গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে পাঁচ থেকে আট শতাংশ

 

স্টাফ রিপোর্টার: খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে পাঁচ থেকে আট শতাংশ বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করতে চায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। কমিশনের স্টাফ ফাইন্ডিংস এ পরিমাণ দাম বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে। বিতরণ কোম্পানির পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ২৩ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। বিইআরসি বলছে, পয়লা মার্চ থেকে বিদ্যুতের বর্ধিত মূল্য কার্যকর হবে। আর দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়া হবে আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে।

দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া হিসেবে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি শুরু করতে যাচ্ছে কমিশন। কমিশন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে শুনানিতে বিতরণ কোম্পানিগুলো দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা তুলে ধরবে। একই সাথে ভোক্তারা দাম বৃদ্ধি পেলে তাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরবেন। মঙ্গলবার পিডিবি ও ওয়েস্টজোন, বুধবার ডিপিডিসি ও ডেসকো এবং বৃহস্পতিবার আরইবি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর শুনানি হবে।

বিইআরসি সূত্র জানায়, ২০১২ সালের পয়লা সেপ্টেম্বর বিদ্যুতের পাইকারি মূল্য বৃদ্ধি করা হয়। ওই বছর গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করতে চাইলেও তা আর করা হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে বিতরণ কোম্পানিকে ভর্তুকি দেয়ার কথা বলা হয়। যদিও শেষ পর্যন্ত কোন বিতরণ কোম্পানি ভর্তুকি পায়নি। বিইআরসি সূত্র জানায়, দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের মধ্যে ঢাকা পাউয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) সর্বোচ্চ সাড়ে ২৩ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করে। বিতরণ কোম্পানিটি তাদের কিছু উন্নয়ন প্রকল্প দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করায় এতো বেশি পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছিলো। কিন্তু দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করার কোনো বিধান নেই।

ডিপিডিসির প্রস্তাবে দেখা যায়, তারা দাম বৃদ্ধি না পেলে চলতি অর্থবছরে ৮০৪ কোটি টাকা লোকশান করবে। ডিপিডিসি প্রস্তাবে বলছে, প্রতি ইউনিট বিদ্যুত বিক্রিতে এক টাকা ২৭ পয়সা লোকসান করছে। ডিসিডিসির প্রাস্তভাবে সর্বোচ্চ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। যদিও এর আগে ২০১২ তে ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছিলো কোম্পানিটি। যেখানে বিইআরসি মূল্যায়ন করে তিন দশমিক ৬৫ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছিলো।

অন্যদিকে সর্বনিম্ন দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করে ওয়েস্টজোন পাউয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)। এমনকি কোম্পানিটি ২০১২ সালে চেয়েও একভাগ কম দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। ওজোপাডিকো তার প্রস্তাবে বলছে, গত অর্থবছরে লোকসান করেছে ১৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে ৯৫ কোটি টাকা প্রকৃত লোকসানের আশঙ্কা করা হচ্ছে। একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালন লোকসান ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা। আগের বছর পরিচালন লোকসান ছিলো ১৪৩ কোটি টাকা। লোকসান ঠেকাতে ৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে ওজোপাডিকো। যদিও এর আগে ৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছিলো প্রতিষ্ঠানটি। ওই সময় চার দশমিক ১৫ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে বিইআরসির স্টাফ কমিটি।

ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) ১৫ দশমিক ৯০ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করছে। ডেসকোকে বিতরণ কোম্পানিগুলোর মধ্যে সব থেকে সচ্ছল কোম্পানি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তারা বলছে, ২০১২ তে সবশেষ বাল্ক ট্যারিফ বৃদ্ধির পর গ্রাহক পর্যায়ে দাম বৃদ্ধি না করায় তারাও লোকসান করছে। কোম্পানিটি বাণ্যিজ্যিক গ্রাহকের ক্ষেত্রে বলছে, বাণিজ্যিক গ্রাহকরা যে পরিমাণ পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে তার তুলনায় বিদ্যুতের দাম অনেক কম বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বাণিজ্যিক গ্রাহকদের বিষয়টি বিবেচনা করার সুপারিশ করেছে তারা। বিগত ২০১২ তে ১১ দশমিক ৬৯ ভাগ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে তিন দশমিক ৩০ ভাগ বৃদ্ধির সুপারিশ করে বিইআরসির স্টাফ কমিটি।

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) তাদের প্রস্তাবে ১২ দশমিক ৫৮ শতাংশ দাম বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে। আরইবি বলছে, গত ১৩ বছরে ৭০টি পল্লী বিদ্যুত সমিতি দু হাজার ৩০৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা লোকসান করেছে। প্রস্তাবে বলা হয় সমিতিগুলোর, ৮৬ শতাংশ গ্রাহক আবাসিক। এসব গ্রাহকের মধ্যে ৬৭ ভাগ গ্রাহক লাইফ লাইন ট্যারিফ (০-৭৫) ইউনিটের মধ্যে বিদ্যুত ব্যবহার করে। যা আরইবির মোট গ্রাহকের ৫৮ ভাগ। এসব গ্রাহকের কাছে বিদ্যুত বিক্রি করে সমিতিগুলো আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে না।

অন্যদিকে সেচ গ্রাহকদের মূল্যহারও কম হওয়ায় সমিতিগুলো লোকসান করছে। ২০১২ সালের প্রস্তাবে আরইবি ৯ ভাগ দাম বৃদ্ধির আবেদন করে। এর প্রেক্ষিতে কমিশন স্টাফ ফাইন্ডিংসে দেখা যায়, পল্লী বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রয়োজন নেই। পরবর্তীতে আরইবি সম্পূরক হিসাব দিলে তিন থেকে সাড়ে তিন শতাংশ বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা যেতে পারে বলে বিবেচনা করে কমিশন।

পিডিবি বলছে, তাদের খুচরা বিদ্যুত বিক্রিতে গড়ে প্রতিইউনিটে ৭৬ পয়সা লোকসান হচ্ছে। পিডিবি ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। বিগত ২০১২-এর আবেদনে নয় ভাগ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে চার দশমিক ৮৪ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়।

গ্রাহক পর্যায়ে সর্বশেষ ২০১২ সালে বিদ্যুতের দাম ১১ দশমিক ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়। ওই সময় ইউনিটপ্রতি ৫ টাকা ২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে গড়ে ৫ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। এরপর একই বছরের ডিসেম্বরে ৯ থেকে ১২ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করে বিতরণ কোম্পানিগুলো। তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়ানোর উদ্যোগও নিয়েছিলো বিইআরসি। পরে সরকারের অনুরোধে বিইআরসি দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়া থেকে বিরত থাকে।