গাজীপুরে আ.লীগ সমর্থিত দু চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া গুলিবর্ষণ

 

স্টাফ রিপোর্টার: গাজীপুরের শ্রীপুরে আওয়ামী লীগের দু চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, অগ্নিসংযোগ ও প্রকাশ্যে গুলি বর্ষণের ঘটনায় পুলিশ সাংবাদিকসহ কমপক্ষে অর্ধশত আহত হয়েছে। এ সময় একটি মাইক্রোবাস, সাতটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও অর্ধশত মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। গতকাল শনিবার বেলা ১১টা থেকে তিনটা পর্যন্ত সংঘর্র্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। শ্রীপুর পৌর শহরের উজিলাবো গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে ও শ্রীপুর পৌর ছাত্রলীগের সদস্য আল আমীন (২১) মুমূর্ষু অবস্থায় উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।

আহত অন্যরা হলো- হায়দার আলী, অ্যাডভোকেট আবদুস ছালাম, আলাউদ্দিন টুটুল, ফরহাদ, নাজমুল ইসলাম, তানজিল, আনোয়ার হোসেন, কফিল উদ্দিন, আসাদ প্রধান, মিজানুর রহমান, ইফাজ উদ্দিন, আবুল কাশেম, জালাল উদ্দিন, মারুফ হোসেন, এসআই জিয়াউল ইসলাম, জাকিরুল ইসলাম জিকু, সুমন, আমিনুল ইসলাম, বাবুল হোসেন, রোমান, মাঈন উদ্দিন, কামরুল হাসান, সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা পৌনে ১১টায় গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ইকবাল হোসেন সবুজের সমর্থকরা পৌর শহরের প্রধান সড়কে মিছিল করে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে গিয়ে অবস্থান নেয়।

অপরদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে তৃণমূলের ভোটে নির্বাচিত এবং উপজেলা আওয়ামী লীগ সমর্থিথ চেয়ারম্যান প্রার্থী আলহাজ আবদুল জলিলের সমর্থকরা বেলা সোয়া ১১টায় মিছিল করে পৌর শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করে। তাদের মিছিল লক্ষ্য করে ইকবাল হোসেন সবুজের সমর্থকরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এ সময় উভয়পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে ইকবাল হোসেন সবুজের লোকজন পালিয়ে যায়। পরে দুপুর পৌনে ১২টায় উপজেলা আওয়ামী লীগ সমর্থিথ চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল জলিলের সমর্থকরা উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অবস্থান নেয়। দু পক্ষের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার সময় শ্রীপুর বাজারের সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ইকবাল হোসেন সবুজের কর্মী-সমর্থকরা প্রকাশ্যে গুলি বর্ষণ ও ককটেল ফাটিয়ে শহরে প্রবেশ করে। গুলি ও ককটেলের মুখে আবদুল জলিলের সমর্থকরা শ্রীপুর বাজার থেকে পালিয়ে যায়। এরপর ইকবাল হোসেন সবুজ তার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে পথসভা করে। পথসভা শেষে সবুজের লোকজন চলে যাওয়ার সময় আবদুল জলিলের কর্মী-সমর্থকরা তাদের পথরোধ করে মারধর, পাঁচটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ, অর্ধশত মোটরসাইকেল ও শ্রীপুর পৌরসভা কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে আসবাবপত্র ভাঙচুর করে।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমির হোসেন জানান, বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মোটরসাইকেলের (ইকবাল হোসেন সবুজ) কর্মী-সমর্থকরা মিছিল নিয়ে শ্রীপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে প্রকাশ্যে গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে শহরে প্রবেশ করে। এ সময় উভয়পক্ষের সংঘর্ষ এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা ৪১ রাউন্ড শটগানের ফাঁকা গুলি ও ১৭ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এতে শ্রীপুর থানার এসআই জিয়াউল ইসলাম (৩৮) ও এসআই জুবায়েদুল ইসলামসহ পুলিশের মোট পাঁচ সদস্য আহত হন। শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. সাহিদা আক্তার জানান, গুলিবিদ্ধ ৯ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর, দুজনকে ভর্তি ও ১২ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। শ্রীপুর পৌর ছাত্রলীগের সদস্য আল আমীনের (২১) মাথায় গুলির আঘাত পাওয়া গেছে।

শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বুলবুল জানান, শনিবার সকাল ১০টায় উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ব নির্ধারিত বর্ধিতসভা হওয়ার কথা ছিলো। সভায় জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও এর আগেই উভয় গ্রুপের নেতাকর্মী-সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
তিনি জানান, ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে উপজেলা আওয়ামী লীগ শ্রীপুর পৌর ভবন প্রাঙ্গণে তৃণমূলের ভোটে প্রার্থী নির্বাচনের আয়োজন করে। ওই নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য স্থানীয় এমপি আলহাজ অ্যাডভোকেট রহমত আলীর উপস্থিতিতে তৃণমূলের ২২৭ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১৯৯ জন কাউন্সিলর গোপন ব্যালটের মাধ্যমে তাদের স্বাধীন মতামত প্রকাশ করেন। এতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনটি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য তাদের প্রার্থী নির্বাচন করে।
প্রার্থীরা হলেন- চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আলহাজ আবদুল জলিল, ভাইস য়োরম্যান পদে শ্রীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মণ্ডল বুলবুল এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লুৎফুন্নাহার মেজবাহ।

এদিকে, গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজমত উল্লাহ খান জানান, কেন্দ্রের নির্দেশে গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগ ইকবাল হোসেন সবুজকে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করে।