নিম্নমানের মোবাইন ফোন সেটে মেহেরপুরের বাজার সয়লাব

 

১৫ মার্চ বিশ্ব ক্রেতা-ভোক্তা দিবস উপলক্ষে এবারের প্রতিপাদ্য ফোন অধিকার নিশ্চিত করুন

ক্রেতা-ভোক্তারা প্রতারিত

মাজেদুল হক মানিক: অপরিহার্য সাথী মোবাইলফোন ছাড়া এখন সবাই যেন অচল। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নকল এবং নিম্নমানের ফোন সেট বাজারে ছেড়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এতে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতা-ভোক্তারা।

দাম মাত্র দেড় থেকে দু হাজার টাকা। অথচ এতে থাকছে এফএম রেডিও, ক্যামেরা, অডিও-ভিডিও, ইন্টারনেট, ডাবল সিম কার্ড ও ব্লু-টুথসহ আরো অনেক সুবিধা। ছাত্র থেকে শুরু করে পেশাজীবি মানুষেরাও এ জাতীয় মোবাইলফোন ব্যবহারে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছেন। আকর্ষণীয় সুবিধায় আকৃষ্ট হয়ে হরমামেশাই ক্রেতারা কম দামের মোবাইলফোন ক্রয় করছেন। কিন্তু কষ্টার্জিত টাকায় কেনা ওই মোবাইলে ভোগান্তি আর প্রতারণার শিকার হচ্ছেন ক্রেতা-ভোক্তারা। তাদের অভিযোগ, নতুন মোবাইলফোন কেনার কয়েক দিনের মধ্যেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। নেটওয়ার্ক থাকে না, দুটি সিমে একসাথে কাজ না করা অথবা কিছু কিছু প্রোগাম বন্ধ হয়ে যায়। মেরামত করতে গিয়েও বিপাকে পড়তে হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নতুন মোবাইলফোন কিনতে হচ্ছে। আবার নামি-দামি কোম্পানির নাম ব্যবহার করেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে চায়নায় তৈরি নিম্নমানের মোবাইলসেট। এর হার্ডওয়্যার কিংবা সফটওয়্যারের কোনো সমস্যা হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মেরামতের কোনো উপায় থাকছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মেরামত করা সম্ভব হলেও তা বেশিদিন টেকসই হয় না। গাংনী মোবাইল হসপিটালের সত্ত্বাধিকার আব্দুস সালাম জানান, স্বল্প সময়ের ব্যবধানে মডেল পরিবর্তন হচ্ছে। এতো মডেল বের হয়েছে যে যন্ত্রাংশ মেলানো সম্ভব হচ্ছে না। বাজারে আজ যে মোবাইলটি পাওয়া যাচ্ছে কয়েকদিন পরেই সেটি আর মিলছে না। ফলে যন্ত্রাংশ কিংবা সফটওয়্যার খুঁজে পাওয়া যায় না। মেরামত করতে এসে মোবাইল ফেলে ফিরে যাচ্ছেন ব্যবহারকারীরা।

ভোক্তাদের চাহিদা মেটাতে শহর ও স্থানীয় বাজারের অলিগলিতেও মোবাইলফোনের দোকান দেখা যায়। চায়না থেকে বৈধ ও অবৈধ পথে আসা মোবাইলসেটে এখন বাজার দখল। জেলা প্রশাসন কিংবা পুলিশ প্রশাসনের কোনো নজরদারি কিংবা বাজার মনিটরিং নেই। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের প্রয়োগ না থাকায় সুফল ভোগ করছেন এক শ্রেণির অসাধু মোবাইলব্যবসায়ীরা। আর প্রতিনিয়নত প্রতারিত হচ্ছেন ভোক্তারা।

মেহেরপুর জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মাহমুদ হোসেন জানান, ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মোবাইলগুলো সঠিক পথে আমদানি হচ্ছে কি-না এবং এর গুণগত মান পর্যবেক্ষণে খুব শীঘ্রই মাঠে নামছে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন কমিটির পর্ববেক্ষণ দল।

এদিকে সস্তায় মোবাইল পাওয়ায় তা চলে যাচ্ছে টিনেজারদের হাতে। আমতৈল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, ছাত্রদের হাতে নানান সুবিধা সম্বলিত মোবাইলফোন। এতে উপকারের বদলে ক্ষতি বেশি হচ্ছে। উঠতি বয়সীদের নৈতিক শিক্ষার বিচ্যুতি ঘটছে। অডিও ভিডিও ডাউনলোড ব্যবসায়ীরাও হয়ে উঠেছেন বেপরোয়া। মোবাইলের নীল ছবির সূত্র ধরে অঘটনও ঘটছে।

নিম্নমানের মোবাইল সেট কিনে প্রতারণার ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন বিষয়ক সংগঠন কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) মেহেরপুর জেলা কমিটির সভাপতি রফিকুল আলম। তিনি জানান, এগুলো বন্ধ না হলে আন্দোলনে যাবে ক্যাব। জেলার নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত লোকজন জীবন-জীবিকার যোগাযোগ রক্ষার জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করছেন কম দামের মোবাইলফোন সেট। আর তারাই বেশি প্রতারিত হচ্ছেন। মোবাইলের সুফল পেতে গিয়েই ঘটছে বিপত্তি।

আজ ১৫ মার্চ বিশ্ব ক্রেতা-ভোক্তা অধিকার দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘ফোন অধিকার নিশ্চিত করুন’। তাই এ দিনটিকে সামনে রেখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ফোনের অপব্যবহার ও প্রতারণা বন্ধ হবে এমনটাই আশা করছেন ভুক্তভোগীরা।