ঝিনাইদহ অফিস: বাম হাত ভেঙে দিয়েছে, ডান হাতে ধারালো অস্ত্রের আঘাত। ডান পায়েও কুপিয়ে আহত করা হয়েছে গোপাল চন্দ্রকে (৩৮)। গত এক সপ্তা এ অবস্থায় ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। গোপাল চন্দ্রের অপরাধ সরকার দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোট না করে একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী নায়েব আলী জোয়ার্দ্দারের পক্ষ অবলম্বন করেছিলেন।
গোপাল চন্দ্রের অভিযোগ সংসদ নির্বাচনের পর তার নেতা নায়েব আলী উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছিলেন। যদিও পরে তার মনোনয়ন বাতিল হয়। এ নির্বাচনেও তিনি ছিলেন নায়েব আলীর পক্ষে, পরে নেতার প্রার্থিতা বাতিল হলে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। আর এ সকল অপরাধে প্রতিপক্ষ মোশারফ হোসেনের সমর্থকরা তার ওপর হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করেছে। তার অভিযোগ, দুর্বৃত্তরা হাসপাতালে ও তার বাড়িতে গিয়ে মামলা না করার হুমকি দিয়েছে। যে কারণে তিনি মামলা করতেও সাহস পাচ্ছেন না। এছাড়া হামলাকারীরা সব সময় পুলিশের সাথে ঘুরে বেড়ায়।
গোপালচন্দ্র ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ত্রিপুরাকান্দি গ্রামের মৃত নিতাই পদ বিশ্বাসের ছেলে। গোপাল চন্দ্র জানান, তিনি শৈলকুপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নায়েব আলী জোয়ার্দ্দারের সমর্থক। আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় কর্মী। ২০০৯ সালের উপজেলা নির্বাচনে নায়েব আলী জোয়ার্দ্দারের পক্ষে নির্বাচন করেন। সেসময় তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ সালে সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়ে না পেয়ে নায়েব আলী জোয়ার্দ্দার স্বতন্ত্রপ্রার্থী হন। সেই নির্বাচনেও তিনি তার পক্ষে ভোট করেন। এরপর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি শৈলকুপা উপজেলা নির্বাচনে নায়েব আলী প্রার্থী হয়েছিলেন। সে সময় তিনি নায়েব আলীর পক্ষ অবলম্বন করেন। পরে নায়েব আলীর মনোনয়ন বাতিল হলে তিনি নির্বাচনে ভোট চাওয়া থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু এ সময় প্রতিপক্ষ শৈলকুপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেনের সমর্থকরা তাদের প্রার্থীর পক্ষে ভোট করতে চাপ সৃষ্টি করেন। গোপাল চন্দ্র জানান, তিনি তাদের কথা শোনেননি। যে কারণে প্রতিপক্ষরা তার ওপর ক্ষিপ্ত হন।
গোপাল চন্দ্র আরো জানান, গত ১ মার্চ বেলা ৩টার দিকে তিনি শৈলকুপা উপজেলা শহর থেকে পাট বিক্রি করে তিনি বাড়ি ফিরছিলেন। পথে লক্ষ্মীপুর গ্রামের তাজ উদ্দিনের বাড়ির সামনে পৌঁছুলে ৪/৫ জন দুর্বৃত্তরা তার ওপর হামলা চালায়। এ সময় তারা কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে ফেলে রেখে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে শৈলকুপা হাসপাতালে ও পরে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। গোপাল চন্দ্র জানান, তার বাম হাতটি ভেঙে দেয়া হয়েছে। ডান হাতও কুপিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করেছে। ডান পায়েও কুপিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তার গ্রামের মজিদুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, আকামত আলীসহ অন্যান্য সন্ত্রাসীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তিনি জানান। যারা সরকারি দলের ছত্রছায়ায় থাকে। গত উপজেলা নির্বাচনে মোশারফ হোসেনের পক্ষে ভোট করেছেন।
গোপাল চন্দ্র বলেন, ঘটনার পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও আছেন আতঙ্কে। সন্ত্রাসীরা হাসপাতালে এসেও কাউকে কিছু না বলার জন্য হুমকি দিয়ে গেছে। মামলা করতেও সাহস পাচ্ছেন না তিনি। তিনি দাবি করেন, তার পরিবারের অন্যরাও বর্তমানে নতুন করে হামলার আশঙ্কায় রয়েছেন।
এ ব্যাপারে নায়েব আলী জোয়ার্দ্দার জানান, গোপাল চন্দ্র আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী হওয়ার পরও শুধুমাত্র তার পক্ষে থাকায় মারপিট করা হয়েছে। এখন গোটা পরিবারকে উচ্ছেদ করার হুমকি দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, মোশারফ হোসেনের লোকজন এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা মামলা পর্যন্ত করতে দিচ্ছে না।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নব-নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ওরফে সোনা সিকদার জানান, এ জাতীয় কোনো ঘটনা তার জানা নেই। তিনি আরো বলেন, এলাকায় কোনো ঘটনা ঘটলেই রাজনৈতিকভাবে নেয়া হচ্ছে। চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে তার সমর্থকদের ওপর। এটা খুবই দুঃখজনক। তিনি বলেন, চেষ্টা করছেন সকল প্রকার গোলমাল নিরসন করে এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বাজিয়ে রাখার।
এ ব্যাপারে শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান মোল্লা জানান, এ ঘটনায় কেউ মামলা করতে আসেনি। তবে মামলা নিয়ে এলে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।