নিরুত্তাপ সংসদ : কোরাম পূরণে হুইপদের গলদঘর্ম

স্টাফ রিপোর্টার: বহুল আলোচিত দশম জাতীয় সংসদের শুরুতেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন সরকার ও বিরোধীদলের সংসদ সদস্যরা। উত্তপ্ত আলোচনা, আক্রমণাত্মক বক্তব্যে বা দফায় দফায় ওয়াকআউট নেই। কার্যকর বিরোধীদলের ভূমিকায় এখনও অবতীর্ণ হতে পারেনি জাতীয় পার্টি। ফলে মাত্র ২০ কার্যদিবস না চলতেই শ্রী-হারিয়ে ফেলেছে সংসদ অধিবেশন। নিষ্প্রাণ-নিরুত্তাপ অধিবেশনে মন্ত্রী-এমপিদের গরহাজিরে প্রায় প্রতিদিনই দেখা দিচ্ছে কোরাম সঙ্কট। এমনকি প্রতিদিনই মাগরিবের নামাজের ২০ মিনিটের বিরতি দেয়া হলেও কোরাম পূর্ণ করে অধিবেশন শুরু করতে ৩০-৪০ মিনিট লেগে যাচ্ছে। প্রধান হুইপ থেকে শুরু করে পাঁচ হুইপ প্রচ- ছোটাছুটি করেও এবারই প্রথম নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের অধিবেশন কক্ষে ধরে রাখতে গলদঘর্ম হচ্ছেন।

গতকাল মঙ্গলবার সংসদের বৈঠকেও প্রতিদিনের এ দৃশ্যটি আরও প্রকট হয়ে দেখা দেয়। প্রশ্নকর্তা ও উত্তরদাতা মন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে সংসদে প্রক্সিদাতা বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদকে এ ব্যাপারে কঠোরভাবেই বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা যায়। সরকার ও বিরোধী দলের প্রায় তিন শ’র কাছাকাছি সংসদ সদস্য থাকলেও মাত্র ৬০ জনের উপস্থিতিতে কোরাম পূর্ণ হতে মঙ্গলবারও প্রায় ২৫ মিনিট বিলম্ব ঘটে। এর পর মাগরিবের নামাজের ২০ মিনিট বিরতি দেয়া হলেও কোরাম পূর্ণ হতে প্রায় ৪০ মিনিট ব্যয় হয়। দফায় দফায় সতর্ক ঘণ্টা বাজানো হলেও অধিবেশন কক্ষে প্রবেশের পরিবর্তে নানাস্থানে জমজমাট আড্ডা মারতেই ব্যস্ত দেখা যায় সংসদ সদস্যদের।

মন্ত্রী-এমপিদের গরহাজিরে অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে অনেকটাই হতাশা প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদ। নির্ধারিত মন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে স্পীকার প্রক্সি দেয়ার জন্য অনুরোধ জানালে তোফায়েল আহমেদ বলেন, প্রশ্নকর্তা চট্টগ্রাম-৪ আসনের সংসদ সদস্য দিদারুল আলম ও উত্তরদাতা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া উপস্থিত নেই। আবার মন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে যিনি উত্তর দিবেন বলে নির্ধারিত আছে সেই মন্ত্রী কামরুল ইসলামও সংসদে উপস্থিত নেই। তাই আমার সীমিত জ্ঞানে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রশ্নোত্তর কতটুকু উত্তর দিতে পারবো জানি না। এ সময় স্পীকার বলেন, ‘সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।’ এর পর ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত প্রশ্নের উত্তর দেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

দশম জাতীয় সংসদে শুধু ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগেরই সংসদ সদস্য সংখ্যা ২৩৪ জন। আর প্রধান বিরোধীদলের সদস্য সংখ্যা ৩৪ জন। অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ করে বিরোধীদল জাতীয় পার্টি প্রতিদিনই সংসদে যোগ দিলেও মাত্র ৬০ জনকে নিয়ে কোরাম পূর্ণ করতে প্রতিদিনই এমন বিলম্বের ঘটনা ঘটছে। আবার প্রতিদিন অধিবেশনের শেষ পর্যায়ে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনাকালে সংসদ সদস্যদের উপস্থিতি একেবারেই কমে যায়। আর অধিবেশনে যারা থাকেন, তারাও অধিবেশন কার্যক্রমের বাইরে নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন।
প্রতিদিনই সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ অধিবেশনে উপস্থিত থাকলেও জীবনে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া নেতাদের এমন গরহাজিরের ঘটনায় উর্ধতন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। আবার অনেক সংসদ সদস্য অধিবেশনে উপস্থিত থাকলেও সংসদের কার্যক্রম খেয়াল না করায় সম্পূরক প্রশ্ন করতে গিয়েও তালগোল পাকিয়ে ফেলেন। এক মন্ত্রীর বদলে অন্য মন্ত্রীকে প্রশ্ন করে ফেলেন। আবার প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ হলেও সম্পূরক প্রশ্নের সুযোগ চান কোনো কোনো সংসদ সদস্য। এনিয়ে প্রায়শই স্পীকারকে বিরক্তি প্রকাশ করতেও দেখা যায়।

সংসদ অধিবেশনের এ দুরাবস্থা নিয়ে সরকারি দলের নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। গত ৪ ও ৫ মার্চ অনুষ্ঠিত নতুন সংসদ সদস্যদের ওরিয়েন্টেশন কর্মসূচিতে বক্তৃতাকালে স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ও চিফ হুইপ সংসদ অধিবেশনে উপস্থিত থাকার ও সংসদীয় কার্যক্রম অংশগ্রহণের জন্য নতুন সংসদ সদস্যদের বার বার সতর্ক করে দিয়েছেন। এরপর মন্ত্রিসভার বৈঠকে সংসদে উপস্থিত থাকার জন্য মন্ত্রীদের বিশেষ নির্দেশ দেন সংসদ নেতা শেখ হাসিনাও। কিন্তু তারপরও অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি।