চেয়ারম্যান পদে ত্রিমুখি লড়াইয়ের সম্ভাবনা
দর্শনা অফিস/দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দশম জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচনের পরপরই দেশের সবকটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। ধারাবাহিকভাবে সম্পন্ন করা হচ্ছে বিভিন্ন উপজেলা নির্বাচন। দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল ১৫ মার্চ। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে শুরু থেকে বড় দুটি দলের একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও পরবর্তীতে প্রতিদ্বন্দ্বীর সংখ্যা হ্রাস পায়।
আ.লীগ ও জামায়াতে একাধিক প্রার্থী না থাকলেও বিএনপিতে রয়েছেন দুজন চেয়ারম্যান প্রার্থী। দুজনের মধ্যে লিয়াকত আলী শাহ ও ফজলুর রহমান। লিয়াকত আলী শাহ জেলা বিএনপি সমর্থিত এবং ফজলুর রহমান জেলা বিএনিপির একাংশ তথা অহিদুল ইসলাম পক্ষ সমর্থিত। অবশ্য গতকাল বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় যুগ্মমহাসচিব অ্যাড. রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত পত্রে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ফজলুর রহমানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে বলে তার পক্ষের লোকজন জোর প্রচারণায় নামলে নানামুখি প্রশ্ন ওঠে। লিয়াকত আলী শাহ অবশ্য বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ওপত্রের কোনো সত্যতা নেই। ফজলুর রহমানই বিএনপির একক প্রার্থী বলে জেলা বিএনপির একাংশ প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করে রিজভী আহম্মেদ স্বাক্ষরিত পত্র পত্রিকা অফিসে পেশ করা হয়েছে। অপরপক্ষ অবশ্য বলেছে, ও পত্রের স্বাক্ষর জাল। তাছাড়া কেন্দ্রীয় অফিস থেকে ফ্যাক্স করা হয়নি। ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মাঠে রয়েছেন। দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে এখন সর্বত্র যেন বইছে নির্বাচনের বাতাস। রাস্তার মোড়ে মোড়ে ও চায়ের দোকানগুলোতে নির্বাচনমুখি মানুষের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠছে। ভোর থেকে গভীররাত পর্যন্ত নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনী এলাকার গা-গ্রামে ছুটছেন প্রার্থীরা। করছেন কূশল বিনিময়, চাচ্ছেন দোয়া, সমর্থন ও ভোট। প্রায় প্রতিদিনই কোনো কোনো স্থানে প্রার্থীর উপস্থিতিতে কিংবা অনুপুস্থিতিতে দলের নেতাকর্মীরা পক্ষে করছেন নির্বাচনীসভা।
ভোটারদের দলে ভেড়াতে প্রার্থীদের মুখে ফুঁটেছে প্রতিশ্রুতির খই। যে যার মতো কৌশল অবলম্বন করছেন। চারদিকে প্রার্থীদের ছবি সংবলিব পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে। লাগাতার প্রচার মাইকিঙে অতিষ্ঠ ছিলো উপজেলাবাসী। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে নির্বাচন কমিশন থেকে সকল প্রচারণা বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তবে থেমে থাকবে না নীরব প্রচারণা। একটি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে গঠিত দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ। এ উপজেলায় মোট ভোটর সংখ্যা ১ লাখ ৯৫ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯৭ হাজার ৪৭৫ জন ও মহিলা ভোটারের সংখ্যা ৯৭ হাজার ৫২৫ জন। ৪র্থ দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করণের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। ৭৭টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪৭টি বুথে গোপন ব্যালোটের মাধ্যমে ভোটারা ভোটারাধিকার প্রয়োগ করবে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করা হবে। ৭৭টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৭০টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৩৭টি কেন্দ্র অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। তবে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট গ্রহণের ক্ষেত্রে চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত জেলা প্রসাশক (সার্বিক) রিটার্নিং অফিসার আনজুমান আরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচন চলাকালীন যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা কঠোরভাবে মোকাবেলা করা হবে। দোষীদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে আইনি কঠোর ব্যবস্থা। সে জন্যই ১০৪ সদস্য বিশিষ্ট সেনাবাহিনীর একাধিক দল মাঠে থাকবে। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১ হাজার ৭৩৯ জন সদস্য নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে রাখবে নির্বাচনী এলাকা। ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত ও মোবাইল টিম অভিযান অব্যাহত রাখবেন।
এ নির্বাচনে তিনটি পদে ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে মধ্যে রয়েছেন আ.লীগ সমর্থিত জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক বর্তমান চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদুল ইসলাম আজাদ (কাপপিরিচ), বিএনপি সমর্থিত দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী শাহ (ঘোড়া), বিএনপি নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান (দোয়াতকলম) বিএনপি নেতা এজাজুল হক (আনারস) প্রতীকে। তবে প্রতীক বরাদ্দের পর এজাজুল হক প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বলে তার পক্ষে ইতোমধ্যেই জানানো হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর সমর্থিত জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি হাউলী ইউপি চেয়ারম্যান মাও. আজিজুর রহমান (মোটরসাইকেল)। এছাড়া আ.লীগ ও বিএনপি সমর্থিত ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন ৬ জন প্রার্থী। এরা হলেন আ.লীগ সমর্থিত প্রার্থী শহিদুল ইসলাম (চশমা) মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান রওশন আকবর লাইলী (প্রজাপতি), জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত দর্শনা পৌর জামায়াতের আমির আব্দুল কাদের (টিউবওয়েল), বিএনপি সমর্থিত হাবিবুর রহমান বুলেট (টিয়াপাখি), মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ছালমা জাহান পারুল (হাঁস), বিএনপির একাংশ সমর্থিত আবুল হাসেম (তালা) প্রতীকে। নির্বাচনী এলাকা ঘুরে ভোটারদের মুখে প্রার্থীদের সম্পর্কে শোনা গেছে নানা কথা।
জানা গেছে, আ.লীগের একাধিক প্রার্থী না থাকায় আজাদুল ইসলাম আজাদ রয়েছেন মজবুত অবস্থানে। আজাদের নিষ্ঠা, কর্মদক্ষতা ও আন্তরিকতা ভোটারদের মনে দোলা দিয়েছে। সেইসাথে আজাদের পক্ষে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগরের প্রচারণা তার নির্বাচনী ভীত আরো শক্ত করেছে। এদিকে জামায়াতের কোনো দলীয় কোন্দল না থাকায় একক প্রার্থী হিসেবে মাও. আজিজুর রহমান অবস্থান অনেকটাই ভালো। তিনি লাগাতার প্রচারণায় ভোটারদের মন কেড়েছেন। সেই সাথে দলের নেতাকর্মীদের নিঃস্বার্থ প্রচারণা তাকে আরো একধাপ এগিয়ে দিয়েছে। লিয়াকত আলী শাহর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার কমতি নেই। এছাড়া তিনি বিএনপির মূলধারা সমর্থিত একক প্রার্থী হওয়ায় তার অবস্থান বেশ ভালো। নির্বাচনী প্রচারণায় তিনিও রয়েছেন এগিয়ে। ফজলুর রহমান বিএনপি একাংশের সমর্থন নিয়ে নিজের অবস্থান শক্ত করে তুলেছেন। তাকে নিয়েও ভাবনার কমতি নেই দলের নেতাকর্মীদের। ধারণা করা হচ্ছে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রার্থী থাকলে লড়াই হতে পারে ত্রিমুখি। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে কারো তুলনায় কেউ পিছিয়ে নেই। এখন শুধু দেখার পালা কে কে পড়বেন বিজয়ের মালা। হাসবেন প্রাণ খুলে বিজয়ের হাসি।