নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় আহত ২৩
স্টাফ রিপোর্টার: তৃতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে বিজয়ী প্রার্থী ও পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও গুলির খবরও পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছে ২৩ জন। আমাদের প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর: নওগাঁ: উপজেলার ভাতকুণ্ডু শেখপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও তার মা সুফিয়া খাতুন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় প্রতিপক্ষ প্রার্থীর লোকজন শনিবার রাতে মা ও ছেলের ওপর নির্যাতন করেছে। উপজেলার ছিলিমপুর কেন্দ্রে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় বলরামপুর গ্রামের শঙ্কর হাসদা, ছিলিমপুর গ্রামের সামাউন ইসলাম, একই গ্রামের ময়েন উদ্দিন ও জাকারিয়া মানিককে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর লোকজন একই রাতে মারধর করে। ভাতকুণ্ডু শেখপাড়া গ্রামে গতকাল রোববার সকাল ৯টার দিকে বিএনপি সমর্থিত ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় প্রতিপক্ষ প্রার্থীর লোকজন আড়ানগর গ্রামের মো. মোশারফ হোসেনের স্ত্রী ফুলসিয়ারা বেগমকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এতে তার মাথা ফেটে যায়। আহতরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিত্সাধীন রয়েছেন। ধামইরহাট থানার অফিসার ইনচার্জ একরামুল হক নির্বাচনোত্তর সংঘর্ষে সাতজন আহত হওয়ার সত্যতা স্বীকার করেছেন।
হাজীগঞ্জ (চাঁদপুর), নির্বাচনের দিন বিকেলে ৮ নম্বর হাটিলা ইউনিয়নের বেলঘর বাজারে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করে বিএনপির কর্মীরা। এসময় বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুর করা হয়। রাতে আওয়ামী লীগ সমর্থিতদের প্রায় ৩০টি দোকান ভাঙচুর ও লুট হয়। একই সময়ে হাড়িয়াইন আড়ং বাজারে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীরের জুয়েলারি দোকান থেকে সাত ভরি স্বর্ণ, ১০ ভরি রুপা ও নগদ ৫০ হাজার টাকা লুট করা হয়। বেলঘর আড়ং বাজারে ওষুধ ব্যবসায়ী সগীর আহম্মেদ জানান, বিএনপি নেতা শিব্বির আহম্মেদের নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা হামলা ও লুটপাট করেছে। এতে তার ফার্মেসিসহ ২৫টি দোকানের প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়। গতকাল সকালে উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নের জনতা বাজারে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ব্যবসায়ীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এসময় যুবলীগ নেতা মানিকের বসতঘরেও ভাঙচুর চালানো হয়। এছাড়া এক নম্বর রাজারগাঁ ইউনিয়নের চেঙ্গাতলী এলাকায় দুটি হিন্দু বাড়িতে ভাঙচুর লুটপাট ও বাড়ির লোকদের পিটিয়ে আহত করে বিএনপির কর্মী সমর্থকরা। অবশ্য আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরাও বিভিন্ন এলাকায় হামলা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটায়। ছেঙ্গাতলী বাজারে কয়েকটি দোকান, রাজারগাঁও বাজারে বিএনপি সমর্থিত কয়েকজন ব্যবসায়ীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ও ৭ নম্বর পশ্চিম বড়কুল ইউনিয়নের রামচন্দুর বাজার সংলগ্ন গোবিন্দপুর এলাকায় বিএনপি সমর্থিত লোকজনের কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করা হয়।
গোদাগাড়ী (রাজশাহী), শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার গোগ্রাম হাটপাড়ায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মোহাম্মদ ইসহাক ও বিদ্রোহী প্রার্থী হযরত আলীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হয়েছে। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের মধ্যে দুইজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। একই রাতে উপজেলার ভানপুরে মোহাম্মদ ইসহাক ও একেএম আসাদুজ্জামানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এদিকে, গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার প্রেমতলী এলাকায় উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক নয়নের সাথে মাটিকাটা ইউনিয়ন পরিষদ ছাত্রলীগ নেতা বাবুর কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তা সংঘর্ষে রুপ নেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নয়নের বাবা আব্দুল খালেক অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সেনবাগ (নোয়াখালী)., শনিবার নির্বাচন চলাকালে উপজেলার নবীপুর ইউনিয়নের একটি ভোটকেন্দে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বাহারউদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়। এঘটনায় রাতে বিক্ষুব্ধ বিএনপির নেতা-কর্মীরা বড়চারিগাঁও গ্রামের আওয়ামী লীগের নবী ডাক্তার, ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি শাহজাহান সাজু ও কবিরাজ বাড়ির শাহ আলমের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করেছে। এতে কমপক্ষে ৮ জন গুরুতর আহত হয়েছে।
নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা):নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীর লোকজন পরাজিত প্রার্থীর নেতা-কর্মীদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করেছে। হামলার শিকার ব্যক্তিরা জানান, উপজেলার পেড়িয়া ইউনিয়নের স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার নেতৃত্বে তাদের বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়। এসময় তারা বাড়িতে ঢুকে ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর, নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়। তারা গোয়াল ঘর, রান্নাঘর, খড়ের গাদা ও মোটর সাইকেল অগ্নিসংযোগ করে। হামলায় শামিমা আক্তার, সুলতানা আক্তার ও রুখসানা আক্তার আহত হয়।
লোহাগড়া (নড়াইল), নির্বাচনের দিন কোটাকোল ইউনিয়ন পরিষদের মাইগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ নেতা খান জাহাঙ্গীর আলম ও শহিদুল মোল্লার লোকজন বিএনপির প্রার্থী জি এম নজরুল ইসলামের এজেন্টসহ লোকদের ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। এ ঘটনার জের ধরে ওইদিন রাত ১২টার দিকে কালিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান খান শামীমুর রহমান, কোটাকোল ইউপি চেয়ারম্যান খান জাহাঙ্গীর আলম এবং মেম্বর শহিদুলের নেতৃত্বে ২৫-৩০ জন অস্ত্র, রামদা, লাঠিসোঁটা, কুড়াল নিয়ে মাটিয়াডাঙ্গা গ্রামের ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি আজমল মুন্সি, ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জাফর মুন্সি, ইয়াজুল মুন্সি ও কালাম মুন্সির বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় বাড়ির পুরুষ লোকেরা প্রাণভয়ে পালিয়ে যায়। হামলাকারীরা তাদের না পেয়ে বাড়ির নারী ও শিশুদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বাড়িঘর ব্যাপক ভাংচুর করে। তারা যাওয়ার সময় সাতটি গরু লুট করে নিয়ে যায়। আতঙ্ক সৃষ্টি করতে শামীমুর রহমান ও জাহাঙ্গীর আলম ৮-১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে বলে আজমল মুন্সির স্ত্রী মেরিনা বেগম এবং ইয়াজুলের স্ত্রী নাসরিন বেগম অভিযোগ করেন। নড়াইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আনোয়ারুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।