জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক প্রাইভেট ক্লিনিকে নিজ ব্যবসায় ব্যস্ত

জীবননগর ব্যুরো: অফিস টাইমে আবাসিকে প্রাইভেট চিকিৎসা প্রদান ও রোগীদের সাথে অসাদাচারণের কারণে জীবননগর উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির চিকিৎসা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। চিকিৎসকরা তাদের খেয়াল খুশিমতো হাসপাতালের ডিউটি বাদ দিয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে বাণিজ্য করছেন অনবরত। এমনই অভিযোগ উঠেছে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আরএমও আবু হেনা শুভর বিরুদ্ধে। গত শুক্রবার সন্ধ্যারাতে আরএমও আবু হেনা শুভর ডিউটি থাকা অবস্থায় তিনি প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা প্রদান করায় রোগী সাধারণ ও এলাকাবাসীর মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করে।

অভিযোগে জানা যায়, হাসপাতালে ডিউটি চলাকালীন আরএমও ডা. আবু হেনা শুভ প্রাইভেট ক্লিনিকে নিজের বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত  থাকেন। শুক্রবার বেলা ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ড. শুভর ডিউটি থাকা সত্বেও তিনি অফিস টাইমের মাঝে প্রাইভেট ক্লিনিকে বিভিন্ন রোগীর ওটি নিয়ে ব্যস্ত থেকে নিজের বাণিজ্য চালাচ্ছেন। যে কারণে এখানে আসা রোগীরা চিকিৎসক না পেয়ে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এনিয়ে প্রায়ই ডাক্তার ও কর্মচারীদের সাথে রোগীদের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। ২৪ ঘণ্টা জরুরি বিভাগে ১ জন ডাক্তার সার্বক্ষণিক কাগজে-কলমে কর্মরত দেখালেও তারা অনেক সময় জরুরি বিভাগে বসেন না। এ সমস্ত অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে আরএমও আবু হেনা শুভর ওপর। তিনি তার অফিস টাইমের মাঝে হাসপাতালে না থেকে প্রাইভেট ক্লিনিকে গিয়ে রোগীর চিকিৎসা করছেন। রোগী সাধারণ ও এলাকাবাসী আরএমও ডা. আবু হেনা শুভর এহেন কর্মকাণ্ডে ও চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হওয়ায় হাসপাতাল ঘেরাও করে। এ সময় পরবর্তী কর্তব্যরত চিকিৎসক মেডিকেল অফিসার ডা. রফিকুল ইসলাম ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীকে শান্ত করার চেষ্টা করেন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু হাসানুজ্জামান নূপুরকে বিষয়টি অবগত করেন। উপস্থিত রোগীসাধারণ ও এলাকাবাসী প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠলে উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু হাসানুজ্জামান নূপুর এমন কর্মকাণ্ড ও অনিয়ম দেখে আরএমও আবু হেনা শুভকে সতর্ক করে দেন। এর সুব্যবস্থা নেবেন বলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রফিকুল ইসলাম জানান।

নাম না বলার শর্তে একজন অভিযোগ করে বলেন, ১০ মিনিটের কথা বলে তিনি বাইরে গেছেন। দু ঘণ্টা পর আরএমও ডা. আবু হেনা শুভ জরুরি বিভাগে আসেন। তখন উপস্থিত লোকজন বাইরে থাকার বিষয় নিয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পরবর্তীতে ওই ডাক্তার তার নিজের অপরাধকে আড়াল করতে বিভিন্ন মহলে ধরনা দিচ্ছেন। প্রভাবশালীদের কারণে এখানে আসার পর থেকেই তিনি কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না মেনেই প্রাইভেট ক্লিনিকে বাণিজ্য করে চলেছেন।

এনিয়ে অনেকবার জাতীয়, স্থানীয় ও আঞ্চলিক দৈনিক এবং টেলিভিশন চ্যানেলে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পরেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো টনক নড়েনি। এছাড়াও হাসপাতালে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি ও বহিরাগত দালালচক্রের কার্যকলাপে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। তারা অসাধু ডাক্তার আর দালালচক্রের খপ্পরে পড়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। দালালচক্রকে প্রায়ই  রোগীদের হাত থেকে প্রেসক্রিপশন নিয়ে টানাটানি করতে দেখা যায়। হাসপাতালে ডিউটি থাকা সত্বেও বহিরাগত ডিউটির ওপরই তাদের যতো আগ্রহ। এমন যদি হয় সরকারি হাসপাতালের হালচাল তাহলে নিরীহ রোগীরা সঠিক পরিপূর্ণ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হবে বলে জানান হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা।