নকল ক্যানসার হাসপাতাল : জনস্বাস্থ্য রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে হবে

 

 

দেশের বেশির ভাগ মানুষেরই উন্নত চিকিৎসার খরচ মেটানোর সামর্থ্য নেই। কেননা দারিদ্র্যসীমার মধ্যেই বাস করে এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। কিন্তু তার ওপর যদি এমন হয় যে নকল হাসপাতাল স্থাপন করে, প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মানুষের জীবন বাজি রেখে একশ্রেণির লোক নিজেদের স্বার্থ আদায়ে মরিয়া তা রোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য।

সম্প্রতি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে একটি ভুয়া হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন। ঢাকার মহাখালীতে গত বুধবার জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কাছেই একটি তথাকথিত ভুয়া ক্যানসার হাসপাতালের সন্ধান পেয়েছে ৱ্যাব! যেখানে সরকারি হাসপাতাল থেকে ক্যানসারের রোগী মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে এখানে ভর্তি করে চিকিৎসার নামে যাচ্ছেতাই করা হতো। বিস্ময়ের এখানেই শেষ নয়, সরকারি ক্যানসার হাসপাতালের এক ওয়ার্ডবয় আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মচারীর মালিকানায় ১৫ বছর ধরে সবার নাকের ডগায় চলে আসছিলো এ অপকর্ম! তারা তিনজন স্টাফ নিয়োগ করেছিলেন। তাদের একজন ম্যানেজার, একজন নার্স ও একজনের নিয়োগ বুয়া হিসেবে। এখানকার চিকিৎসক বলতে ছিলেন এ তিনজন। আনাড়ি হাতে তারা ক্যানসার আক্রান্তদের যাবতীয় চিকিৎসা দিতেন!
এ ক্ষেত্রে আমরা মনে করি কেন ১৫ বছর শনাক্ত করা হয়নি তা প্রশ্নের জন্ম দেয়। একই সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাই প্রকট হয়। একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রে যখন কেউ কোনো হাসপাতাল করবে তার রাষ্ট্রীয় অনুমোদন প্রয়োজন। কিন্তু সবকিছু উপেক্ষা করে এ ধরনের দুঃসাহস দেখাতে কীভাবে তারা উদ্যত হয়! তার উৎস কোথায়? কেন এভাবে একের পর এক সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে এ দেশে নির্দ্বিধায় অপকর্ম চলছে- এ বিষয়গুলো অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ডক্টরস চেম্বার নামের সেই কথিত হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেফতারও করেছে ৱ্যাব। পরে তাদের দু বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। আমরা মনে করি, এ ধরনের অভিযানের গুরুত্ব অপরিসীম। এ অভিযানগুলো নিয়মিত পরিচালনা করে সরকারের নজরদারি বাড়াতে হবে। একটি বিষয় মনে রাখা দরকার, মানুষের জীবন একবার গেলে তা ফিরে পাওয়ার নয়। তাই ক্যানসারের মতো ভয়াবহ বিষয় নিয়ে প্রতারকচক্রের মানুষের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার এসব নৃশংসতম কর্মকাণ্ড রোধ করতে প্রয়োজনে সরকারকে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিতে হবে। যে দেশে আইনের সুশাসন নিশ্চিত হয়, সে দেশে এ রকম কাণ্ড ঘটার কোনো কথা নয়। এসব দিক বিবেচনা করে প্রয়োজনে সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে।

সবার সামনে যখন দালালদের মাধ্যমে ক্যানসার রোগীদের সরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করা হয় তাও আবার দিনের পর পর দিন তখন তা যে অনিশ্চয়তার জন্ম দেয় তা দূর করতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখতে হবে রাষ্ট্রকেই। এর আগে আমরা পত্রপত্রিকার মাধ্যমে এমনও খবর জেনেছি যে কোনো ধরনের যোগ্যতা ছাড়াই বড় মাপের চিকিৎসক বনে গেছেন কেউ কেউ এবং মানুষের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে প্রচুর অর্থও হাতিয়ে নিয়েছেন। এ বিষয়গুলো সার্বিকভাবে দেশের জন্যই অশনিসঙ্কেত। আমরা সরকারকে বলতে চাই জনস্বাস্থ্যের দিকে নজর দিন। কে কোথায় কীভাবে মানুষকে এ রকম প্রতারণার মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিতে মরিয়া হয়ে উঠছে, তা চিহ্নিত করে প্রতিরোধ করুন। দেশের নাগরিকদের এসব প্রতারক চক্রের হাত থেকে নিরাপদ রাখা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব।