মহাসিন আলী: পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জেনেও অগ্রিম সুবিধা গ্রহণসহ ভালো দাম পাওয়ার আশায় তামাকচাষে ঝুঁকে পড়েছেন মেহেরপুর জেলার বহু কৃষক। অনান্য চাষে লোকসান হলেও তামাকচাষে লাভ পেয়ে দিন দিন জেলায় এ চাষ বাড়ছে দাবি তামাক চাষিদের। তামাকের ক্ষতিকর দিকগুলো জেনেও আর্থিকভাবে লাভবান হতে এবং তামাক কোম্পানিগুলোর লোভনীয় প্রস্তাবে তামাকচাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন চাষিরা।
গত বছর মেহেরপুর জেলায় ৩ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে তামাকচাষ হয়েছিলো। অধিক মুনাফা পেয়ে ছিলেন চাষিরা। চলতি বছরও অধিক মুনাফার প্রত্যাশায় জেলায় ৩ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। এক বিঘা জমিতে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ করে ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকার তামাক বিক্রি করা যায়। প্রতি বিঘা জমিতে তামাকচাষ করে লাভ হয় ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা। প্রতি বছর ধানসহ অনান্য ফসল চাষে লোকসান গুণতে যেয়ে হতাশ মেহেরপুরের কৃষক। এক বিঘা জমিতে ২০ মণ থেকে ২২ মণ ধান উৎপাদন হয়। প্রতি মণ ধান ৫শ থেকে ৬শ টাকা দরে বিক্রি করে উৎপাদন খরচ ওঠে না চাষিদের। ফলে পরবর্তী চাষে পুঁজি হারিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন কৃষক। বিগত সময়ে অন্যান্য ফসল আবাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবং আর্থিকভাবে সাবলম্বী থাকার লক্ষ্যে চাষিরা তামাকচাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। তামাক কোম্পানিগুলোও সার, কীটনাশক ও চারার খরচ অগ্রিম প্রদান করেন। এছাড়া পরামর্শ দিয়ে তামাকচাষে উদ্বুদ্ধ করছেন কৃষকদের। এসব সুযোগ সুবিধা পেয়ে চাষিরা ঝুঁকে পড়ছে তামাক চাষে।
তামাকচাষ ক্ষতিকর জেনেও অধিক মুনাফার আশায় তামাকেরচাষ করেছেন চাষিরা। মেহেরপুর জেলার একাধিক তামাকচাষি জানান, তামাকের দাম কম বেশি হতে পারে। তারপরও তামাক চাষে লোকসান হয় না। তামাকচাষে নানারকম রোগ হয়। তবুও বেশি লাভ হয়। তাই আমরা এ কাজ করে থাকি।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের ডা. ওবাইদুল ইসলাম পলাশ সাংবাদিকদের জানান, তামাকচাষে ও তামাক জ্বালাতে যে গন্ধ বের হয় তা ধূমপান করার মতো। ওই গন্ধ স্বাস্থ্যসম্মত নয়। তামাকে থাকে নিকোটিন বিষ। ধূমপানে যেমন হৃদরোগ ও ফুঁসফুসের ক্যান্সার হয়; তেমনি তামাকচাষে ও তামাক জ্বালাতে একই ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে। এ সমস্ত কাজে তিনি শিশুদের দূরে রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এনএন হালিম জানান, তামাকচাষ পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। জেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তামাকচাষ করতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে কৃষকদের।