স্টাফ রিপোর্টার: জেলা প্রশাসনকে সহায়তার জন্য পুলিশের বিশেষ ইউনিট গঠন করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের (ডিসি) তত্ত্বাবধানে এ ইউনিট পরিচালিত হবে। চোরাচালান প্রতিরোধ, উচ্ছেদ অভিযান, পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রেরণ এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় পুলিশকে নিরবচ্ছিন্নভাবে পাশে পাওয়ার জন্য এ ইউনিট গঠন করা হবে। বর্তমানে এসব কাজে সময়মতো পুলিশের সাড়া মেলে না। এ জন্য বিভিন্ন উচ্ছেদ অভিযান ও আদালতের কাজে বিঘ্ন ঘটছে।
প্রতিটি জেলায় পুলিশের বিশেষায়িত এ ইউনিটে ২০ জন জনবল প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতে থাকবেন একজন ইন্সপেক্টর, দুজন সাব-ইন্সপেক্টর, দুজন সহকারী সাব-ইন্সপেক্টর (এএসআই) ও ১৫ জন কনস্টেবল। সব মিলিয়ে সারাদেশের জন্য এক হাজার ৪০০-র কিছু বেশি জনবলের চাহিদা দেয়া হয়েছে।
ঢাকার জেলা প্রশাসক শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, ‘পুলিশের অভাবে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে পারি না। উচ্ছেদ অভিযানে বের হতে পারি না। এ-সংক্রান্ত ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই ঘটে। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য আমরা জেলা প্রশাসনের অধীনে পুলিশের একটি ইউনিট চেয়েছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হয়ে বিষয়টি বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিবেচনায় রয়েছে।’
২০১৩ সালের ডিসি সম্মেলনেও ডিসিরা তাদের অধীনে পুলিশের একটি ইউনিট চেয়েছেন। এ-সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম, যশোর ও শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক। তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত অধিবেশনে এ বিষয় তুলে ধরেন। বিষয়টি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী। ডিসি সম্মেলনের এ সিদ্ধান্তের পর সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতামত জানতে চায়।
সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, জেলা পর্যায়ে পুলিশকে নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। কখনো কখনো জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে দায়িত্ব পালনের জন্য জরুরি ভিত্তিতে পুলিশের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তখন রিকুইজিশন দিলে সব সময় পুলিশ পাওয়া যায় না। ফলে আদালতের নির্দেশে কোনো উচ্ছেদ অভিযান বা ভেজালবিরোধী অভিযান চালাতে গিয়ে বেকায়দায় পড়তে হয়। এ কারণেই জেলা প্রশাসকের অধীনে একটি পুলিশ ইউনিট থাকলে সেই ইউনিটের পুলিশের অন্য কোনো কাজ থাকবে না। ফলে সহজেই ভেজালবিরোধী অভিযান বা উচ্ছেদ অভিযানে যেতে কোনো ধরনের সমস্যা তৈরি হবে না জেলা প্রশাসকের দপ্তরের কর্মকর্তাদের।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে শিল্পাঞ্চল পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), স্পেশাল প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন (এসপিবিএন), নৌপুলিশ ও ট্যুরিস্ট পুলিশ নামের ইউনিট গঠন হয়েছে। নতুন এই ইউনিটের নাম কী হবে, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। এক কর্মকর্তা জানান, ইউনিট আলাদা হলেও যেদিন জেলা প্রশাসক দপ্তরের কোনো কাজ থাকবে না, সেদিন জেলা পুলিশের সাথে সমন্বয় করে ইউনিটের সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করতে পারেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ডিসি জানান, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয় থেকে চোরাচালান প্রতিরোধ টাস্কফোর্স, উচ্ছেদ অভিযান, পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও মোবাইলকোর্ট পরিচালনাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য জরুরি ভিত্তিতে অভিযান পরিচালিত হয়। এসব অভিযানে যথাসময়ে পুলিশ ফোর্স না পাওয়ায় এবং কখনো কখনো পুলিশের স্বল্পতার কারণে অভিযান সফল হয় না।
এদিকে নানা ধরনের প্রশাসনিক উদ্যোগ নেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত পুলিশের এ ধরনের কোনো ইউনিট গঠন হবে কি-না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে খোদ জনপ্রশাসনেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন উপসচিব বলেন, ‘ডিসিদের এ উদ্যোগে বাধা দেবেন এসপিরা। এসপিরা চান না তাদের কর্তৃত্ব সীমিত আকারে হলেও ডিসির কাছে যাক।’ তিনি আরো বলেন, ‘এটা ডিসি-এসপিদের কোনো বিষয় নয়, দেশের আমজনতার বিষয়।’
গত ২০ বছরের খাদ্য ভেজালের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার ৫৪ শতাংশ খাদ্যে ভেজাল মেশানো হয়। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট সম্প্রতি খাদ্য মন্ত্রণালয়কে এ তথ্য জানিয়ে জোরালো ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করতে বলেছে। এ অবস্থায়ও যদি পুলিশ প্রশাসন আর জনপ্রশাসন ঠেলাঠেলি করে, সেটা দুর্ভাগ্যজনক বলে এ উপসচিব মন্তব্য করেন।