আইন প্রয়োগে গড়িমশিই ওদেরকে করেছে বেপরোয়া

শ্যালোইঞ্জিনচালিত নানা নামের অবৈধযান সড়ক থেকে উচ্ছেদে উচ্চাদালতের আদেশের পর তা বৈধতার দাবি তুলে চালক-মালিকেরা সভা সমাবেশ করছে। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন, আদালতের আদেশের পরও সড়ক থেকে তা কি উচ্ছেদ সম্ভব হয়েছে? যা অবৈধ তা দীর্ঘদিন ধরে কীভাবে প্রকাশ্যে চলছে, প্রকাশ্যেই অবৈধযান তৈরির অসংখ্য কারখানা গড়ে উঠেছে। প্রশাসন আইন প্রয়োগে অনমনীয় হলে নিশ্চয় অবৈধযানের সংখ্যা ভয়াবহ হতো না, সড়ক মৃত্যুপুরীতে রূপ নিতো না।

অবশ্যই অবৈধযান অসংখ্য পুরুষের কর্মসংস্থানের যোগান হয়েছে। বহু পরিবারে সচ্ছলতা ফিরিয়েছে। যতো পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে তার চেয়ে ঢের বেশি পুরুষকে ওই অবৈধযানে পঙ্গু করেছে। যতোটা পরিবারে সচ্ছলতা এসেছে তার চেয়ে অনেক বেশি পরিবারে চেপেছে পঙ্গুত্বের অভিশাপ। এরপরও অবৈধযানের বৈধতা দাবির অধিকার অস্বীকার করা যায় না। পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি আছে অনেক। যে শ্যালোইঞ্জিন কৃষি সেচের জন্য আমদানি করা সেই ইঞ্জিনের বহুবিধ ব্যবহার কৃষিপণ্য পরিবহনে যেমন সুবিধা এনেছে, তেমনই যাত্রীবহনে দুর্ঘটনাও বেড়েছে। অবৈধযান প্রধান প্রধান সড়ক থেকে উচ্ছেদের দাবি বাস-মালিক শ্রমিক সংগঠনগুলোর। মাঝে মাঝে পরিবহন আন্দোলনের ডাক দিলে প্রশাসনকে একটু নড়েচড়ে বসতে দেখা যায়। আন্দোলন ঝিমিয়ে গেলে আইন প্রয়োগেও নেমে আসে উদাসীনতা। অবশ্য টোকেন দিয়ে মাসোয়ারা নেয়ার কারণেই পুলিশের তরফে অবৈধযানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় না বলে অভিযোগ। যদিও এ অভিযোগ খণ্ডন করে পুলিশের তরফে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়। সর্বশেষ উচ্চাদালতের আদেশে অবৈধযান সড়কে চলাচল বন্ধে প্রশাসনকে যতোটা তৎপর হতে দেখা গেছে, তার চেয়ে বেশি তৎপর অবৈধযানের চালক-মালিকেরা। তারা বৈধতা চান।

জনসংখ্যা বিস্ফোরণের দেশে জনগণকে এখনও পূর্ণাঙ্গ শক্তিতে রূপান্তর করা সম্ভব হয়নি। পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান যেমন নেই, তেমনই উদ্যোক্তাদের নিরাপত্তারও যথেষ্ট অভাব। বেকারত্ব ঘোচাতে অবৈধযানকে বৈধভাবেই গ্রহণ করে অসংখ্য পুরুষ রাস্তায় নেমেছেন। কিছু এনজিও আছে অবৈধযান কেনার জন্য ঋণও দেয়। ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে শ্যালোইঞ্জিনচালিত যান নিয়ে যারা সড়কে নামেন তারা ঝুঁকি নিয়েই নামেন। অন্যের জীবনও কাড়েন। আইন প্রয়োগে গড়িমশিই মূলত ওদেরকে বেপরোয়া করে তুলেছে।