ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: কেন্দ্রদখল, ভোটকেন্দ্রে যেতে ভোটারদের বাধা, ব্যাপক জালভোট ও কারচুপির মধ্যদিয়ে গতকাল বুধবার ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাবদার হোসেন তালা প্রতীক নিয়ে ৫ হাজার ৯৩২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থিত পারুলা হোসেন আনারস প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৫ হাজার ৮৬৯ ভোট। বুধবার সন্ধ্যায় হরিণাকুণ্ডু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে ৯টি কেন্দ্রের ভোট গণনা শেষে বেসরকারিভাবে এ ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে একটানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। ৯টি কেন্দ্রে ইউনিয়নের ১৬ হাজার ৩২৮ জন ভোটারের মধ্যে ১২ হাজার ১৩৪ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য ভোটকেন্দ্রগুলোতে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, র্যাব, পুলিশ, আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। তবে ভোটকেন্দ্রগুলোতে পুরুষ ভোটারের উপস্থিতি ছিলো খুবই কম।
এদিকে নির্বাচনে রামচন্দ্রপুর, দখলপুর, গোবরাপাড়া, ফতেপুর ও রিশখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে থেকে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট বের করে দেয় আওয়ামী লীগ কর্মীরা। পরে প্রিসাইডিং অফিসারদের যোগসাজসে দিয়ে ব্যাপক ব্যাপক জালভোট দেয়ার অভিযোগ ওঠে। ভোটগ্রহণের শুরুতেই রিশখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে জালভোট দেয়ার সময় পুলিশ দুজনকে আটক করলেও কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার খাদেমুল ইসলাম তাদের ছেড়ে দেন। এরপর ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা দিয়ে শুরু হয় জালভোট দেয়ার প্রতিযোগিতা। এ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাবদার হোসেন এক হাজারের বেশি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যাওয়ার পথে করিম হোসেন নামে এক ভোটারকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর লোকজন। রামচন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের যেতে বাধা দেয়ার জন্য রাস্তায় ব্যারিকেড সৃষ্টি করে তারা। পরে র্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কেন্দ্র দখল করে জালভোট দেয় আওয়ামী লীগ কর্মীরা। দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বুড়ো মেম্বার ও তার লোকজন জালভোট দিয়ে কেন্দ্র দখল করে নেন। পথে পথে ভোটারদের হুমকি দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মশিউর রহমান জোয়ার্দ্দার। নির্বাচনে ব্যাপক হারে জালভোট দিয়ে বিএনপি প্রার্থীর বিজয়কে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জেলা বিএনপির সভাপতি মসিউর রহমান অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, প্রতিটি গ্রামে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা হুমকি দিয়ে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা প্রদান করে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৮ অক্টোবর সন্ত্রাসীদের বোমা হামলায় দিন-দুপুরে দৌলতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আবুল হোসেন নিহত হলে চেয়ারম্যানের পদটি শূন্য হয়।