তারা। রিজভী আহমেদ বলেন, জনরোষের আক্রমণ থেকে রেহাই পেতেই বিএনপি নেতাদের গ্রেফতার করে সরকার একটি ভ্রান্ত কৌশল নিয়েছে। তারা ভাবছে, বিএনপি নেতাদের গ্রেফতার করলেই আন্দোলন বিপথগামী হবে। কিন্তু অতীতে কোনো স্বৈরাচার সরকারই গ্রেফতার-নির্যাতন চালিয়ে আন্দোলন দমাতে পারেনি। বিএনপি নেতাদের গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে রিজভী আহমেদ বলেন, অবিলম্বে বিএনপির চার নেতার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। চার নেতার গ্রেফতারের প্রতিবাদে আগামীকাল সারাদেশে জেলায় জেলায় ও ঢাকা মহানগরের থানায় থানায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, সহদপ্তর বিষয়ক সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ তিন সিনিয়র নেতাকে কারাগারে পাঠানো ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মোশাররফকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে আগামীকাল সারাদেশে জেলায় জেলায় ও মহানগরে বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছে যুবদল।