চুয়াডাঙ্গার তিন উপজেলায় ১৫ বছর ধরে সহকারী কমিশনার ভূমি কর্মকর্তার পদ শূন্য : দুর্ভোগে জনগণ

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার চার উপজেলার মধ্যে তিনটিতেই দীর্ঘদিন ধরে সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) কর্মকর্তার পদ শূন্য রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত এসি ল্যান্ডের দায়িত্বে থাকলেও বিভিন্ন কাজের চাপে তারা যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছেন না। এতে ভূমি সংক্রান্ত সেবা পেতে সাধারণ মানুষকে দিনের পর দিন সীমাহীন দুর্ভোগ পোয়াতে হচ্ছে।

জীবননগরে দীর্ঘ ১৫ বছর এবং সদরে আড়াই বছর ধরে এসিল্যান্ড পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া, গত বছরের ২৫ নভেম্বর থেকে দামুড়হুদার এসিল্যান্ড পদ শূন্য। এসব পদে কর্মকর্তা চেয়ে বারবার পত্র চালাচালি করেও কোনো লাভ  হয়নি। কতোদিনে শূন্যপদ পূরণ হবে সুনির্দিষ্টভাবে তা বলতে পারেননি কেউই।

জীবননগর এসিল্যান্ড কার্যালয়সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ এসিল্যান্ড জাহিদ হাসান ১৯৯৯ সালের ৩ জানুয়ারি বদলি হন। এরপর ওই পদে কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। সেই থেকে পর্যায়ক্রমে ১০ জন ইউএনও অতিরিক্ত হিসেবে এ দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ইউএনও সাজেদুর রহমান ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি জীবননগরে যোগদানের প্রথম থেকেই অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। সদরের এসিল্যান্ড টীটন খীসা ২০১১ সালের ১৫ জুলাই বদলির পর পদটি শূন্য হয়ে পড়ে। এরপর নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) তানবীর মোহাম্মদ আজিম এরপর অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। তানবীর মোহাম্মদ আজিম ২০১২ সালের ২ আগস্ট কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বদলি হওয়ার পর থেকে সদর ইউএনও আবুল আমিন বাড়তি দায়িত্ব নেন।

দামুড়হুদার এসিল্যান্ড ফরিদ হোসেন গত বছরের ২৫ নভেম্বর মেহেরপুরে বদলির পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদুর রহমানকে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এসিল্যান্ডগণ সরকারি, অর্পিত, পরিত্যক্ত ও খাসজমির পাশাপাশি সরকারি হাটবাজার, জলমহাল এবং ফলজবাগান ব্যবস্থাপনা করে থাকেন। ভূমি নিবন্ধন, নামপত্তন ও নামজারিসহ জমিজমা সংক্রান্ত কাজেও জমির মালিকরা এসিল্যান্ড অফিসে আসেন। ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো পত্রে বলা হয়েছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভূমি সংস্কার ও ভূমির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। ভূমি ও রাজস্ব প্রশাসনের বিষয়ে জনগণ এখন সরাসরি স্থানীয় অফিসে সরাসরি যোগাযোগ করে। এছাড়া সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ভূমি ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ভূমি সংক্রান্ত রেকর্ড কম্পিউটারাইজড করার স্বল্পমেয়াদী প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এসব কাজের সাথে এসিল্যান্ডরা সরাসরি যুক্ত।

উপজেলাগুলোতে এসিল্যান্ড পদ শূন্য থাকায় মাঠ পর্যায়ে রাজস্ব প্রশাসনিক কাজে গতিশীলতা আসছে না। একই কারণে সরকার ঘোষিত ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রম চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

অন্যদিকে ইউএনওগণ প্রশাসনিকসহ নানাকাজে ব্যস্ত থাকায় সপ্তায় একদিনের বেশি সময় দিতে পারেন না। জীবননগরের মুন্সী মাহবুবুর রহমান  জানান, এসিল্যান্ড না থাকায় বছরের পর বছর জমির মালিকরা দুর্ভোগ পোয়ালেও যেন দেখার কেউ নেই। এটাই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।

জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.সাজেদুর রহমান উল্লেখিত সমস্যার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সরকার এসিল্যান্ডের শূন্য পদে কর্মকর্তা নিয়োগ দিলে ইউএনওরা ভারমুক্ত হবেন। তাতে মাঠ প্রশাসনেও আরো গতিশীলতা আসবে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল আমিন বলেন, সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) কর্মকর্তা থাকলে খুবই সুবিধা। কারণ আগে ইউএনওদের যেকাজ ছিলো তার থেকে বর্তমানে ১০-১৫ গুণ কাজের পরিমাণ বেড়েছে। ইউএনওদের পাশাপাশি একজন সহকারী কমিশনার উপজেলায় নিয়োগ দেয়া হলে সবচেয়ে ভালো। এসিল্যান্ড শূন্য পদে লোক দ্রুত দেয়া উচিত। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত কাজ করতে গিয়ে সেবা পেতে বিলম্বিত হতে হয় জনসাধারকে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মল্লিক সাঈদ মাহবুব জানান, এসিল্যান্ড পদ শূন্য থাকার বিষয়টি জেলা প্রশাসক প্রতিমাসেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানিয়ে আসছেন। তবে, কতোদিনে কর্মকর্তার পদায়ন হবে তা  জানা যায়নি।